আয়নিক যৌগ
আয়নিক যৌগ হচ্ছে একটি রাসায়নিক যৌগ যা আয়নগুলোর মধ্যে তড়িৎবলের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। যৌগটি অবশ্য নিরপেক্ষ কিন্তু যা গঠিত হয় ধনাত্মক চার্জ যাকে বলা হয় ক্যাটায়ন এবং ঋণাত্মক চার্জ যাকে বলা হয় অ্যানায়ন। এগুলো সাধারণ আয়ন হতে পারে যেমন সোডিয়াম ক্লোরাইড এ থাকে সোডিয়াম আয়ন (Na+) এবং ক্লোরিন আয়ন (Cl–) অথবা বহু আণবিক প্রজাতি যেমন অ্যামোনিয়াম কার্বনেট এ অ্যামোনিয়াম (NH4+) এবং থাকে কার্বনেট আয়ন (CO32-)। আয়নিক যৌগের আলাদা আলাদা আয়ন থাকতে পারে যাদের একাধিক নিকটাত্মীয় প্রতেবেশি থাকতে পারে যারা পরমাণুর অংশ না হয়ে বরং ত্রিমাত্রিক কেলাসে ধারাবাহিক ভাবে তিনমাত্রিক গঠনের জাল হিসেবে থাকে। যেসব আয়নিক যৌগে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) থাকে তাদের এসিড হিসেবে এবং যারা হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH–) বা অক্সাইড (O2) হিসেবে থাকে তাদের ক্ষার হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। যেসব আয়নিক যৌগে এসব থাকে না তাদের লবণ বলা হয় যা এসিড ক্ষার বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হতে পারে। এগুলো অবশ্য উক্ত আয়নগুলোর দ্রবণের বাষ্পীভবন, অধঃক্ষেপণ শীতলীকরণ, কঠিন অবস্থার বিক্রিয়া, অথবা সক্রিয় ধাতু এবং হ্যালোজেন এর মতো সক্রিয় অধাতুর বিক্রিয়ায় গঠিত হতে পারে।
আয়নিক যৌগ গুলো মূলত উচ্চ গলনাংক এবং উচ্চ স্ফুটনাংক বিশিষ্ট হয় এবং এগুলো কঠিন হয়।কঠিন অবস্থায় এগুলো তড়িৎ পরিবাহী হয় কিন্তু যখন গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় বেশি তড়িৎ পরিবাহী হয় কেননা আয়ন গুলো তখন বিশ্লিষ্ট হয়।
আবিষ্কারের ইতিহাস
গ্রিক ভাষায় ion শব্দটির প্রেজেন্ট পার্টিসিপল হলো ienai। এই জিনিশটি ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানবিদ এবং রসায়নবিদ মাইকেল ফ্যারাডে পরিচয় করিয়ে দেন যে অজানা প্রজাতি জলীয় মাধ্যমে এক তড়িৎদ্বার থেকে অপর তড়িৎদ্বারে যায়। ১৯১৩ সালে সোডিয়াম ক্লোরাইড এর কেলাস শনাক্ত করেন উইলিয়াম হেনরি ব্রাগ এবং উইলিয়ান লরেঞ্জ ব্রাগ।এটা দেখায় যে প্রত্যেক অনুর ৬ টি সমদূরবর্তী নিকট প্রতিবেশী থাকে যারা পরমানুর বিন্যাসে নয় বরং একটি নির্দিষ্ট কেলাস জালের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে।আরো অনেক অজৈব যৌগ থাকে যাদের একই রকম গঠন দেখতে পাওয়া যায়।এসব অণুর ব্যাখ্যা দেওয়া হয় এমন ভাবে যে তারা নিরপেক্ষ অণু হিসেবে না বরং আয়ন হিসেবে থাকে।কিন্তু এই হাইপোথিসিস ১৯২০ সালের মধ্যভাগের আগেও প্রমাণিত হয়নি যতদিন না পর্যন্ত এক্সরে প্রতিফলন পরিক্ষা হয়েছিল(যা দ্বারা ইলেক্ট্রনের ঘনত্ব বোঝা যায়) আয়নিক কেলাস এর গঠন ব্যাখায় তাত্ত্বিক মূলনীতি প্রদানে অবদান রাখেন Max Born(ম্যাক্স বর্ন),Fritz Haber(ফ্রিটজ হেবার),Alfred Lande(আলফ্রেড ল্যান্ড),Erwin Madelung,Paul Peter Ewald,এবংKazimierz Fajan (কার্জিমাজ ফাযান)।বর্ন আয়নিক উপাদান গুলোর গঠনের উপরে ভিত্তি করে আয়নিক শক্তি সম্পর্কে ধারণা দেন যা থার্মোরসায়ন এ প্রভূত ভূমিকা রাখে।
গঠন
