আমার বন্ধু রাশেদ

আমার বন্ধু রাশেদ ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশি যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র।[1] মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত একই নামের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম[2][3] চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে মমন চলচ্চিত্র ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এই চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ে করেছেন চৌধুরী জাওয়াতা আফনান, অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, হুমায়রা হিমু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আরমান পারভেজ মুরাদ, এছাড়াও শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত কাওসার আবেদীন।[4]

আমার বন্ধু রাশেদ
চলচ্চিত্রের অফিসিয়াল পোস্টার
ডিভিডি প্রচ্ছদ
পরিচালকমোরশেদুল ইসলাম
প্রযোজকফরিদুর রেজা সাগর
উৎসমুহম্মদ জাফর ইকবাল কর্তৃক 
আমার বন্ধু রাশেদ
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারইমন সাহা
চিত্রগ্রাহকএল অপু রোজারিও
সম্পাদকরতন পাল
পরিবেশক
মুক্তি
  •  এপ্রিল ২০১১ (2011-04-01) (বাংলাদেশ)
দৈর্ঘ্য১০০ মিনিট
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
নির্মাণব্যয়৩০,০০০,০০৳
আয়৬০,০০০,০০৳

১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুঁটে উঠেছে গল্পে। এর আগে মোরশেদুল ইসলাম কিশোর চলচ্চিত্র দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬) এবং খেলাঘর (২০০৬) নামে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

কাহিনিসংক্ষেপ

আমার বন্ধু রাশেদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বানানো হয়েছে। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার ডাকে এক কিশোরের মনও কীভাবে আন্দোলিত হয়েছে- সে চিত্রই ফুটে উঠবে ছবির কাহিনিতে। প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মফস্বলের ছোট একটা শহর। আর চরিত্রগুলো হচ্ছে কয়েকজন স্কুলছাত্র। মূল চরিত্র রাশেদ হঠাৎ স্কুলে হাজির হয়। তার নাম আসলে রাশেদ নয়, স্কুলের শিক্ষক তার ছাত্রদের নিয়ে রাশেদকে এই নামটি দিয়েছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, একাত্তরের উত্তাল দিনগুলো যখন ছোট ছোট ছেলেরা বুঝতে পারছে না, রাজনীতিসচেতন রাশেদ তখন ঠিক তার মতো করে সেটা সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। একসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একদিন এই ছোট শহরেও তারা এসে হাজির হয়। ভয়ংকর এক ধ্বংসলীলার সাক্ষী হয়ে থাকে রাশেদ। স্বাধীনতাসংগ্রামের শুরুতে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে সে। সঙ্গে কয়েকজন বন্ধু। সম্মুখযুদ্ধে বন্দী হয়ে যায় তাদের পরিচিত একজন মুক্তিযোদ্ধা। একদিন রাশেদ ও তার বন্ধুরা তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোলে রাশেদ ও তার বন্ধুদের একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়। রাশেদ আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সব বন্ধু যখন আবার একত্র হয় ছোট্ট শহরটিতে, তারা আবিষ্কার করে রাশেদ নামের বিচিত্র ছেলেটি আর নেই। কিন্তু রাশেদের স্মৃতি তার বন্ধুদের হূদয়ে বেঁচে থাকে চিরদিন।[5]

