আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথ

চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে একটি রেলপথ সংযোগের জন্য আসামের চা উৎপাদনকারীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৯১ সালে বঙ্গের পূর্বাঞ্চলে একটি রেলওয়ে ট্রাক নির্মাণ শুরু করে। চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা)-এর একটি পথ ১৮৯৫ সালে চালু করা হয়।

১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়।[1]

কুমিল্লা–আখাউড়া–শাহবাজপুর রেলপথ অংশ ১৮৯৬–৯৮-এ চালু করা হয় এবং ১৯০৩ সালে লামডিং পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়।[1][2][3]

কুলাউড়া–শাহবাজপুর ১৮৮৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন চালু হয়েছিল।[4] ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়। কুলাউড়া–শাহবাজপুর রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার।[5] অথবা, রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার।[4] কুলাউড়া–শাহবাজপুর রেলপথে মোট ৭টি স্টেশন রয়েছে (কুলাউড়া জংশন বাদে), এর মধ্যে জুড়ী, ধামাই, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা ও মুড়াউল রেলওয়ে স্টেশন অন্তর্ভুক্ত।[5] এখানে উল্লেখ্য যে, পূর্বে শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের সাথে ভারতের মহিশাষণ রেলওয়ে স্টেশনের সংযোগ ছিল।[6] বড়লেখা উপজেলার লাতু সীমান্ত দিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন হয়ে আসাম রেলওয়ের ট্রেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসা-যাওয়া করত।[4] কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনে চলাচলকারী ট্রেনটি এলাকাবাসীর কাছে 'লাতুর ট্রেন' নামে পরিচিত ছিল।[4] ১৯৮৮ সালে রেলপথটি ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়।[5] এর ১৪ বছর পর রেললাইনটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় তা সংস্কার না করেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালের ৭ জুলাই লাইনটি বন্ধ করে দেয়।[4][5] এতে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়েন। এরপর লাইনটি চালু করার জন্য আন্দোলন করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বাসিন্দারা।[4] এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়।[4] প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারতের 'বালাজি রেল রোড সিস্টেমস'।[4] কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে সাতটি স্টেশনের চারটি বি ও দুটি ডি শ্রেণির হবে।[4]

দীর্ঘ ১৬ বছর বন্ধ থাকা কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল যোগাযোগ ফের শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[7] ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রেললাইনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।[7] এতে ব্যয় হবে ৫৫৫ কোটি টাকা।[7] ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কলকাতার কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানি এ রেললাইনের নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি পেয়েছে।[7] ব্রডগেজ এই রেললাইনটি চালু হলে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত পাঁচটি ট্রেন চলাচল করবে।[7] লোকাল ট্রেন ছাড়াও আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে।[7] সেইসঙ্গে ভারতের মহীশাসন, করিমগঞ্জ, বদরপুর ও আসামের সঙ্গে রেল যোগাযোগের পথ সুগম হবে।[7] ব্রিটিশ আমলের আসাম-বেঙ্গল রেল যোগাযোগ নতুন আঙ্গিকে পুনঃস্থাপন হবে।[7] এতে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান সহজলভ্য হবে।[7] কম খরচে বাংলাদেশ-ভারতে মালপত্র পরিবহন সম্ভব হবে।[7]

কুলাউড়া–সিলেট রেলপথ অংশটি ১৯১২–১৫ সালে উদ্বোধন করা হয়।[8]

হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি ১৯২৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক [8] হবিগঞ্জ জেলা সদর শহর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫[9] অথবা ৫২ কিলোমিটার[10] দীর্ঘ রেলপথ চালু করে।[9][11] এর মধ্যে ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ (১৫[9] অথবা ১৬ কিমি[10]) এবং ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা (৩০[10] অথবা ৩৬ কিমি[9]) রেলপথ উদ্বোধন করা হয়। শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ লাইনের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে হবিগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয় এবং শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা লাইনের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে বাল্লা রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।

সে সময় হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা পাতা রপ্তানি ও বাগানের রেশনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথে মোট ৪টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: হবিগঞ্জ বাজার, হবিগঞ্জ কোর্ট, ধুলিয়াখাল এবং পাইকপাড়া। শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে মোট ৭টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: বারকোটা, শাকির মোহাম্মদ, সুতাং বাজার, চুনারুঘাট, আমু রোড, আসামপারা এবং বাল্লা।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের প্রথম দিকে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি সর্বপ্রথম বন্ধ হয়, তবে পরে আবার চালু হয়। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে অনুরূপ বন্ধ হয় এবং ২০০০ সালে রেলপথটি উন্নত সংস্কার করে ট্রেন চলাচল চালু হয়েও সর্বশেষ ২০০৩ সালে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়।[10] ২০০৫ সালের দিকে সড়ক করার অজুহাতে হবিগঞ্জ বাজার থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেলপথ তুলে ফেলা হয়।[9] পরে আবার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়।[10] আগে এ লাইনে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করতো।