আয়নিক যৌগ গুলো তাদের গঠনকারী আয়ন গুলোর বাষ্পীভবন, অধঃক্ষেপণ, অথবা শীতলীকরণ এর মাধ্যমে ফেরত পাওয়া যেতে পারে।ক্ষার ধাতুর মতো সক্রিয় মৌলগুলোর সাথে হ্যালোজেন গ্যাসগুলোর মতো উচ্চ তড়িৎ ঋনাত্মক গ্যাসের বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন হতে পারে।তারা অবশ্য কঠিনের উচ্চতাপের বিক্রিয়ার উৎপাদ হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। আয়নিক যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং এর তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবনকে বাষ্পীভবন করে আবার আয়নিক যৌগ ফেরত পাওয়া যেতে পারে।যখন দ্রবনকে বাষ্পীকরন করা হয় তখন আয়নগুলো বাষ্পের সাথে চলে যায় না বরং দ্রবনে থেকে যায় এবং পর্যাপ্তভাবে এদের ঘনত্ব দ্রবনে যখন বেড়ে যায় তখন তারা আয়নিক যৌগ হিসেবে কেলাসিত হয়।এই পদ্ধতি প্রকৃতিতে অনেক ঘটে এবং যা তরলের বাষ্পীভবন এর ফল।আয়নিক যৌগ ফেরত পাওয়া যায় যখন তার সম্পৃক্ত যৌগকে উচ্চ তাপমাত্রায় তাপ দিয়ে তাপমাত্রা হঠাৎ হ্রাস করা হয় যেইপর্যন্ত দ্রবন অতিরিক্ত সম্পৃক্ত হয়ে কঠিন যৌগ উৎপাদন না করে।
অদ্রাব্য আয়নিক যৌগ অধঃক্ষেপণ এর মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে যখন দুইটি দ্রবণ মিশ্রিত করা হয় যেখানে একটি দ্রবনে ক্যাটায়ন এবং অপর দ্রবনে অ্যানায়ন থাকে। যেহেতু প্রত্যেক দ্রবণ তড়িৎ নিরপেক্ষ তাই অবশ্যই প্রত্যেক দ্রবনে বিপরীত আয়ন বিদ্যমান থাকতে হবে। তারা যাতে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে আয়নিক যৌগ দূষিত করতে না পারে সেজন্য এমন ভাবে আয়ন নির্বাচন করতে হবে যেন তারাও অধঃক্ষিপ্ত না হয়। যদি উভয় দ্রবনে হাইড্রোজেন এবং হাইড্রোক্সাইড আয়ন থাকে তবে তারা বিক্রিয়া করে পানি গঠন করবে যা এসিড-ক্ষার বিক্রিয়া বা প্রশমন বিক্রিয়া নামে পরিচিত।অপরভাবে বিপরীত আয়নগুলো এমন ভাবে নির্বাচন করা যেতে পারে যেনো তারা বিক্রিয়া করার পরেও দ্রবনে দ্রবীভূত হয়ে দর্শক আয়ন হিসেবে থাকতে পারে। যদি অধঃক্ষেপন বা বাষ্পীভবন এ দ্রাবক হিসেবে পানি ব্যবহার করা হয় তবে আয়নিক যৌগের কেলাসের সাথে পানির কেলাস ও যুক্ত হতে পারে যাকে হাইড্রাইড বলে যার রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন হতে পারে। গলিত লবণকে তার শীতলীকরণ তাপমাত্রার নিচে শীতল করলে তা কঠিন হয়ে যায়।এই অবস্থায় জটিল আয়নিক যৌগ গুলোর কঠিন অবস্থার সংশ্লেষণ করা হয় যারা একসাথে গলে যায়। অন্যান্য সময়ে কঠিন বিক্রিয়কদের একসাথে গলনের দরকার হয় না বরং কঠিন-অবস্থার-সংশ্লেষন এর পথে গিয়ে বিক্রিয়া করতে পারে।এই পদ্ধতিতে বিক্রিয়কগুলো পেস্ট এ রূপান্তরিত হতে পারে তারপর এমন ভাবে তাপ দেওয়া হয় যাতে প্রতিবেশী আয়ন গুলো পরষ্পর ব্যাপিত হতে পারে যতখন বিক্রিয়ক গুলো তাপীয় পাত্রে থাকে। অন্যান্য পদার্থগুলো সঠিক স্টয়কিওমেট্রি অনুপাত এবং অনুদ্বায়ী পদার্থ ছাড়া ব্যবহার কিরা হয় যাতে অন্যান্য আয়নগুলো দূর করনে ব্যবহার করা যায়। উচ্চ সক্রিয় ধাতু( সাধারনত গ্রুপ ১ এবং গ্রুপ ২) উচ্চ তড়িৎ ঋণাত্মক হ্যালোজেন গ্যাস(গ্রুপ ১৭) এর বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন আদান প্রদানের মাধ্যনে আয়নীকরন হয় যা বর্ন হেবার চক্র পদ্ধতির মাধ্যমে বুঝা যায়।