কুশীলব

নির্মাণ ইতিহাস

প্রায় বছর পনেরো আগে 'আমার বন্ধু রাশেদ' পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম। তখন থেকেই উপন্যাসটি নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরির কথা ভাবছিলেন তিনি। উপন্যাসটি পড়ে এতটা আবেগপ্রবণ হওয়ার মূল কারণ, উপন্যাসের গল্পটি অনেকটাই মিলে যায় তার নিজের জীবনের সঙ্গে। এই উপন্যাসের নায়ক রাশেদ মাত্র এইটে পড়ার সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মোরশেদুল ইসলামও ক্লাস এইটে পড়ছিলেন। ফলে উপন্যাসটি পড়ার সময় নায়কের সঙ্গে নিজের শৈশবকেও কিছুটা মিলিয়ে দেখেন তিনি। রাশেদের সঙ্গে নিজেকে একাকার করে তিনি নিজেও অনুভব করেন যুদ্ধের উত্তেজনা। মনে মনে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এই উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেবেন। এরপর পেরিয়ে গেল এক যুগেরও বেশি সময়। এই গল্পটি পর্দায় ফুটিয়ে তোলা ছিল বেশ জটিল একটি কাজ। এই কঠিন কাজটির জন্য নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করতে নির্মাতার সময় লেগেছে বেশ। এতে রয়েছে যুদ্ধের কিছু দৃশ্য। বড় একটি চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে তিনি লিখে ফেলেন খসড়া পাণ্ডুলিপি। ২০০৮ সালে বরকতুল্লাহ মারুফকে সঙ্গে নিয়ে চূড়ান্ত করেন চিত্রনাট্য। সে বছরই সরকারি অনুদানের জন্য পাণ্ডুলিপি জমা দেন। ২০০৯ সালে ছবিটি সরকারি অনুদান লাভ করে। অনুদান পেলেও ছবিটি তৈরি হতে সময় লেগে যায় প্রায় বছর দুয়েক। নির্মাণে বিলম্ব হওয়ার নেপথ্যে আর্থিক সমস্যাই দায়ী। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে দিনাজপুরে শুরু হয় শুটিং। সেখানে ইকবাল হাই স্কুল ও শহরসংলগ্ন এলাকায় ধারণ করা হয় অধিকাংশ দৃশ্য। প্রথম লটের শুটিংয়ের পর অর্থনৈতিক জটিলতায় কিছুদিন থেমেছিল শুটিং। অল্প কিছু দিনের মধ্যে নবোদ্যমে আবারও শুরু হয় শুটিং। দিনাজপুর, মংলা ও ময়মনসিংহে ধারণ করা হয় কিছু যুদ্ধের দৃশ্য। এ ছাড়া আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ময়মনসিংহ এস কে হাসপাতালে। নির্মাতা জানান, অল্প বাজেটে অধিক কাজ হওয়ায় ছবিটি নির্মাণে বেগ পেতে হয়েছে। ধকলটা শরীরের ওপর দিয়েই গেছে বেশি। শুটিংয়ের সময় সেনাবাহিনী আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। শুটিং শুরুর আগেই পরিচালক সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে শুটিংয়ে সহায়তা চান। রংপুর ক্যান্টনমেন্টের সহযোগিতা সত্যিই মনে রাখার মতো।

ছবির বিশেষত্ব সম্পর্কে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধে কিশোরদের অংশগ্রহণ নিয়ে রচিত উপন্যাসের সংখ্যা খুবই কম। এ উপন্যাসে বিষয়টি রয়েছে বলেই চলচ্চিত্রায়ণের জন্য এটি বেছে নিয়েছি। এ ছবি দেখে কিশোররা মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করবে এবং অণুপ্রাণিত হবে বলেই আমার ধারণা। আর কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে এটিই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র। সরাসরি বেশ কিছু যুদ্ধের দৃশ্য আছে ছবিতে। বিশ্বাসযোগ্যভাবে দৃশ্যগুলো চিত্রায়ণের চেষ্টা করেছি। অনেকের অভিযোগ, আমার চলচ্চিত্র বরাবরই ধীরগতির। এ ছবিতে আমি এ বিষয়টা মাথায় রেখেছি। আমি মনে করি, এ ছবিটি বেশ গতিশীল।'[6]

সঙ্গীত

'আমার বন্ধু রাশেদ' চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা

মুক্তি

চলচ্চিত্রটি ২০১১ সালে ১লা এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "বিজয় দিবসে 'আমার বন্ধু রাশেদ'"। ২০২০-০৪-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২
  2. "'আমার বন্ধু রাশেদ'"। ১১ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১১
  3. শ্যুটিং শুরু ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এর
  4. "চেন্নাইতে 'আমার বন্ধু রাশেদ'"। ৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১১
  5. "'আমার বন্ধু রাশেদ---প্রথম আলো'"। ২০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৪
  6. ‘আমার বন্ধু রাশেদ---কালের কণ্ঠ’

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.