আগ্নেয়গিরি

আগ্নেয়গিরি হলো বিশেষ ধরনের পাহাড় যার ভেতর দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত ও গলিত পাথর, ছাই এবং গ্যাস বেরিয়ে আসতে পারে। এটি একটি ভৌগোলিক প্রক্রিয়া। কোনো কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূগর্ভস্থ গরম বাতাস, জলীয় বাষ্প, গলিত শিলা, কাদা, ছাই, গ্যাস প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। নির্গত এই সকল পদার্থ ভূপৃষ্ঠের শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে দ্রুত ঠান্ডা হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে যার কিছুটা ফাটলের চারপাশে এসে ধীরে ধীরে জমা হয়ে মোচাকৃতি আকার ধারণ করে। তখন একে "আগ্নেয়গিরি" বলে। আগ্নেয়গিরি থেকে ভূগর্ভস্থ পদার্থের নির্গমনকে বলা হয় অগ্ন্যুৎপাত। আগ্নেয়গিরির বহিঃস্থ যে মুখ বা নির্গমনপথ দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, তাকে জ্বালামুখ বলে। প্রতি বছর প্রায় ৬০টি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটে।[1]

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় অর্ধ সহস্র সক্রিয় বা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আছে। যেসমস্ত আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের কোনও সম্ভাবনা নেই, তাদেরকে মৃত বা নির্বাপিত আগ্নেয়গিরি বলে। এছাড়াও বর্তমানে সক্রিয় নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে অগ্ন্যুদ্গী‌রণ করতে পারে, এমন আগ্নেয়গিরিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে।

ভূত্বকে ফাটল দেখা দিলে, ভূত্বকের কোনও দুর্বল ছিদ্রপথ থাকলে, কিংবা ভূগর্ভের তরল শিলা ও চাপ বৃদ্ধি পেলে অগ্ন্যুৎপাত হতে পারে। অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আকাশে ছাই ও বায়বীয় পদার্থের মেঘ তৈরি হতে পারে। সমুদ্রের মাঝেও আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হতে পারে। ভূ অভ্যন্তরে সঞ্চিত তরল শিলাকে বলে ম্যাগমা, আর যে তরল শিলা ভূ পৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে তাকে বলে লাভা।

আগ্নেয়গিরির শ্রেণীবিভাগ

উদ্গীরণ ক্ৰিয়ার ওপর নিৰ্ভর করে আগ্নেয়গিরিকে প্ৰধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়-

১। জাগ্ৰত (Active)- যেসব আগ্নেয়গিরির মুখে সদায় নিয়মিত ভাবে ধোঁয়া,ছাই,গলিত লাভা, গ্যাস থাকে,সেসকল আগ্নেয়গিরিকে জাগ্ৰত আগ্নেয়গিরি বলে৷ যেমন -ছিছিলব মাউণ্ট এটনা ৷ জাগ্ৰত আগ্নেয়গিরিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা -

i)সবিরাম ও ii)অবিরাম আগ্নেয়গিরি৷

যেসকল জাগ্ৰত আগ্নেয়গিরিতে অবিরামভাবে লাভা নিৰ্গত হয়ে থাকে তাকে অবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন- হাওয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া।

যেসকল আগ্নেয়গিরি থেকে একটা নিৰ্দিষ্ট সময়ের অন্তরালে ধোঁয়া,ছাই, গ্যাস বের হয়ে আসে সেসকল আগ্নেয়গিরিকে সবিরাম আগ্নেয়গিরি বলা হয়৷ ইটালীর ষ্ট্ৰম্বলী আগ্নেয়গিরি এ ধরনের আগ্নেয়গিরি ৷

২। সুপ্ত (Dorment) - যেসকল আগ্নেয়গিরির আগে উদগীরণ হয়েছিল,কিন্তু বৰ্তমানে সক্ৰিয় অবস্থায় নেই ,কিন্তু যেকোন সময় উদ্গীরণ হবার সম্ভাবনা আছে,সেসব আগ্নেয়গিরিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে৷ যেমন - জাপানের ফুজি পর্বত

