আবুল হাসেম (বীর প্রতীক)

আবুল হাসেম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]

আবুল হাসেম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবুল হাসেমের জন্ম নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের বাটইয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল কাদের এবং মায়ের নাম সাহারা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম ছায়েরা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। [2]

কর্মজীবন

ইপিআরে চাকরি করতেন আবুল হাসেম। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীনে ঠাকুরগাঁও উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত বিওপি থেকে এসে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। পরে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাবসেক্টরে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই পঞ্চগড় জেলার উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত সীমান্ত সংলগ্ন চাওই নদীর তীরের স্থানগুলো মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে অনেক দিন মুক্ত রাখতে সক্ষম হন। জুন মাসের শেষ ভাগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত এলাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন রেইড, অ্যামবুশ ইত্যাদি কার্যক্রম চালান। জুলাই মাস থেকে ওই এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়। সীমান্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তারা আক্রমণ চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসের মাঝামাঝি একদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বড় রকমের আক্রমণ চালায়। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থানে ছিলেন প্রধান পাড়া, ডাঙ্গাপাড়া ও নুনিয়াপাড়া গ্রামে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একযোগে ওই গ্রামগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে বাধ্য হন। তিন গ্রাম মিলে তারা ছিলেন প্রায় ১২০ জন। তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে তিন গ্রামে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। একটি দলে ছিলেন আবুল হাসেম। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে সেদিন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছোট এক ক্যাম্পে আক্রমণ চালান আবুল হাসেমসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানিরাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে একসময় তারা অনেক গোলাবারুদ ও কয়েকটি অস্ত্র ফেলে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে থাকল। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পেছন পেছন ধাওয়া করলেন। কিন্তু বেশি দূর গেলেন না। কারণ, সীমান্ত এলাকা থেকে তারা বেশ ভেতরে চলে এসেছেন। তা ছাড়া সামনে আছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মূল ঘাঁটি। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তারা পারবেন না। তাই পেছন ফিরে দ্রুত যেতে থাকলেন সীমান্তের দিকে। যাওয়ার সময় তারা সঙ্গে নিয়ে গেলেন পাকিস্তানিদের ফেলে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। এ ঘটনায় আবুল হাসেম হতাশ বা ভেঙে পড়েননি। তিনি তার দল নিয়ে পেছনে এক স্থানে সমবেত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দলের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন নায়েব সুবেদার হাফিজ। তিনি সবাইকে এক স্থানে একত্র করেন। কয়েক দিন পর তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পূর্ব পারের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এই আক্রমণে আবুল হাসেমও অংশ নেন। তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী—দুই দলের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কয়েকজন হতাহত হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে অগ্রবর্তী ঘাঁটির পাকিস্তানি সেনারা হতাহতদের নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। তখন আবুল হাসেমরা পাকিস্তানি সেনাদের কিছু দূর ধাওয়া করেন। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা কেউ হতাহত হননি। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৬-১২-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.