আবুল কালাম (বীর প্রতীক)

একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন আবুল কালাম

আবুল কালাম
মৃত্যু২০০৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

আবুল কালাম (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবুল কালামের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আফজাল আলী এবং মায়ের নাম সালেহা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জাকিয়া খাতুন। তাদের তিন মেয়ে, ছয় ছেলে। [2]

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে। তাদের হেডকোয়ার্টার ছিল কুঠিবাড়িতে। ২৬ মার্চ খুব ভোরে তারা ঢাকার খবর পেয়ে যান। সে সময় সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে বাঙালি কোনো কর্মকর্তা, এমনকি সেক্টর সুবেদার মেজরও উপস্থিত ছিলেন না। ২৮ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুঠিবাড়িতে গোলাবর্ষণ শুরু করে। তখন আবুল কালাম বেশ সাহসী ভূমিকা পালন করেন। তারা হাবিলদার ভুলু মিয়ার নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি অবস্থানে পাল্টা গোলাবর্ষণ করেন। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত তারা দিনাজপুর শহর শত্রুমুক্ত রাখতে সক্ষম হন। পরে পশ্চাদপসরণ করে ডালিমগাঁও নামক স্থানে অবস্থান নেন। সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ করেন। এসব যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর তারা আশ্রয় নেন ভারতে

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

আবুল কালাম অক্টোবর মাস থেকে সিলেট এলাকায় যুদ্ধ করেন। ছাতক, গোয়াইনঘাট, ছোটখেল, রাধানগর, সালুটিকর, গোবিন্দগঞ্জ, লামাকাজিঘাটসহ বেশ কয়েকটি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এ সব যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তিনি মর্টার দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালাতেন। ভারতে অবস্থানকালে আবুল কালামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তিনি হেডকোয়ার্টার কোম্পানির মর্টার প্লাটুনের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। মে-জুন মাসে তিনি দিনাজপুর এলাকায়, জুলাই-আগস্ট মাসে বাহাদুরাবাদঘাট, দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন সুগারমিলসহ রৌমারির বেশ কয়েকটি স্থানের অপারেশনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি টেলিভিশন চ্যানেলের একটি দল রৌমারি আসে। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন রজার। তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ছবি চিত্রায়ণ করেন। রৌমারির হাজিরচরের একটি গোয়ালঘর থেকে কোদালকাঠির পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আবুল কালাম গোলাবর্ষণ করছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও তাদের অবস্থানে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করছিল। এতে এনবিসি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবদিকেরা পর্যন্ত ভড়কে যান। কিন্তু আবুল কালাম বিচলিত না হয়ে পাকিস্তানি অবস্থানে মর্টারের সাহায্যে একের পর এক গোলাবর্ষণ করেন। তার এই সাহসিকতায় বিদেশি সাংবাদিকেরা পর্যন্ত বিস্মিত হন। পরে ওই প্রামাণ্য চিত্রটি বিশ্বব্যাপী প্রদর্শিত হয়। এতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে ওঠে। মর্টার বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম একটি সাফল্য। ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর সকাল থেকেই পাকিস্তানিরা লুনি গ্রামের সব কটি অবস্থানের ওপর অনবরত মেশিনগানের গুলি ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করতে লাগল। এর মধ্যে রিকোয়েলস রাইফেলের গোলা ছিল মারাত্মক। মুক্তিযোদ্ধারাও প্রস্তুত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধঅদের সম্মুখ অবস্থান থেকে পর্যাপ্তসংখ্যক দুই ইঞ্চি মর্টার গোলা ও এনারগা গ্রেনেড ছোড়া হয়। ক্লোজ ব্যাটেলে দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলা ও এনারগা গ্রেনেড খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বারবার হামলা অনবরত মর্টার ও রিকোয়েলস রাইফেল গোলা নিক্ষেপ করেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবস্থান থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণও সরাতে পারেনি। এক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করেন আবুল কালাম। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৭-০১-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ২৯৯। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.