আনিসুল হক

আনিসুল হক (জন্ম: মার্চ ৪, ১৯৬৫) একজন বাংলাদেশী কবি, লেখক, নাট্যকারসাংবাদিক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সত্য ঘটনা নিয়ে তার লেখা মা বইটি বেশ জনপ্রিয়।[1] বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি দিল্লী থেকে ইংরেজি ভাষায়[2] এবং ভুবনেশ্বর থেকে ওড়িয়া ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।[3]

আনিসুল হক
আনিসুল হক বাংলা উইকিপিডিয়া দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্মেলনে (২০১৫)
জন্ম (1965-03-04) ৪ মার্চ ১৯৬৫
নীলফামারী
পেশাসাংবাদিক, কথা-সাহিত্যিক, নাট্যকার, কলাম লেখক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারশ্রেষ্ঠ টিভি নাট্যকার পুরস্কার, কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার

জন্ম

আনিসুল হকের জন্ম রংপুর বিভাগের নীলফামারীতে। তার পিতার নাম মো. মোফাজ্জল হক এবং মায়ের নাম মোসাম্মৎ আনোয়ারা বেগম। তার স্ত্রীর নাম মেরিনা ইয়াসমিন। একমাত্র কন্যা পদ্য পারমিতা।

শিক্ষাজীবন

তিনি রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৮১ সালে এস.এস.সি. এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৮৩ সালে এইচ.এস.সি. পাস করেন। উভয় পরীক্ষাতেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান পান। এসএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় তিনি ৩য় এবং এইচএসসিতে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৮ম স্থান লাভ করেন। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন।[4]

কর্মজীবন

আনিসুল হক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের রেলওয়ে বিভাগে যোগদান করেন। অল্প কিছুদিন চাকরির পরই তা ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় চলে আসেন। তিনি ১৯৮৭ সালে সাপ্তাহিক দেশবন্ধু পত্রিকার সহসম্পাদক, ১৯৮৯ সালে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত দৈনিক ভোরের কাগজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত দৈনিক প্রথম আলোর সাথে যুক্ত আছেন। তার মূল ঝোঁক লেখালেখিতে। পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লেখেন। বুয়েটে পড়ার সময় কবিতার দিকে বেশি ঝোঁক ছিল। পরবর্তীতে এর পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও মনোযোগী হন। উপন্যাস, বিদ্রুপ রচনা, নাটক রচনায় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। ২০১০ সালে তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম (আইডব্লিউপি) কর্মশালায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকদের সাথে যোগ দেন। তিনি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৭ জন লেখক আইডব্লিউপির কর্মশালায় যোগ দেন।[5] ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৩০টি দেশের এক হাজার ২০০ লেখক অংশ নেন।

রচনা

গল্প

  • যে স্বপ্ন দেখতে জানতো, আজকালকার ভালোবাসার গল্প, অসমাপ্ত চুম্বনের ১২ বছর পর।

কবিতা

  • খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে (১৯৮৯),
  • আমি আছি আমার অনলে (১৯৯১),
  • আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার (১৯৯৫),
  • জলরংপদ্য (২০০২),
  • তোমাকে ভাবনা করি
  • তোমাকে না পাওয়ার কবিতা

উপন্যাস

তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস মা। এছাড়া বীর প্রতীকের খোঁজে, নিধুয়া পাথার, আয়েশামঙ্গল, খেয়া, ফাঁদ, বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম, ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি, ফাল্গুন রাতের আঁধারে, আমার একটা দুঃখ আছে, ক্ষুধা এবং ভালোবাসার গল্প, হৃদিতা, "জিম্মি" , সেঁজুতি, তোমার জন্য, ৫১ বর্তী, আবার তোরা কিপ্টা হ,আলো-অন্ধকারে যাই,আমার একটা দু:খ আছে, আয়েশামঙ্গল, বারোটা বাজার আগে, বিক্ষোভের দিনগুলির প্রেম(২০১৫) প্রভূতি উল্লেখযোগ্য।

ব্যঙ্গাত্মক রচনা

তিনি মূলত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘গদ্যকার্টুন’ নামে নিয়মিত ব্যঙ্গাত্মক রচনা লেখেন। এসব লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে কথাকার্টুন, গণতান্ত্রিক ফ্যান্টাসি‌‌, রাজা যায় রানি আসে, ছাগলতন্ত্র, অশ্বডিম্ব, সেই গাধা সেই পানি ,হাসতে হাসতে খুন উল্লেখযোগ্য।

নাটক

নাট্যকার হিসেবে তিনি ভিন্ন ধাঁচের নাটক উপহার দিয়েছেন।[6] তার রচিত দর্শকনন্দিত টেলিভিশন কাহিনীচিত্রের মাঝে রয়েছে নাল পিরান, করিমন বেওয়া, প্রত্যাবর্তন, সাঁকো, প্রতি চুনিয়া, চড়ুইভাতি, মেগা সিরিয়াল ৫১বর্তী প্রভৃতি।

সিনেমা

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ব্যাচেলর এবং মেড ইন বাংলাদেশ সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন আনিসুল হক। এছাড়া তিনি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, টেলিভিশন সিনেমারও স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। বৃত্তের বাইরেস্বপ্নডানায় চলচ্চিত্রে কাহিনী বিন্যাসের কাজ করেন।

পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ টিভি নাট্যকার হিসেবে পুরস্কার, টেনাশিনাস পদকসহ বেশ কয়েকটা পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স ক্লাব পদক, কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন পুরস্কার। ২০১২ সালে কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান।[7] ২০১৯ সালে প্রবন্ধ শাখায় ‘প্রথমা’ থেকে প্রকাশিত সফল যদি হতে চাও-এর জন্য পাঞ্জেরী ছোটকাকু আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।[8]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "ওয়ালটিক ডট কম"। ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮
  2. "লাইভমিন্ট ডট কম"। ১ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  3. দ্য হিন্দু
  4. পড়ুয়া ওয়েবসাইটে আনিসুল হক
  5. "ইউএস অ্যাম্বেসী"। ২৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮
  6. ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম
  7. "বাংলা একাডেমী পুরস্কার ঘোষণা-প্রথম আলো"। ২০১৭-০৯-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩
  8. "পুরস্কার পেলেন পাঁচ বরেণ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান"দৈনিক প্রথম আলো। ২৪ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.