আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (জন্ম ২৫ জুলাই ১৯৩৯) বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক। তিনি ষাটের দশকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিসেবে পরিচিতি পান। সে সময়ে সমালোচক এবং সাহিত্য-সম্পাদক হিসাবেও তিনি অবদান রেখেছিলেন। তার জীবনের উল্লেখযোগ্য কীর্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, যা চল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশে ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ২০০৪ সালে তিনি রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন।[1][2]
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ | |
---|---|
![]() আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ | |
জন্ম | পার্ক সার্কাস, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত | ২৫ জুলাই ১৯৩৯
পেশা | কবি ও লেখক, শিক্ষাবিদ, সমাজসংগঠক, টিভি উপস্থাপক |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | একুশে পদক, রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার |
স্বাক্ষর | ![]() |
বাংলাদেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০৫ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭০-এর দশকে তিনি টিভি উপস্থাপক হিসাবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[3]
প্রারম্ভিক জীবন
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার অন্তর্গত কামারগাতি গ্রামে। তার পিতা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন কলেজ শিক্ষক [4]। ১৯৫৫ সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
আবু সায়ীদ ১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি কিছুকাল সিলেট মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালের পহেলা এপ্রিল তিনি রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে সরকারি চাকুরিজীবন শুরু করেন। সেখানে পাঁচ মাস শিক্ষকতা করার পর তিনি ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে যোগ দেন (বর্তমানে সরকারী বিজ্ঞান কলেজ)। এই কলেজে তিনি দু' বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র তেইশ। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বাংলা পড়াতেন।
এরপর তিনি ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে সেখানে যোগদান করেন। আবু সায়ীদ যখন ঢাকা কলেজে যোগ দেন তখন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও গদ্য লেখক শওকত ওসমান৷
ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বেগবান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। এ সময় কিছুকাল বাংলাদেশে টেলিভিশনে উপস্থাপনাও করেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
![](../I/MZI-YH-AAS.jpg.webp)
আবু সায়ীদ ১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে সায়ীদ বলেন:
দেশের এই সার্বিক অবক্ষয় এবং সম্ভাবনাহীনতার ভেতর সীমিত সংখ্যায় হলেও যাতে শিক্ষিত ও উচ্চমূল্যবোধসম্পন্ন আত্মোৎসর্গিত এবং পরিপূর্ণ মানুষ বিকশিত হওয়ার পরিবেশ উপহার দেয়া যায়, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। একজন মানুষ যাতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অধ্যয়ন, মূল্যবোধের চর্চা এবং মানবসভ্যতার যা-কিছু শ্রেয় ও মহান তার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বসম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠতে পারে- আমরা এখানে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। কাজেই আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রাণহীন, কৃত্রিম, গতানুগতিক প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি সর্বাঙ্গীণ জীবন-পরিবেশ।
বাংলাদেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা অনুধাবন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ১৯৯৮ সালে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু হয়।
সাহিত্য
আবু সায়ীদ ১৯৬০-এর দশকে বেশ কিছু প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা লিখেছেন।তাছাড়া ওনার বক্তব্যসংবলিত গ্রন্থ ব্রাহ্মণের বাড়ির কাকাতুয়া অতি বিখ্যাত।
প্রবন্ধ
- সংগঠন ও বাঙালি
- ব্রাহ্মণের বাড়ির কাকাতুয়া।
পুরস্কার
- ২০০৪: রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার
- ২০০৫: শিক্ষায় অবদানের জন্য একুশে পদক।[5]
- ২০১২: প্রবন্ধে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার।[6]
- ২০১৭: বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন থেকে পালমোকন-১৭ সম্মাননা।[7]
তথ্যসূত্র
- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
- An interview of Abdullah Abu Sayeed (এবেলা)
- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আশিতেও অগ্রনায়ক (দৈনিক প্রথম আলো)
- সায়ীদ, আবদুল্লাহ আবু. ২০০১ (দ্বিতীয় সংস্করণ). বিস্রস্ত জর্নাল. সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা.
- একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান (পিডিএফ)। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পৃষ্ঠা ৬। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৮।
- "বাংলা একাডেমি পুরস্কার ঘোষণা-প্রথম আলো"। ২০১৭-০৯-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- "'পালমোকন-১৭' পেলেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১৮ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
![](../I/Commons-logo.svg.png.webp)