আট-আনী জমিদার বাড়ি

আট-আনী জমিদার বাড়ি বা মুক্তাগাছার রাজবাড়ী বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ী।[1] ময়মনসিংহ থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়মনসিংহ টাঙ্গাইলময়মনসিংহ জামালপুর মহাসড়কের সংযোগ স্থল থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বদিকে মুক্তাগাছার রাজবাড়ির অবস্থান। মুক্তাগাছার তদানীন্তন জমিদার ব্রিটিশ রাজন্য কর্তৃক প্রথমে রাজা এবং পরে মহারাজা উপাধি পেয়েছিলেন বিধায় জমিদারের বাসভবন রাজবাড়ী হিসেবে আখ্যায়িত হতো।

আট-আনী জমিদার বাড়ি
মুক্তাগাছার রাজবাড়ি
অবস্থানমুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ
সম্পূর্ণতা তারিখ১২ শতক

ইতিহাস

জমিদার আচার্য চৌধুরী বংশ মুক্তাগাছা শহরের গোড়াপত্তন করেন। আচার্য চৌধুরী বংশ শহরের গোড়াপত্তন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। আচার্য চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবাবের খুবই আস্থাভাজন। নবাবের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১১৩২ সালে তিনি সেই সময়ের আলাপসিং পরগণার বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানে মুক্তাগাছা শহরসহ মুক্তাগাছা উপজেলার বেশিরভাগই ছিল তৎকালীন আলাপসিং পরগণার অন্তর্ভুক্ত।

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নানা কারণে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর চার ছেলে বগুড়া থেকে আলাপসিং-এ এসে বসবাসের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর এই চার ছেলে হচ্ছে রামরাম, হররাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম। বসতি স্থাপনের আগে তারা এ পরগণার বিভিন্ন স্থান ঘুরে ফিরে দেখেন এবং বর্তমান মুক্তাগাছা এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য মনস্থির করেন। সে সময়ে আলাপসিং পরগণায় খুব একটা জনবসতি ছিলনা। চারদিকে ছিলো অরণ্য আর জলাভূমি। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্যের চার ছেলে ব্রহ্মপূত্র নদের শাখা নদী আয়মানের তীরবর্তী স্থানে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন।[2]

মুক্তাগাছার জমিদারদের একজন হরেরাম । এই হরেরামের বাড়িটি হচ্ছে বর্তমানে রাজবাড়ী। মুক্তাগাছার জমিদারীরর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর মেজো ছেলে। এ বংশের জমিদার আটানি বাড়ির জমিদার বলে পরিচিত। আটানির জগৎ কিশোর আচার্য চৌধুরীরর সুনাম ছিল। জগৎ কিশোরের ৪ পুত্র জীতেন্দ্র, বীরেন্দ্র, নৃসিংহ ও ভূপেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী। জীতেন্দ্র কিশোরের পুত্র হচ্ছেন জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী (জীবন বাবু)। জন্ম ১২ অক্টোবর ১৯০৩ মৃত্যু ১লা ডিসেম্বর ১৯৯২ ইং।

স্থাপত্য

প্রবেশদ্বারের ভিতরের দিকের অংশ

মুক্তাগাছার জমিদারির মোট অংশ ১৬টি। ১৬ জন জমিদার এখানে শাসন করতেন। মুক্তাগাছা রাজবাড়িটির প্রবেশমুখে রয়েছে বিশাল ফটক। প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়িটি প্রাচীন স্থাপনাশৈলীর অনন্য নিদর্শন।

ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ

“রঙ্গপীঠ” - ঘূর্ণায়মান মঞ্চ (নতুন সংস্কার হয়েছে)

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নাটকের ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিমল এক সময় ছিল অত্যন্ত বৈচিত্রপূর্ণ। নাটক, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতিতে ছিল মুক্তাগাছার জমিদারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আর নাটক আরও জনপ্রিয় করেছে এই ঘূর্ণায়মান মঞ্চ। জমিদার জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরীর ছেলে কুমার ভূপেন্দ্র কিশোর ছিলেন নাটকপ্রিয়। ভূপেন্দ্র কিশোরের নামানুসারেই ভূপেন্দ্র রঙ্গপীঠ নামে মঞ্চটি তৈরি করা হয়। এটি ছিল কলকাতার বাইরে এশিয়ায় প্রথম এ ধরনের মঞ্চ।

উনবিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকেই যে মুক্তাগাছায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছিল, এটা তারই প্রমাণ। মঞ্চের দুই পাশে ছিল হারমোনিয়াম ও তবলাবাদকের জন্য আলাদা আলাদা দুইটি স্থান। দক্ষিণ দিকে শিল্পিদের বিশ্রামগৃহ, পেছনে গ্রিনরুম। গ্রিনরুমের পাশেই ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ, যাতে ছিল লোহার তৈরি ছোট ছোট সিন্ধুক। জমিদাররা শিল্পিদের নিয়ে আসতেন সুদূর কলকাতা থেকে। পুরো শীতকাল ধরে এখানে বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হতো।

ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চে আগত শিল্পীবৃন্দ

শিল্প-সাহিত্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি সেবায় মুক্তাগাছার রয়েছে বর্ণাঢ্য অতীত। রাজা জগৎকিশোরের বাড়িতে কখনো কালের সাক্ষী নাট্য মন্দিরটিকে দেখতে পাওয়া যায় যেখানে উদয় কুমার, কাননবালা, নানু সাহাইয়া, সরোদী আহম্মদ আলী খান, রাজপুরাতন বিখ্যাত নৃত্য শিল্পী মোহন প্রসাদ প্রমুখ বহু বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন শিল্প ধ্যানে।

গুনিজন যারা এসেছিলেন

ইতিহাসবিদ কেদার নাথ মজুমদার, কবি দিনেশ চরণ বসু, শ্রীশ চন্দ্র গুহ, শ্রী নাথ চন্দ্র, রুক্মিনী কান্ত ঠাকুর প্রমুখের সাথে মুক্তাগাছার নিবিড় যোগাযোগ ছিল। মহাশ্মশান খ্যাত কবি কায়কোবাদ মুক্তাগাছা পোষ্ট অফিসে চাকরি কালীন সময়ে রচনা করেছিলেন অনেক কাব্যগ্রন্থ। বাংলা ১৩১৬ সালে গবেষক যোগেন্দ্র প্রসাদ দত্ত রচনা করেছিলেন জীবনীগ্রন্থ রাজা জগৎকিশোর।

চিত্রশালা

আরও পড়ুন

তথ্যসূত্র

  1. "ময়মনসিংহ বিভাগের পুরাকীর্তি"বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। www.archaeology.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১৪-০১-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.