আফনতোভা গোরা

আফনতোভা গোরা (Afontova Gora) একটি শেষ উচ্চ পুরা প্রস্তর যুগীয় এবং মধ্য প্রস্তর যুগীয় সাইবেরীয় প্রত্নস্থল সমষ্টি বা কমপ্লেক্স যা রাশিয়ার ক্রাসনয়ার্স্ক শহরের ইয়েনিসেই নদীর তীরে অবস্থিত। মালটা-বুরেট সংস্কৃতির লোকেদের সাথে আফনতোভা গোরার সাংস্কৃতিক ও জিনতাত্ত্বিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৮৮৪ সালে আই. টি. সাভেনকভ এই কমপ্লেক্সটি প্রথম খনন করেন। [1]

আফনতোভা গোরা
ক্রাসনয়ার্স্ক আঞ্চলিক জাদুঘর
লুয়া ত্রুটি মডিউল:অবস্থান_মানচিত্ এর 480 নং লাইনে: নির্দিষ্ট অবস্থান মানচিত্রের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়নি। "মডিউল:অবস্থান মানচিত্র/উপাত্ত/রাশিয়া ক্রাসনয়ার্স্ক ক্রাই" বা "টেমপ্লেট:অবস্থান মানচিত্র রাশিয়া ক্রাসনয়ার্স্ক ক্রাই" দুটির একটিও বিদ্যমান নয়।
অবস্থানক্রাসনয়ার্স্ক ক্রাই, রাশিয়া
অঞ্চলআলতাই-সায়ান অঞ্চল
ধরনমুক্ত বৃত্তি স্থান
ইতিহাস
সময়কালশেষ উচ্চ পুরা প্রস্তর যুগ থেকে মধ্য প্রস্তর যুগ
স্থান নোটসমূহ
ওয়েবসাইট,
আফনতোভা গোরা
ভৌগলিক সীমাসাইবেরিয়া
সময়উচ্চ পুরা প্রস্তর যুগ
মধ্য প্রস্তর যুগ
তারিখ২১,০০০-১২,০০০
পূর্বসূরীমালটা-বুরেট সংস্কৃতি
উত্তরসূরীসামারা সংস্কৃতি
খ্‌ভালিন্‌স্ক সংস্কৃতি
স্রেডনি স্টগ সংস্কৃতি
নিপার-ডনেটস সংস্কৃতি
পিটেড অয়ার সংস্কৃতি
আফানাসিয়েভো সংস্কৃতি
ব্যাক্ট্রিয়া-মারজিয়ানা প্রত্নতাত্ত্বিক সমষ্টি
মায়কপ সংস্কৃতি
ইয়াম্নায়া সংস্কৃতি
বোটাই সংস্কৃতি

এই কমপ্লেক্সে পাঁচ বা তারও বেশি ক্যাম্পসাইটের অনেক স্তরবিজ্ঞানগত স্তর রয়েছে।[1] ক্যাম্পসাইটগুলো ম্যামথ শিকার এর প্রমাণ দেখায় এবং এগুলো ছিল ম্যামথ শিকারীদের পূর্ব দিকে প্রসারণের ফল।[2] আফনতোভা গোরায় প্রাপ্ত মানব জীবাশ্মসমূহ হারমিটেজ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।[1]

প্রত্নস্থলসমূহ

দ্বিতীয় আফনতোভা গোরা হচ্ছে সেই প্রত্নস্থল যেখানে মানব অবশেষসমূহ পাওয়া যায়। এই স্থলটি ১৯১২ থেকে ১৯১৪ সালে ভি. আই. গ্রোমভ এই প্রত্নস্থলটি খনন করেন।[3] ১৯২৪ সালে জি. পি. সসনোভস্কি, এন. কে. অয়েরবাখ এবং ভি. আই. গ্রোমভ এখানে মানব ফসিল খুঁজে পান।[4] এই প্রত্নস্থলে ম্যামথ, আর্কটিক শেয়াল, রেইনডিয়ার, বাইসন ও ঘোড়ার অবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।[5][6]