২০০৩ সালে এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এ রেলপথটি।[9] এরপর থেকে কোটি কোটি টাকার রেল সম্পদ লুটপাট হতে থাকে।[9] এরই মধ্যে পথটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও স্টেশন ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট হয়ে গেছে।[9] এখন চলছে রেলপথের জমি দখল।[9] একশ্রেণির মানুষ এসব জমি দখল করে ইমারত নির্মাণ করছে।[9] চাষ করছে নানা ফসল।[9] পরিত্যক্ত রেলপথটির সাথে জড়িয়ে আছে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের নাম।[10] জশংনের ঐতিহ্য রক্ষায় দ্রুত এ রেলপথে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবি স্থানীয়দের।[10]

সিলেট–ছাতক বাজার রেলপথ ১৯৫৪ সালে প্রবর্তন করা হয়।[12]

আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথ মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এর রেলপথ। এই রেলপথে তিনটি প্রধান রেলওয়ে জংশন স্টেশন এবং একটি বিভাগীয় মেট্রোপলিটন প্রধান রেলওয়ে স্টেশন সহ মোট ৫৬টি রেল স্টেশন (৩৮টি সক্রিয়, ১৮টি নিষ্ক্রিয়) রয়েছে। যেমন:

ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন। এটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন।[13]

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের সিলেট জেলার সিলেট সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি রেলওয়ে স্টেশন। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। এই স্টেশন থেকে দুই দিকে রেলপথ গিয়েছে, যথা: উত্তর-পশ্চিমে সিলেট–ছাতক রেলপথ এবং দক্ষিণ-পূর্বে সিলেট–কুলাউড়া রেলপথ। সিলেট–কুলাউড়া রেলপথটি কুলাউড়া–শায়েস্তাগঞ্জ–আখাউড়া রেলপথ এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা উভয় দিক থেকেই সিলেট রেলওয়ে স্টেশন মিটার গেজ রেলপথের সাথে সংযুক্ত।

আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর হচ্ছে।[14] ২৩৯ কিলোমিটারের এ রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। চীন সরকার এ প্রকল্পে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে। সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে পাঁচ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।[14] বর্তমানে আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেললাইন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা না হলে ঢাকা থেকে সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের মধ্যে রেল যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হবে। ট্র্যাক কাঠামো, পাহাড়ি এলাকার আঁকাবাঁকা রেলপথ এবং পরিচালনা জটিলতার কারণে এ পথে বর্তমানে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে রেল চলাচল করে। ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা গেলে ব্রডগেজে ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটারগেজে গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এতে ঢাকা থেকে সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পৌঁছানোর সময় আড়াই ঘণ্টা কমে যাবে।[14]

এ ছাড়া এর মাধ্যমে আসামের সঙ্গে রেল যোগাযোগের সুযোগও তৈরি হবে। এখন এ রুটে চলছে ১৩ জোড়া ট্রেন। প্রকল্প শেষ হলে ট্রেন চলবে ২৬ জোড়া, যা আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।[14]

বাংলাদেশ রেলওয়ের সব মিটারগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজ বা ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে।[14] প্রকল্পটি বাস্তবায়নে  চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে।[14] এরপর প্রকল্পের প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) তৈরি করা হয়, যা ২০১৬ সালের ২১ মার্চ অনুমোদিত হয়।[14] পরে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প বিবেচনা করে এটি সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়।[14] জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।[14] ঢাকায় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।[14]

কুলাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের একটি জংশন রেলওয়ে স্টেশন যা মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে পাঁচটি জংশন ছিল, তার মধ্যে অন্যতম জংশন এটি। কুলাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। এই স্টেশন থেকে তিনটি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: উত্তর-পশ্চিমে কুলাউড়া–সিলেট রেলপথ, দক্ষিণ-পশ্চিমে কুলাউড়া–শায়েস্তাগঞ্জ রেলপথ, এবং উত্তর-পূর্বে কুলাউড়া–শাহবাজপুর রেলপথ।

ব্রিটিশ আমলে আসাম ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে ১৮৯৮ সালে প্রথম করিমগঞ্জ থেকে শাহবাজপুর ও কুলাউড়া এবং আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়।[14] শাহবাজপুর থেকে কুলাউড়া হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত রেলপথ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি সাব-রুট।[14] ভারতের করিমগঞ্জ জেলার মহীশ্মশান ও বাংলাদেশের শাহবাজপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) আওতায় এ রেলপথ পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।[14]