৩। লুপ্ত (Extinct)- যেসসব আগ্নেয়গিরি কোন এক সময় জাগ্ৰত ছিল কিন্তু আগামীতে বা ভবিষ্যতে এর অগ্ন্যুৎপাত হবার কোনো সম্ভাবনা নাই,সেসকল আগ্নেয়গিরিকে লুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলা হয়৷ যেমন - আফ্ৰিকার কিলিমাঞ্জারো ৷ কখনো কখনো লুপ্ত ও সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখে জল জমা হয়ে একটা হ্ৰদের সৃষ্টি হয়৷ একে ধরনের হ্ৰদকে আগ্নেয়গিরি হ্ৰদ বলে৷

আগ্নেয়গিরি উৎপত্তির কারণ

আগ্নেয়গিরির উৎপত্তির কারণ এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় আছে যদিও ভূমিকম্পে দেবে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হবার মূল কারণ হল -

  • ভূ-পৃষ্ঠের যতই অভ্যন্তর ভাগে যাওয়া যায় উত্তাপের মাত্ৰা বেড়ে যায়৷ যদিও ভূগৰ্ভের উপাদানসমূহ গলিত অবস্থায় আছে৷ কিন্তু পৃথিবীর উপরিভাগের শিলাস্তরসমূহের প্ৰচণ্ড চাপে এই উপাদানসমূহ গলিত হলেও স্থিতিশীল অবস্থাতে আছে৷ কোন কারণে এই চাপের পরিমাণ কমে গলে পৃথিবীর অভ্যন্তরের পদাৰ্থসমূহের স্থিতিস্থাপক অবস্থার পরিবৰ্তন হতে পারে৷ এর ফলে এই পদাৰ্থের ঐ তরল পরে কোনো ভঙ্গুর স্থান,ভিতর বা কোনো দুৰ্বল স্তরের মাঝে বাহির হয়ে আসলে আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় ৷
  • আগ্নেয়গিরির উৎপত্তির আরো একটা কারণ হচ্ছে ভূগৰ্ভত থাকা জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য বাষ্পের প্ৰচণ্ড চাপ৷ পৃথিবীর কোনো ভিতরের বা মাঝের ভূগৰ্ভতলে পানীসমূহ গলে ভূগৰ্ভের উত্তাপে সেই পানি বাষ্পে পরিণত হয় ও আয়তন বাড়ে৷ এভাবে আয়তন বাড়ার ফলে অভ্যন্তর ভাগে প্ৰচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়৷ ফলে গলিত পদাৰ্থসমূহের জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য বাষ্প চাপের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উপরের উঠে আসে ৷
  • তেজষ্ক্ৰিয় উপাদান যেমন - রেডিয়াম,ইউরেনিয়াম এদের অবিরাম তাপ বিকিরণের ফলে ভূগৰ্ভের উত্তাপ বাড়ে ও ইহার বিভিন্ন উপাদানসমূহ তরল হলে আয়তন বাড়ে৷ তার ফলে কোনো সুড়ঙ্গ বা ফাঁটল দিয়ে এই উত্তপ্ত পদাৰ্থসমূহ উপরে উঠে আসলে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করতে পারে৷
  • ভূগৰ্ভের কোথাও কিংবা রাসায়নিক কারণে বাষ্পের সৃষ্টি হলে সেই বাষ্প পৃথিবীর উপরি ভাগের দুৰ্বল অংশের চাপের কারণে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করতে পারে৷

জীবন্ত আগ্নেয়গিরির নাম কি কি

  • ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি - সর্বশেষ অগ্নুৎপাত ১৯৪৪ সালে;
  • জাপানের সাকুরাজিমা আগ্নেয়গিরি- ছয় বছর ধরে নিয়মিত অগ্ন্যুৎপাত ঘটছে;
  • কঙ্গোর নিইরাগঙ্গো আগ্নেয়গিরি- ২০০২ সালে শেষ অগ্নুৎপাত ঘটে;
  • হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মউনা লোওয়া আগ্নেয়গিরি - এটি থেকে প্রায় সারা বছরই লাভার উদগীরণ হয়;
  • গুয়াতেমালার সান্তা মারিয়া আগ্নেয়গিরি - ১৯০২ সালে সর্বশেষ অগ্নুৎপাত হয়;[2]
  • ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট সিনাবুং আগ্নেয়গিরি - ২০২১ সালের মার্চ মাসে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে; যদিও পূর্বাভাস থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নগন্য।
  • গুয়াতেমালার ফুয়েগো আগ্নেয়গিরি - ২০১৮ সালের জুন মাসে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে;

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.