আবদুল কুদ্দুস মাখন

আবদুল কুদ্দুস মাখন (জুলাই ১, ১৯৪৭ - ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯৯৪) ছিলেন বাংলাদেশী ছাত্রনেতা এবং রাজনীতিক। সত্তরের দশকের শুরুতে দেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের অধীনে তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মাখন ১৯৭৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[1]

আবদুল কুদ্দুস মাখন
আবদুল কুদ্দুস মাখন
জন্ম
আবদুল কুদ্দুস মাখন

১ জুলাই ১৯৪৭
মৃত্যু১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪(1994-02-10) (বয়স ৪৬)
বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশারাজনীতিবিদ

জীবনী

আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মৌড়াইল গ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আবদুল আলী ও মা আমেনা খাতুন।[2]

শিক্ষাজীবন

তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ক্লাশে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে এমএ পাশ করে আইনবিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৬-৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রসংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮-৬৯ সালে ফজলুল হক হল ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রনেতা হিসাবে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।[3] ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।[4]

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ

১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার সদস্যের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।[5] ১৯৭১ সালের ১ মার্চ, তিনি নূরে আলম সিদ্দিকী, আ.স.ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজ প্রমুখ ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।[6] ১৯৭১ সালের ২ মার্চ, স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বমুহূর্তে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যান্য নেতা সহকারে আবদুল কুদ্দুস মাখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। পরদিন ৩ মার্চ তিনি তাঁর সহকর্মীসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক ঘোষণা দেন।[1] মুক্তিযুদ্ধে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। পূর্বাঞ্চলীয় লিবারেশন কাউন্সিলের ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। [7]

রাজনীতি

১৯৭২ সালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন কালে শেখ মুজিবুর রহমানকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়। ভারতের কলকাতায় ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী মেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৩ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ করেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বার্লিনে আন্তর্জাতিক বিশ্ব যুব উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৫সালের ২৩ আগষ্ট রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৮ সালের ১২ নভেম্বর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দলটির জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।[8]

মৃত্যু

১৯৯৪ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত জন্ডিসরোগে আক্রান্ত হয়ে লিভার সিরোসিসে আমেরিকার ফ্লোরিডায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

তথ্যসূত্র

  1. শারমীন, মীর ফারজানা (জানুয়ারি ২০০৩)। "মাখন, আবদুল কুদ্দুস"। সিরাজুল ইসলামবাংলাপিডিয়া (বাংলা ভাষায়)। ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
  2. "জাতীয় বীর আব্দুস কুদ্দুস মাখনের মা আর নেই"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭
  3. "জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন আমরা তোমায় ভুলব না | আমাদের সময়.কম – AmaderShomoy.com"আমাদের সময়.কম - AmaderShomoy.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭
  4. "দীর্ঘ চলার পথে হারিয়েছে অনেক ত্যাগী নেতা"দৈনিক যুগান্তরঢাকা। ২৩ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
  5. "মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাখনের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭
  6. "চলে গেলেন 'চার খলিফা'র একজন শাহজাহান সিরাজ"The Daily Star Bangla। ২০২০-০৭-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭
  7. "বঙ্গবন্ধুর সহচররা এখন কে কোথায় | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭
  8. "স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাজাহান সিরাজ মারা গেছেন"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.