ব্রিটিশ ভারত সরকার ১৮৯৬ সালে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ করে। এ পথে আসাম থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ট্রেন চলত। ২০০২ সালে রেলপথটি বন্ধ হয়ে যায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।[15]

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশন পুনর্বাসনে ৬৭৮ কোটি টাকায় রেলপথটি আবারও সচল করা হচ্ছে। এতে ভারত ঋণ দিচ্ছে প্রায় ৫৫৬ কোটি টাকা। বাকি ১২২ কোটি টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ। বিদ্যমান মিটারগেজ এমব্যাংকমেন্ট সংস্কারসহ ৫৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। পুরনো সেতু, কালভার্ট এবং স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী দুই বছরে কাজ শেষ হবে।[15]

শায়েস্তাগঞ্জ জংশন রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের একটি জংশন রেলওয়ে স্টেশন যা হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে পাঁচটি জংশন ছিল, তার মধ্যে অন্যতম এটি।[16] ১৯০৩ সালে এটি চালু হয়।[17] পরবর্তীতে ১৯২৮ সালে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ চালু হলে স্টেশনটি জংশন স্টেশনে রুপান্তরিত হয়।[12] শায়েস্তাগঞ্জ জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। এই স্টেশন থেকে চারটি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: পূর্ব-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–কুলাউড়া রেলপথ, পশ্চিম-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ–আখাউড়া রেলপথ, এবং পশ্চিম-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ বাজার[10] রেলপথ, পূর্ব-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ।

আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশন।[18][19] ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়। এসময় কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর লাইনের স্টেশন হিসেবে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইন তৈরি হলে আখাউড়া জংশন স্টেশনে পরিণত হয়। একাধিক রেলপথের সমন্বয় থাকা আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথেরও অন্তর্ভুক্ত। এই স্টেশন থেকে চারটি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: উত্তর-পূর্বে আখাউড়া–শায়েস্তাগঞ্জ–কুলাউড়া রেলপথ, উত্তর-পশ্চিমে আখাউড়া–ভৈরব–টঙ্গী রেলপথ এবং দক্ষিণ-পূর্বে আখাউড়া–আগরতলা (ভারত সংযোগ) রেলপথ ও দক্ষিণে আখাউড়া–লাকসাম–চট্টগ্রাম রেলপথ।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অংশের ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে।[14] আখাউড়া থেকে লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে।[14] ঢাকা-চট্টগ্রামে রেললাইনের বাকি অংশ ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।[14] ভারতীয় অনুদানে আগরতলা ও আখাউড়ার মধ্যে ১০ কিলোমিটার রুটে আরেকটি ডুয়েলগেজ লিংক স্থাপনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।[14] বাংলাদেশ রেলওয়েকে একই গেজের রূপান্তরের অংশ হিসেবে আখাউড়া থেকে সিলেট রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়।[14]

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে।[15] পুনর্বাসন করা হবে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে আখাউড়া সংলগ্ন শাহবাজপুর পর্যন্ত রেলপথ।[15] এই দুই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।[15] দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন।[15] ভারতের ঋণে (এলওসি) প্রকল্প দুটি নির্মিত হচ্ছে।[15] প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।[15]

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন

সিলেট এবং রাজধানী ঢাকার মধ্যে সরাসরি কিছু রেল সেবা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সিলেট–ঢাকা রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেন সুরমা এক্সপ্রেস। এই পথে ওয়ান-ওয়ে ভ্রমণে সাত ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগে।[20] সিলেট থেকে চট্টগ্রামেও এই পথে ট্রেন চলাচল করে,[21] তার মধ্যে রয়েছে সিলেট–চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস,[5]মেইল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস এবং সিলেট–আখাউড়া রেলপথে চলাচলকারী লোকাল ট্রেন কুশিয়ারা এক্সপ্রেস। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সাল থেকে পূর্ববর্তী বিগত বছর গুলোতে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে লোকাল ট্রেন চলাচল করতো, ২০০৩ সালে অঘোষিত ভাবে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সেই লোকাল ট্রেন এখন সিলেট-আখাউড়া রুটে চলে।[10]

সিলেটের নতুন রেলওয়ে স্টেশন ২০০৪ সালে উদ্বোধন করা হয়। এ.কে. রফিক উদ্দিন আহমেদ, এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে প্রকৌশল এবং প্ল্যানিং কনসাল্টেন্ট লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব করেন।[22]

মাধবকুণ্ড দক্ষিণবাগ রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে, যা রিক্সায় চড়ে যাওয়া যায়। সিলেট এবং শ্রীমঙ্গল থেকেও এখানে যাওয়া যায়।[21]

বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তের তামাবিল-ডাউকি স্থল সীমান্ত-ক্রসিং সিলেট থেক ৫৫ কিলোমিটার উত্তরদিকে অবস্থিত।[21]