আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে একবিংশ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ছিল না।[1] বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে ক্রিকেট খেলা পরিচালনা করতো। পরবর্তীতে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সর্বোচ্চ পরিচালনা পরিষদরূপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট খেলা পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। আইসিসি পরবর্তীকালে টেস্ট ক্রিকেটভূক্ত দেশগুলো যাতে একে-অপরের বিপক্ষে পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক খেলতে পারে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে চলমান এ পদক্ষেপকে ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা নামে পরিচিতি পায়। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে কিছু উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত দেশগুলো দূর্বলতম দেশগুলোর সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেলতে উৎসাহবোধ করে।
সাধারণ বিষয়াবলী
অধিকাংশ টেস্ট খেলা ও একদিনের সিরিজ সফরকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। সফরে এক দেশ অন্য দেশে ভ্রমণ করে ও ঘরোয়া দল হিসেবে কাউন্টি বা রাজ্য দলের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলা, প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করে। স্বাগতিক দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ কিংবা একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা অথবা স্বাগতিক ও অন্য কোন সফরকারী দলের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় এক দলের সফর শেষ হলে ও অন্য দেশ সদ্য আগমন করলে অথবা কেবলমাত্র প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে আগমনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় কেবলমাত্র তিন দলের অংশগ্রহণ ঘটে ও তিনটি দল একে-অপরের বিরুদ্ধে এক, দুই কিংবা তিনবার মোকাবেলা করে থাকে। সাধারণতঃ জয়ে ২, ফলাফল না হলে বা টাই হলে ১ এবং পরাজয়ে ০ পয়েন্টভিত্তিতে সর্বাধিক পয়েন্ট সংগ্রহকারী দুই দল একটি চূড়ান্ত খেলায় মুখোমুখি হয়। অস্ট্রেলীয় ত্রি-দেশীয় সিরিজ[2][3] এবং ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ন্যায় ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় কখনো কখনো বোনাস পয়েন্ট পদ্ধতির প্রচলন ঘটানো হয়েছে।
দুই থেকে ছয়টি টেস্ট খেলা নিয়ে টেস্ট সিরিজ গঠিত। ১৯৭০-এর দশক থেকে ১৯৮০-এর দশকের শুরুর সময় পর্যন্ত ছয় খেলার টেস্ট সিরিজ সাধারণ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে সর্বশেষ ছয় খেলার টেস্ট সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হয় যাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অ্যাশেজ সিরিজে ১৯৮১ এবং ১৯৯৭ মৌসুমে ইংল্যান্ড ছয় খেলা নিয়ে আয়োজন করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে পাঁচ খেলা নিয়ে টেস্ট সিরিজ করে।[4] চার কিংবা পাঁচটি টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সর্বাপেক্ষা কম গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ হচ্ছে এক, দুই কিংবা তিন টেস্ট খেলা। তবে সিরিজ বিজয়ী দলকে স্থায়ীভাবে ট্রফি প্রদান করা হয়। সিরিজ ড্র হলে ট্রফি উভয় দলের মধ্যে যৌথভাবে বণ্টন করা হয়। ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজের ট্রফিটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান, স্থায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ ট্রফি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য স্থায়ী ট্রফির মধ্যে রয়েছে:
- ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি (অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ)[5]
- ট্রান্স তাসমান ট্রফি (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ)[6]
- চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফি (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ওডিআই সিরিজ)[7]
- বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি (অস্ট্রেলিয়া-ভারত)[8]
- উইজডেন ট্রফি (ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ)[9]
- ওয়ার্ন-মুরালিধরন ট্রফি (অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা)[10]
- ব্যাসিল ডি’অলিভেইরা ট্রফি (ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা)[11]
- পতৌদি ট্রফি (ইংল্যান্ড-ভারত)[12]
- ফ্রিডম ট্রফি (ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা)[13][14]
আইসিসি দশ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা
এ পরিকল্পনার অধীনে প্রত্যেক দেশ একে-অপরের বিরুদ্ধে দশ বছরের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ফেব্রুয়ারি, ২০০১ সালে আইসিসি সদস্য দেশগুলো এ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে। ২০০২ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। এর মাধ্যমে প্রত্যেক টেস্টভূক্ত দেশ বাদ-বাকী নয় দেশের বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে খেলার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। এছাড়াও প্রত্যেক ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের মাঠে যে-কোন অতিরিক্ত খেলার আয়োজন করতে পারবে। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান এ সময়ে ১২টি ওডিআই এবং ৬ টেস্ট খেলতে সক্ষম হয়। এতে ২০০৪ ও ২০০৫ সালের এশিয়া কাপ কিংবা নিরপেক্ষ মাঠের ওডিআই প্রতিযোগিতা অন্তর্ভুক্ত নয়। দশ বছরের পরিকল্পনায় আটোসাটো সময়সূচীর ফলে অন্য কোন সিরিজ আয়োজনের সময় পাওয়া বেশ দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের খেলার সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।[15] আঘাতপ্রাপ্তির সমূহ সম্ভাবনা ও খেলোয়াড়দের উপর মানসিক অত্যাচার খেলার সংখ্যা কমাতে উদ্বুদ্ধ করে। আইসিসি তাদের নীতি পুনরায় নির্ধারণ করে। পর্যবেক্ষণ করে যে, ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ ঘটে, যেখানে খেলোয়াড়গণ তেমন বেশি ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন না।[16]
