আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম

লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অবঃ) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭ম সেনাপ্রধান। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম ১৯৪৬ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলার মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ ইদ্রিস এবং মায়ের নাম চেমন আরা বেগম। তার স্ত্রীর নাম সৈয়দা ইসমাত নাসিম। তাদের দুই মেয়ে, এক ছেলে।

কর্মজীবন

আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ২৫ মার্চের পর কে এম সফিউল্লাহর (বীর উত্তম) নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে নাসিমের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তখন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনঃসংগঠিত হওয়ার পর নাসিম প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের পঞ্চবটি সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘এস’ ফোর্সের অধীন ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। আশুগঞ্জ, মনতলা, মাধবপুর , শাহবাজপুর ও চান্দুরার যুদ্ধ তার জীবনের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৯৬ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় কথিত অভ্যুত্থানের অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত ও চাকরিচ্যুত হন।[2]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে ১৩-১৪ এপ্রিল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম সহযোদ্ধাদের নিয়ে আশুগঞ্জে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আশুগঞ্জ দখলের জন্য ১৩ এপ্রিল সড়কপথে পার্শ্ববর্তী ভৈরবে উপস্থিত হয়। পরদিন আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পেছনে হেলিকপ্টারে কমান্ডো ব্যাটালিয়নের প্রায় এক কোম্পানি সেনা নামে। গানবোট ও অ্যাসল্ট ক্রাফটের সাহায্যে নদীপথেও সেনা আসে। ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কয়েকটি জঙ্গি বিমান আশুগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আকাশ থেকে ব্যাপক গোলাগুলি করে। এর ছত্রচ্ছায়ায় দুপুর ১২টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল হেলিকপ্টারে করে নাসিমের প্রতিরক্ষা অবস্থানের পেছনে অবতরণ করে। আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম এতে দমে না গিয়ে অব্যাহত বিমান হামলার মধ্যেও তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও দ্রুততার সঙ্গে নিজেদের প্রতিরক্ষা অবস্থান পুনর্বিন্যাস করেন। এর পর দ্রুত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের আক্রমণের ধারা ও অবস্থান চিহ্নিত করে সহযোদ্ধাদের নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের মুখোমুখি হন। প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। নাসিম সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিক্রমের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলকে মোকাবিলা করেন। তার সহযোদ্ধাদের আক্রমণের প্রচণ্ডতায় কমান্ডোরা কিছুটা পিছু হটে। তবে পাকিস্তানিরা ছিল যথেষ্ট বেপরোয়া। জীবনের মায়া ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আবার সংগঠিত হয়ে নাসিমের দলকে পাল্টা আক্রমণ করে। চার ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। কোনো স্থানে প্রায় হাতাহাতি যুদ্ধও হয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমের দলকে প্রায় ঘেরাও করে ফেলে। তারা প্রায় জীবনসন্ধিক্ষণে পড়েন। তখন তার সহযোদ্ধাদের বেশির ভাগ আহত এবং কয়েকজন শহীদ। তিনি নিজেও আহত হন। এ অবস্থায় নাসিমের সামনে পশ্চাদপসরণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। শহীদদের মরদেহ সমাহিত করার ব্যবস্থা করে রাতের অন্ধকারে তিনি আগত সহযোদ্ধাদের নিয়ে সরাইলের দিকে পশ্চাদপসরণ করেন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১২-১১-২০১২"। ২০১৭-০৫-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-১৭
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১১২। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৮৭। আইএসবিএন 9789849025375।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.