আবদুল বাসেত

শহীদ আবদুল বাসেত (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১২ নভেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]

আবদুল বাসেত
জন্ম১২ নভেম্বর, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ আবদুল বাসেতের জন্ম ফেনী জেলার সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সুলতান আহমেদ এবং মায়ের নাম মোছা মোস্তফা বেগম। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। [2]

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে আবদুল বাসেত কৃষিকাজ করতেন। আনসারের প্রশিক্ষণও তার নেওয়া ছিল। আনসার বাহিনীর অনিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্থানীয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন আবদুল বাসেত। পরে ভারতে যান। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তিনটি বিশেষ ফোর্স গঠন করা হয়। এর একটি ছিল ‘কে’ ফোর্স। কে ফোর্সের জন্য তখন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ও ২ নম্বর সেক্টরের গণযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠন করা হয়। আবদুল বাসেতকেও নবগঠিত এই রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘কে’ ফোর্সের ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে সীমান্ত এলাকা থেকে কুমিল্লা অভিমুখে অভিযান শুরু করে। ১১ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা কৃষ্ণপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। তখন তারা (৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা ও ব্রাভো কোম্পানি) পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই দলে ছিলেন আবদুল বাসেত। ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত কৃষ্ণপুর এলাকায় সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আবদুল বাসেত ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকল। একটু একটু করে তারা অগ্রসর হচ্ছেন সামনে। আর পাকিস্তানি সেনারা ক্রমেই পিছে হটছে। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিলেন। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা। বিজয় যখন সন্নিকটে এমন সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হলেন আবদুল বাসেত। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। ১১ ও ১২ নভেম্বর কৃষ্ণপুর ও পার্শ্ববর্তী বগাবাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। দুই দিনের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আবদুল বাসেতসহ দুজন শহীদ এবং একজন আহত হন। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৪ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা সম্পূর্ণ পরাস্ত হয়। এরপর তারা শালদা নদী, কসবা, মন্দভাগ প্রভৃতি এলাকার প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে নভেম্বর মাসের শেষে কুমিল্লা সেনানিবাসে আশ্রয় নেয়। কৃষ্ণপুরের যুদ্ধে আবদুল বাসেত অমিত সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। সহযোদ্ধারা পরে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মুক্তাঞ্চল কসবাতে তার মরদেহ সমাহিত করেন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ৩০-০১-২০১২"। ২০১৮-০৩-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-০৫
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪০৮। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৫৭। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.