আফনতোভা গোরা ২ এ সাতটি স্তর রয়েছে।[6] তৃতীয় স্তরটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণl: এই স্তরটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংস্কৃতিক শিল্পকর্ম পাওয়া যায় এবং এখানেই মানব জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়।[7] এখানে ২০,০০০ এরও বেশি শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে। সেই এই স্তরটিতে আছে ৪৫০টি সরঞ্জাম এবং ২৫০টিরও বেশি অস্থিনির্মিত শিল্পকর্ম যেগুলো হাড়, হরিণের শিং ও ম্যামথের দাঁত দ্বারা তৈরি।[7] প্রাথমিক খননের ফলে দুজন পৃথক ব্যক্তির জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল: একটি ছিল ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের একজন শিশুর উপরের প্রিমোলার দাঁত এবং বাম রেডিয়াস, আলনা, হিউমেরাস, ফ্যালাংক্স, অপরটি ছিল একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ফ্রন্টাল হাড়।[7]

তৃতীয় আফনতোভা গোরা হচ্ছে সেই প্রত্নস্থল যার খনন কাজ করেন ১৮৮৪ সালে আই. টি. সাভেনকভ।[3] এই প্রত্নস্থলটি ১৮৮০ এর দশকে খনি উত্তোলন দ্বারা বিঘ্নিত হয়।[8] এই প্রত্নস্থলটি ৩টি স্তর রয়েছে।[8]

আফনতোভা গোরা ৫ আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৬ সালে।[9] এই প্রত্নস্থলে খরগোস, পিকা, গুহাবাসী সিংহ, ঘোরা, রেইনডিয়ার, বাইসন ও তিতিরের অবশেষ পাওয়া গেছে।[10]

মানব অবশেষ

এই কমপ্লেক্সে দুজন ব্যক্তির দেহাবশেষ পাওয়া গেছে যারা আফনতোভা গোরা ২ (AG2) এবং আফনতোভা গোরা (AG3) নামে পরিচিত। (আফনতোভা গোরা ১ নাম দেয়া হয়েছে একটি ক্যানিড বা কুকুর জাতীয় প্রাণীকে প্রাণীকে)।

আফনতোভা গোরা ২

আফনতোভা গোরা ২ নামক মানব জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয় ১৯২০ এর দশকে দ্বিতীয় আফনতোভা গোরায় এবং এটি হারমিটেজ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।[1] কালনির্ণয় করে জানা গেছে এটি আজ থেকে ১৭,০০০ বছর পুরনো[11] (১৬,৯৬০-১৪,৪৯০ বছর পূর্বের[12])।

২০০৯ সালে গবেষকগণ হারমিটেজ জাদুঘরে গিয়ে এই অবশেষ এর হিউমেরাস হাড় থেকে ডিএনএ গ্রহণ করে।[13] উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দূষণের পরেও গবেষকগণ নিম্ন কভারেজের জিনোম নিষ্কাশন করতে সক্ষম হন।[11] ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি একজন পুরুষ ছিল।[11]

এই অবশেষটি মালটা-বুরেট সংস্কৃতিতে প্রাপ্ত MA1 (মালটা বালক) জীবাশ্মটির সাথে ঘনিষ্ঠ জিনতাত্ত্বিক সম্পর্ক দেখায়।[14] আফনতোভা গোরা ২ কারিতিয়ানা জনগোষ্ঠীহান চাইনিজদের সাথেও জিনতাত্ত্বিক সম্পর্ক দেখায়।[14] এর জিনোমের ১.৯-২.৭% ছিল নিয়ান্ডার্থাল থেকে প্রাপ্ত।[12]

ফু প্রমুখ অনুসারে[12], AG-2 বিরল ওয়াই-ডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপ Q1a1 এর অন্তর্গত (যা Q-F746 ও Q-NWT01 নামেও পরিচিত)।

