আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান

আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান।[1][2] এই উপজেলায় আলতাদিঘী নামের একটি দিঘীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল বনভূমি। শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪.১২ হেক্টর জমির এই বনভূমির ঠিক মাঝখানেই রয়েছে প্রায় ৪৩ একর আয়তনের সেই বিশাল দিঘী। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে এটিকে 'আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান' হিসাবে ঘোষণা করেছে।[3] ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।[4] এছাড়াও জাতীয় উদ্যানের পশের ১৭.৩৪ হেক্টর বনভুমিকে ৯ জুন ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশের বন অধিদপ্তর বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করে।[5]

আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান
উদ্যানের ঘন জঙ্গল
বাংলাদেশে অবস্থান
অবস্থাননওগাঁ, রাজশাহী বিভাগ, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৫.১৮৬৪৬১° উত্তর ৮৮.৮৬৬১৪৪° পূর্ব / 25.186461; 88.866144
আয়তন২৬৪ হেক্টর
স্থাপিত২০১১

দিঘীর আকার

আলতাদিঘীটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী অংশে অবস্থিত একটি প্রাচীন জলাশয়। দিঘীটির আয়তন ৪৩ একর। এই জলাশয় দৈর্ঘ্যে ১১০০ মিটার এবং প্রস্থে ৫০০ মিটার। পাহাড়ের মতো পাড়গুলি উঁচু এবং দক্ষিণ পাড় শালবনে ঢাকা। প্রাচীন দিঘীগুলির মধ্যে এটিই বোধ হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সচল দিঘী। উল্লেখ্য বিশাল দিঘী রামসাগরের দৈর্ঘ্য এটির চেয়ে ১৫০ মিটার বেশি হলেও চওড়ায় ১৫০ মিটার কম। আর রামসাগর ১৭৫০ সালের দিকে খনন করা হয়। কিন্তু আলতাদিঘী হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের দিঘী।[6]

ইতিহাস

স্থানীয় মানুষের মুখে একটা লোককাহিনী প্রচলিত আছে যে, প্রজা সাধারণের পানিয়জলের সংকট নিরসনকল্পে , রাজা বিশ্বনাথ রাজমাতার সন্তুষ্টিকল্পে দীঘিটি খনন করেন। রাজমাতার শর্ত ছিল যে, তিনি পায়ে হেঁটে যতদূর অবধি যেতে পারবেন সেই পর্যন্ত দীঘিটি খনন করতে হবে। রাজমাতার শর্ত পূরণের বিষয়ে মন্ত্রীবরের সঙ্গে রাজা পরামর্শ করে আলতা নিয়ে আসেন। অতঃপর, একদিন ঘটা করে মন্ত্রীবরের সবাই রাজমাতা কে অনুসরণ করেন এবং রাজমাতা হাঁটতে শুরু করেন। কিন্তু রাজমাতার হাটা আর শেষ হয়না, তিনি হাঁটতেই থাকেন । তারপর, পরিস্থিতি প্রতিকুল দেখে মন্ত্রীবর দীঘির শেষ প্রান্তে রাজমাতার পায়ে আলতা ছিটিয়ে দিয়ে তাকে থামিয়ে দেন এই বলে যে, মা তোমার পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। তুমি আর হাঁটতে পারবে না। যেই স্থানে গিয়ে রাজমাতা হাটা বন্ধ করেছিলেন , শুরুর স্থান থেকে সেই অবধি পর্যন্ত রাজা বিশ্বনাথ দীঘি খনন করেছিলেন। সেই থেকেই এই দীঘিটি আলতা দীঘি নামে হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

ইতিহাস সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। তবে এই জলাশয় টি জগদ্দল মহাবিহারের সমসাময়িক অথবা পাল যুগ পূর্ববর্তী সময়ের বলে ধারণা করা যায়।[6]

জীববৈচিত্র্য

আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, শিয়াল, অজগরবানর পাওয়া যায়।[7] এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পোকামাকড়সহ নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। বিশেষত শালগাছকে আলিঙ্গণ করে গড়ে ওঠা উঁই পোকার ঢিবিগুলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়।

ইজারা প্রথা

বর্তমানে আলতাদিঘীটি ইজাদারদের নিকট ইজারা দেওয়া হয়েছে যা এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলে বিশেষজ্ঞগণ বিবেচনা করেন।

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

  1. "বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-১৯" (পিডিএফ)বন অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  2. "বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-১৮" (পিডিএফ)বন অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  3. "আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান, পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা"http://archive.ittefaq.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  4. "Protected Areas of Bangladesh"। বাংলাদেশ বন বিভাগ। ১৭ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৬, ২০১৩
  5. "বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা"রক্ষিত এলাকা। ২০১৭-০৯-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৮
  6. আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, প্রশ্নোত্তরে বাংলাদেশের প্রত্নকীর্তি, প্রথম খণ্ড, ঝিনুক প্রকাশনী, ঢাকা, তৃতীয় মুদ্রণ মার্চ ২০১৩, পৃষ্ঠা-২২২, ISBN 984-70112-0112-0.
  7. "আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানে পাঁচ শাবক জন্ম দিল মেছোবাঘ"http://www.kalerkantho.com। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৫ |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.