আইসিসি প্রধান প্রতিযোগিতা বিজয়ী দল
দেশ/দল | আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ | আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি | আইসিসি বিশ্ব টি২০ | মোট |
---|---|---|---|---|
অস্ট্রেলিয়া | ৫ | ২ | ০ | ৭ |
ভারত | ২ | ২ | ১ | ৫ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ২ | ১ | ২ | ৫ |
শ্রীলঙ্কা | ১ | ১ | ১ | ৩ |
পাকিস্তান | ১ | ১ | ১ | ৩ |
ইংল্যান্ড | ১ | ০ | ১ | ১ |
নিউজিল্যান্ড | ০ | ১ | ০ | ১ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ০ | ১ | ০ | ১ |
অস্ট্রেলিয়া -> ৫ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫); ২ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (২০০৬, ২০০৯)
ভারত -> ২ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (১৯৮৩, ২০১১); ২ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (২০০২, ২০১৩); ১ আইসিসি বিশ্ব টি২০ (২০০৭)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ -> ২ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (১৯৭৫, ১৯৭৯); ১ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (২০০৪); ২ আইসিসি বিশ্ব টি২০ (২০১২, ২০১৬)
শ্রীলঙ্কা -> ১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (১৯৯৬); ১ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (২০০২); ১ আইসিসি বিশ্ব টি২০ (২০১৪)
পাকিস্তান -> ১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (১৯৯২); ১ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (২০১৮); ১ আইসিসি বিশ্ব টি২০ (২০০৯)
ইংল্যান্ড -> ১ আইসিসি বিশ্ব টি২০ (২০১০)
নিউজিল্যান্ড -> ১ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (২০০০)
দক্ষিণ আফ্রিকা -> ১ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (১৯৯৮)
এ পর্যন্ত আইসিসি’র প্রধান প্রতিযোগিতাসমূহ আয়োজনের সংখ্যা:
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ -> ১১; আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি -> ৭; আইসিসি বিশ্ব টি২০ -> ৬।
টীকা: ২০০২ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে যৌথভাবে প্রদান করা হয়।
আইসিসি আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং
টেস্ট র্যাঙ্কিং
ওডিআই র্যাঙ্কিং
একদিনের আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশীপ টেস্টের মতোই একই কারণে রাখা হয়েছে। এর গঠনপদ্ধতিও একই। এ চ্যাম্পিয়নশীপ ব্যবস্থা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্থান দখল করবে না। অনেক ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেই বিশ্বকাপ ক্রিকেট অদ্যাবধি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে আসছে।
টি২০আই র্যাঙ্কিং
আইসিসি ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম
সাল | টুর্নামেন্ট | আয়োজক |
---|---|---|
২০২২ | ২০২২ আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ | অস্ট্রেলিয়া |
২০২৩ | ২০২৩ অনূর্ধ্ব-১৯ প্রমীলা টি ২০ বিশ্বকাপ | দক্ষিণ আফ্রিকা |
২০২৩ | ২০২৩ আইসিসি মহিলা টি২০ বিশ্বকাপ | দক্ষিণ আফ্রিকা |
২০২৩ | ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ | ভারত |
২০২৪ | আইসিসি পুরুষ বিশ্ব টুয়েন্টি২০ | - |
২০২৫ | আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি | - |
২০২৬ | আইসিসি পুরুষ বিশ্ব টুয়েন্টি২০ | - |
২০২৭ | ক্রিকেট বিশ্বকাপ | - |
২০২৮ | আইসিসি পুরুষ বিশ্ব টুয়েন্টি২০ | - |
২০২৯ | আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি | |
২০৩০ | আইসিসি পুরুষ বিশ্ব টুয়েন্টি২০ | - |
২০৩১ | ক্রিকেট বিশ্বকাপ | - |
তথ্যসূত্র
- "History of the International Cricket Council"। ২৭ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- "Carlton Mid Triangular Series 2015 Points Table"। espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৫।
- "Carlton Mid Tri-Series Results"। sportinglife.com। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৫।
- "Cricket Results - The Ashes"। espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৫।
- "Frank Worrell Trophy"। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- "Trans Tasman Trophy"। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- "Chappell–Hadlee Trophy"। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- "Border-Gavaskar Trophy"। espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- "Wisden Trophy"। espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- "Warne-Muralidaran Trophy unveiled"। ABC News। ১৫ নভেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৫।
- Wisden Cricinfo staff। "D'Oliveira honoured by South Africa"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১২।
- "ECB invites Sharmila Tagore for Pataudi Trophy presentation ceremony"। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৫।
- "Freedom Trophy: India vs South Africa series to be named after Gandhi and Mandela"। Firstpost.com। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ESPN Cricinfo staff। "India, South Africa to play Gandhi-Mandela series"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৫।
- "Too much cricket hurting the game: Kapil Dev" from rediff.com, 20 March 2002. Retrieved 22 September 2005
- "Mani dismisses suggestions there is too much cricket from Daily Times Pakistan, 9 July 2004. Retrieved 22 September 2005