আফনতোভা গোরা ৩

২০১৪ সালে, দ্বিতীয় আফনতোভা গোরায় আরও মানব অবশেষগুলো পাওয়া যায় ইয়েনেসেই নদীর উপর একটি নতুন সেতু নির্মাণের সময় উদ্ধারমূলক খননের পূর্বে।[12] এই অবশেষগুলো দুজন ভিন্ন নারীর ছিল: একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর এটলাস হাড় এবং একটি কিশোরী নারীর ম্যান্ডিবল ও পাঁচটি নিম্নপাটির দাঁত যার বয়স ১৪-১৫ বছর ছিল।[4] প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিল এই নতুন প্রাপ্ত জীবাষ্মগুলোর সময়কাল মোটামুটিভাবে আফনতোভা গোরা ২ এর মতই হবে।[12] ২০১৭ সালে একটি প্রত্যক্ষ এএমএস কালনির্ণয়ের মাধ্যমে জানা যায় এরা ১৬,১৩০ - ১৫,৭৪৫ বছর পুরনো (খ্রি.পূ. ১৪,৭১০±৬০ অব্দ)।[15]

আফনতোভা গোরা ৩ এর ম্যান্ডিবলকে কোমল (gracile) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[16]

গবেষকগণ আফনতোভা গোরা ৩ এর দাঁতের অঙ্গসংস্থান বিশ্লেষণ করে এই উপসংহার টেনেছেন যে, এর দাঁতগুলো আলতাই-সায়ান অঞ্চলের আরেকটি জীবাশ্ম (দ্য লিস্টভেনকা চাইল্ড) এর সাথে সবচেয়ে বেশি সদৃশ, যা পশ্চিমাঞ্চলীয় বা পূর্বাঞ্চলীয় কোনটাই নয়।[17] আফনতোভা গোরা ৩ এবং লিস্টভেনকা পৃথক দন্তবৈশিষ্ট্য দেখায় যেগুলো মালটা বালক (MA1) সাইবেরীয় জীবাশ্মগুলোর থেকে ভিন্ন।[18]

আফনতোভা গোরা ৩ এর একটি দাঁত থেকে ডিএনএ নিষ্কাশন করে তার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।[12] আফনতোভা গোরা ২ এর তুলনায় গবেষকগণ এখান থেকে উচ্চ কভারেজ এর জিনোম পেতে সক্ষম হন।[12] ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে জীবাশ্মটি একজন নারীর ছিল।[12] মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় এই জীবাশ্মটি হ্যাপ্লোগ্রুপ R1b এর।[12] এর জিনোমের ২.৯-৩.৭% ছিল নিয়ান্ডার্থাল উদ্ভূত।[12]

২০১৬ সালের একটি গবেষণায় গবেষকগণ নিশ্চিত করেন আফনতোভা গোরা ২, আফনতোভা গোরা ৩মালটা ১ (মালটা বালক) থেকে একই সাধারণ উত্তরসুরি এসেছে যেগুলোকে একত্রে মালটা গুচ্ছ (Mal'ta cluster) বলা হয়।[12] জিনতাত্ত্বিকভাবেআফনতোভা গোরা ৩ -কে মালটা ১ এর তুলনায় আফনতোভা গোরা ২ এর ঘনিষ্ঠ নয়।[12] মালটা ১ এর সাথে তুলনা করলে দেখা যায় আফনতোভার বংশগতি আধুনিক মানুষের উপর বেশি অবদান রেখেছে, এবং এটি আমেরিকার আদিবাসীদের প্রতি জিনতাত্ত্বিকভাবে বেশি ঘনিষ্ঠ।[12]

ফিনোটাইপগত বিশ্লেষণ দেখায় আফনতোভা গোরা ৩ rs12821256 অ্যালিল বহন করে যা ইউরোপীয়দের সোনালী চুলের সাথে সম্পর্কিত, যার ফলে আফনতোভা গোরা ৩ হয়ে যায় এই উদ্ভূত অ্যালীলটির সর্বপ্রথম পরিচিত ব্যক্তি যে এই সোনালী চুলের সাথে সম্পর্কিত অ্যালীলটি বহন করেছিল।[15]

তথ্যসূত্র

সাইটেশনসমূহ

গ্রন্থপঞ্জি

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.