আবু সয়ীদ আইয়ুব
আবু সয়ীদ আইয়ুব (১৯০৬ - ২১ ডিসেম্বর, ১৯৮২) ছিলেন একজন বাংলা সাহিত্য সমালোচক, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সাহিত্যপ্রেমী ও রবীন্দ্রকাব্য এবং সঙ্গীতের রসজ্ঞব্যাখ্যাতা।[1] তিনি বাংলা ভাষায় আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থ লিখে ১৯৭০ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।[2] এছাড়া রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন।বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশিকোত্তম উপাধি লাভ করেন।
জন্ম ও কৈশোর
আবু সয়ীদ আইয়ুবের জন্ম কলকাতায়।[2] তার পিতার নাম আবুল মকারেদ আব্বাস। তার পিতা বড়লাটের করণিক হিসেবে কাজ করতেন। মাতা ছিলেন আমিনা খাতুন। তার অবাঙালি পরিবার তিন পুরুষ ধরে কলকাতায় বাস করেও বাংলা ভাষা ও বাঙালি সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিশোর আইয়ুব উর্দু পত্রিকা কাহকুশান-এ রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি পড়ে এমন মুগ্ধ হন যে, ষোল বছর বয়সে বাংলা শেখেন।[1]
শিক্ষাজীবন
আবু সয়ীদ আইয়ুব পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে এম.এসসি পড়েন। এই সময়েই কিছুদিন সি. ভি. রমণের সঙ্গে গবেষণার সুযোগ পান। অসুস্থতার জন্য এম.এসসি পরীক্ষা দেওয়া হয় নি। পরের বছর দর্শন বিভাগের ছাত্র হন। ১৯৩৩ সনে দর্শনশাস্ত্রে এম.এ পাস করার পর হোয়াইটহেড এর ফিলসফি অব বিউটি-এর গবেষণা করেন।[1] শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দর্শন বিভাগে নিজাম অধ্যাপক হয়ে স্বল্পকাল অধ্যাপনা করেন। সেখানে তার ছাত্রী ছিলেন দর্শনের প্রখ্যাত অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কন্যা গৌরী দত্ত। ১৯৫৪ সালে আবু সৈয়দ আইয়ুব ও গৌরী দত্তের বিবাহ হয়। এই অসমবয়সী আন্তঃধর্মীয় বিবাহ সে সময় আলোড়ন ফেলেছিল এবং গৌরীকে দত্তকে তার পিতা চিরকালের মত ত্যাগ করেন। তবে আবু সয়ীদ আইয়ুব ও গৌরী আইয়ুব দত্ত ছিলেন কলকাতার বিদ্বজন সমাজের এক সম্ভ্রান্ত দম্পতি। গৌরী আইয়ুব দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট অধ্যাপিকা, শিক্ষাবিদ ও লেখিকা। তাঁদের একমাত্র সন্তান, পুত্র ডঃ পুষান আইয়ুব মুম্বইয়ে টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক।
সাহিত্যচর্চা
আবু সয়ীদ আইয়ুবের সাহিত্যকর্মে তার স্ত্রী গৌরীর সহায়তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৩৪ সালের দিকে পরিচয় সাহিত্যগোষ্ঠীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তার প্রথম বাংলা প্রবন্ধ বুদ্ধিবিভ্রাট ও অপরোক্ষানুভূতি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে কবিতা ও চতুরঙ্গ পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেছেন।[1]
রচিত গ্রন্থ
- আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ
- পোয়েট্রি এন্ড ট্রুথ
- পান্থজনের সখা’’
- ভ্যারাইটিজ অব এক্সপিরিয়েন্স
- গালিবের গজল থেকে
- টেগোর্স কোয়েস্ট
- পথের শেষ কোথায় প্রভৃতি।[1] * "মীরের গজল থেকে", "আধুনিক বাংলা কবিতা" (সম্পাদনা)।
তথ্যসূত্র
- সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, সংশোধিত ও সংযোজিত পঞ্চম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৭৪-৭৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- "আইয়ুব, আবু সয়ীদ"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।