আজিরিয়া মাদ্রাসা
আজিরিয়া আলিয়া ফাজিল মাদ্রাসা হল একটি আলিয়া মাদ্রাসা যা বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ীতে অবস্থিত।[1][2] ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে, শাহ আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীর শাগরেদ আল্লামা মহম্মদ আজিরউদ্দীন আহমদ চৌধুরী তার পূর্বপুরুষের সম্পদ ব্যবহার করে এর পুনঃঅনুদান প্রদান করে এটিকে একটি আলিয়া মাদ্রাসায় রূপান্তরিত করেন, যা কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শৈলীর সাথে সম্পর্কিত। বর্তমানে মাদ্রাসাটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত একটি ফাজিল মাদ্রাসা।
আজিরিয়া আলিয়া মাদরাসা | |
---|---|
অবস্থান | |
বাংলাদেশ | |
তথ্য | |
ধরন | মাদ্রাসা |
ধর্মীয় অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৬০ | -এর আগে
প্রতিষ্ঠাতা | মীর হাজারা |
বিদ্যালয় বোর্ড | বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড |
ভাষা | বাংলা, আরবি |
ইতিহাস
মুঘল রাষ্ট্রনায়ক ও জমিদার মীর হাজারার বংশধরেরা ফুলবাড়ীতে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[3] তার বংশধরদের মধ্যে ছিলেন ১৯ শতাব্দীর সুফি পীর শাহ আব্দুল ওহাব চৌধুরী, যিনি মাদ্রাসাটির বর্তমান রূপে রূপান্তরিত হওয়ার ঠিক আগেই এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার সুফি পটভূমি মাদ্রাসাটিকে সিলেটি নাগরি লিপিতে সাহিত্য রচনার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত করেছিল। চৌধুরীর সময় বিশিষ্ট ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন সুফি শায়েরদ্বয় শিতালং শাহ ও ইবরাহীম আলী তশনা।[3] ১৮৬০ সাল থেকে এটি আজিরিয়া আলিয়া মাদ্রাসা নামে পরিচিতি পায়।[4] আল্লামা আজিরউদ্দীন দুটি ফার্সি বই, গুলদস্তা-ই-আকায়েদ ও আকায়েদ-ই-আজিরিয়া, লিখেছিলেন।[5] বিংশ শতাব্দীতে সুফি হাবিবুর রহমান চৌধুরী মাদ্রাসার মুহতামিম হন।[6] তার ছেলে, মজদউদ্দীন চৌধুরী, একজন বিশিষ্ট চা পথিকৃৎ ও মুরারিচাঁদ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি মহিউস সুন্নাহ চৌধুরীর বাবাও ছিলেন, যিনি আজিরিয়া মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন।[7]
মাদ্রাসাটি পাকিস্তান আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়, যার মূল কর্মকান্ডের সাথে জড়িত প্রাক্তন শাগরেদ আব্দুল মোসব্বির গহরপুরী (সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা) ও সৈয়দ নজীরউদ্দীন আহমদ বালিকান্দী।[8] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শাগরেদদের মধ্যে রয়েছে ইব্রাহীম চতুলী ও ইসমাঈল আলম।[3]
২০০৬ সালে মাদ্রাসাটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অধিভুক্তি লাভ করে, পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
সাবেক শাগরেদ
- শিতালং শাহ (১৮০৬–১৮৯৯), মরমী সুফী সাধক
- ইসমাঈল আলম (১৮৬৮–১৯৩৭), কবি ও খেলাফৎ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী
- ইবরাহীম আলী তশনা (১৮৭২–১৯৩১), আলেম, কবি ও খেলাফৎ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী
- ইব্রাহীম চতুলী (১৮৯৪–১৯৮৪), আসাম প্রদেশের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী
- রেয়াসত আলী (১৯০৩–?), রানাপিং মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম
- হোসেন আহমদ কাজীপুরী (১৯১৫-?), সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার অন্যতম ওস্তাদ
- সৈয়দ নজীরউদ্দীন আহমদ, পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী
- আব্দুল মোসব্বির গহরপুরী, সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্রসমিতির প্রতিষ্ঠাতা
আরও পড়ুন
- আব্দুল মতিন ফুলবাড়ী
- Choudhury, Mustansirur Rahman। আঞ্চলিক ইতিহাস: ফুলবাড়ী আজিরিয়া আলিয়া মাদ্রাসা।
- Choudhury, Mustansirur Rahman; ফখরুল ইসলাম চৌধুরী (১৯৯২)। ফুলবাড়ী, ইতিহাস খ্যাত একটি গ্রাম।
তথ্যসূত্র
- রসময় মোহান্ত (১৯৯০)। সিলেট অঞ্চলের শিক্ষাঙ্গন: অতীত ও বর্তমান। সরস্বতী মোহান্ত। পৃষ্ঠা 3।
- The Muslim Year Book of India and Who's who: With Complete Information on Pakistan, 1948-49। Bombay Newspaper Company। ১৯৪৮। পৃষ্ঠা ২৪৭।
- ফজলুর রহমান (১৯৯১)। "ফুলবাড়ী আজিরিয়া মাদ্রাসা"। সিলেটের মাটি, সিলেটের মানুষ। পৃষ্ঠা ১৫১।
- খাতুন চৌধুরী, রাবেয়া (১৯৯৩)। সিলেটের কাব্য সাধনা। পৃষ্ঠা 101।
- Sylhet: History and Heritage। বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি। ১৯৯৯। পৃষ্ঠা 610।
- Biographical Encyclopedia of Pakistan। Biographical Research Institute। ১৯৬০। পৃষ্ঠা 375-376।
- ইকবাল সিদ্দীকী (৭ নভেম্বর ২০০৯)। "Remembering Mohius Sunnah Chowdhury"। দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)।
- Choudhury ().