আরিচা ঘাট

আরিচা ঘাট বাংলাদেশের একটি নৌবন্দর। এটি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত। নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এই আরিচা ঘাট।

ইতিহাস

ভারত-পাকিস্তান বিভাগের আগেই যমুনা নদীর পাড়ে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এই আরিচা ঘাট দেশের অন্যতম বড় নৌ-বন্দর। কলকাতা-আসাম রুটের জাহাজ-স্টিমার এই ঘাটে ভিড়তো, এখানে ছিল বড় বড় পাটের গুদাম এবং আরিচায় গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র। ১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর আরিচা থেকে যমুনা পাড় হয়ে নগরবাড়ী এবং আরিচা থেকে যমুনা-পদ্মা পাড় হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের সঙ্গে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। সেই সঙ্গে আরিচা-নগরবাড়ী হয়ে উঠে উত্তরবঙ্গ এবং আরিচা-দৌলতদিয়া হয়ে উঠে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান প্রবেশ পথ। জানা যায়, ১৯৬৩ সালে ৩১ মার্চ কর্নফুলি নামে একটি ফেরী সার্ভিস দিয়ে আরিচা-দৌলতদিয়া নৌঘাটের যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর আরিচা ঘাট দেশের অন্যতম গুরত্বপুর্ন নৌযোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠে এবং নৌবন্দরের স্বীকৃতি পায়। গড়ে তিন হাজার যানবাহন এবং পঞ্চাশ হাজার মানুষ পারাপার হোত এই ঘাট দিয়ে।[1]

অবকাঠামো ও ধারনক্ষমতা

১৯৬৩ সালের ৩১ মার্চ, একটি মাত্র গাড়ি আরিচা ঘাট থেকে নগরবাড়ি পৌঁছে দেবার মাধ্যমে যাত্রা শুরু এবং ভাড়া ছিল ৭৫ পয়সা।[2] চালু অবস্থায় এখানে দুইটি ট্রাক টার্মিনাল ছিল, যার ধারনক্ষমতা ছিল এক হাজার ট্রাক।৪৫-৫০ হাজার মানুষের পারাপারের মাধ্যম ছিল এই আরিচা ঘাট, হকার এবং কুলির সংখ্যা ছিল আড়াই হাজারের উপরে। জমজমাট হোটেল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল ৩শয়েরও বেশি। আবাসিক বোর্ডিং ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টির মত। আরিচা ঘাটকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছিল ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের।

আরিচা ঘাটের বিলুপ্তি

১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধনের এবং একি সাথে যমুনা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার মাধ্যমে আরিচা ঘাটের ব্যস্ততা অনেকখানি কমে যায়। সর্বশেষ ২০০২ এর ১৫ নভেম্বর শেষ দুইটা প্লাটুন টাগবোটের মাধ্যমে টেনে ৯ কিলোমিটার ভাটিতে পাটুরিয়া নৌঘাটে নিয়ে যাবার সাথে সাথে আরিচা নৌ ঘাট এর বাণিজ্যিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। (তৎকালীন যমুনা বহুমুখি সেতু) চালু হলে আরিচা ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমতে থাকে। এর মাঝেই প্রকট হয় নাব্য সংকটও। ফলে ২০০১ সালে ফেরি ঘাটটি পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। এরপরই প্রাণহীন হয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাট।বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নৌ-রুটের সচল করার জন্য কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ড্রেজিং করে নাব্য সংকট দূর করে রুট সচল করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ফেরি ওঠার অ্যাপ্রোচ রোড। উভয়ঘাটে ফেরি ভেড়ানোর জন্য পন্টুন স্থাপনসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি মাসের যে কোনও সময় আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল উদ্বোধন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নৌরুটটি চালু হলে অল্প সময়ে দেশের পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের মানুষ ও পণ্যবাহী যানবাহন খুব সহজে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতে পারবে।

মুক্তিযুদ্ধে আরিচা ঘাট

মুক্তিবাহিনী যুদ্ধের সময় একটি লঞ্চ, ফেরী, টার্মিনাল প্লাটুনসহ একটি লঞ্চ এবং উপকূল ঘাঁটি ডুবিয়ে দেবার ইতিহাস জানা যায়।[3]

মাছধরা

ইলিশ এর জন্যে প্রসিদ্ধ আরিচা ঘাট। জাতীয় জেলেদের সমবায়ের সাবেক সহ সভাপতি সুদিপ্ত দাস জানান, এটা ইলিশ মাছ শিকারের জন্যে "প্রাইম স্পট"[4]

ছবিঘর

তথ্যসূত্র

  1. "মরে গেছে আরিচা প্রাণ পেয়েছে পাটুরিয়া"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-১১
  2. "আলোচিত আরিচা ঘাটে দীর্ঘশ্বাসের বসতি | গণবার্তা :: লেখক পাঠকের মেলবন্ধন"। ২০১৯-০১-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-১১
  3. Roy, Mihir K. (১৯৯৫)। War in the Indian Ocean (ইংরেজি ভাষায়)। New Delhi: Lancer Publishers। পৃষ্ঠা 162। আইএসবিএন 9781897829110।
  4. "Hilsa hopes sail on Bangla bonhomie - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-১১


This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.