আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
কথাসাহিত্যিক আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন (১৯৩৪-২০০২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী,কবি, ছড়াকার, ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক।[1] তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। এর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ তিনটি, উপন্যাস ২০টি, গল্পগ্রন্থ ৩০টি, শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ ১১টি, শিশু-কিশোর গল্প-উপন্যাসের সংখ্যা ২০টি ও ইতিহাস ঐতিহ্য ও জীবনীগ্রন্থ পাঁচটি।
আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন | |
---|---|
জন্ম | উত্তর ফেনুয়া গ্রাম, লাকসাম, কুমিল্লা জেলা, বাংলাদেশ (তৎকালীন ত্রিপুরা জেলা, ব্রিটিশ ভারত) | ২০ এপ্রিল ১৯৩৪
মৃত্যু | ২০ সেপ্টেম্বর ২০০২ ৬৮) | (বয়স
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
পেশা | কবি, কথাসাহিত্যিক, সরকারি কর্মকর্তা |
কর্মজীবন
আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন ১৯৩৪ সালের ২০ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার লৎসর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুল আউয়াল ও মায়ের নাম হাফসা খাতুন। পরিবারে পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সিএসপি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন।[2]
কর্মজীবনে মুসলেহউদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের পুলিশ বিভাগেব ভারপ্রাপ্ত আইজির দায়িত্ব পালন করেন এবং অধুনালুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।[3] চাকরি জীবনের শেষ ভাগে বাংলাদেশ বস্ত্রশিল্প সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নেন।[4]
সাহিত্যকর্ম
আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের সাহিত্যচর্চা শুরু স্কুল জীবনে দেয়াল পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তার লেখালেখির সূচনা। গল্প,উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, ভ্রমণকাহিনী সবকিছুতেই তাঁর অবাধ বিচরণ। বিশেষ করে শিশু সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর ব্যপক জনপ্রিয়তা। তাঁর রচিত হাস্যরসাত্মক ছড়া, গল্প, ছোটগল্পের খ্যাতি রয়েছে। পুরুষ তাঁর অন্যতম ছোটগল্প। তাঁর কবিতায় রোমান্টিক মানস প্রবণতা প্রাধান্য পেলেও সমাজ বাস্তবতাবোধ এবং সাধারণ মানুষের জীবন সমস্যা ও সুখ-দুঃখের কাহিনীও বিদৃত হয়েছে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নারিন্দা লেন’ ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়।
আশির দশকে আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের লেখা গল্প-উপন্যাসের পাঠকপ্রিয়তা তাকে অনেক বেশি জনপ্রিয় করেছিল। তার লেখার মূল উপজীব্য ছিল গ্রাম বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ গাঁথা জীবনের বাস্তব গল্প, শহুরে জীবনের বাস্তবতা ও তার আশপাশের চরিত্র। তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় শতাধিক। এর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ তিনটি। উপন্যাস ২০টি, শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ ২০টি, শিশু-কিশোর গল্প-উপন্যাস প্রায় ৩০টি এবং ঐতিহ্য ও জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ ৫টি।[5]
সম্মাননা
আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন তার সাহিত্যকর্মের জন্য আসাফউদ্দৌলারেজা স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, আবুল হাসান স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, শেরেবাংলা স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, ফরিদপুর পৌরসভা সাহিত্য পুরস্কার, কালচক্র সাহিত্য পুরস্কার ও সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
সাহিত্যকর্মের তালিকা
- উপন্যাস সমগ্র-১
- উপন্যাস সমগ্র-২
- উপন্যাস সমগ্র-৩
- নির্বাচিত উপন্যাস সমগ্র
- রম্য গল্পসমগ্র-১
- রম্য গল্পসমগ্র-২
- রম্য গল্পসমগ্র-৩
- পিট পিট পিটম্যান
- মজার গল্পগুচ্ছ
- বাছাই মজার গল্প
- ছোটদের ভুতের গল্প
- অপ্সরী
- মুক্তিযুদ্ধের গল্প
- সোনার ঘন্টি
- শ্রেষ্ঠ রচনাবলী
- ফুলবানু
- ওগো পঞ্চদশী
- টুরিষ্ট গার্ল
- তাধিন্ ধিন্তা
- নেপথ্যে নাটক
- কিশোর গল্পসমগ্র
- নির্বাচিত শ্রেষ্ঠগল্প
- মজার গল্পগুচ্ছ
- ছোটদের রহস্য গল্প
- রঙিন বাছাই মজার গল্প
- রঙিন নির্বাচিত শ্রেষ্ঠগল্প
- রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলার গল্প
- কিশোর উপন্যাস সমগ্র
- ছেলেবেলার দিনগুলি
- কমরেড প্রীতিলতা
মৃত্যু
আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রোজ শুক্রবার ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নিজ গ্রামে তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশে চিরদিনের জন্য সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র
- "স্ম র ণ : আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন"। Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২০।
- "আজ আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২০।
- amadernotunshomoy.com (২০১৮-১২-১৮)। "লেখকের পেশা এবং আমলা লেখক"। Amadernotun Shomoy। ২০২০-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২০।
- "আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন | বাংলাদেশ প্রতিদিন"। Bangladesh Pratidin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২০।
- "বৃহত্তর কুমিল্লার স্মরণীয় বরণীয়-আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২০।