আইসিসি পুরুষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি

আইসিসি পুরুষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (ইংরেজি: ICC Men's Champions Trophy) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি কর্তৃক পরিচালিত একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতাবিশেষ। মর্যাদার দিক থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অবস্থান বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর। ১৯৯৮ সালে আইসিসি নক-আউট প্রতিযোগিতা নামে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজিত চূড়ান্ত খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাভূত করে শিরোপা লাভ করে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল হচ্ছে পাকিস্তান

আইসিসি পুরুষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
প্রতিযোগিতার লোগো
ব্যবস্থাপকআন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল
খেলার ধরনএকদিনের আন্তর্জাতিক
প্রথম টুর্নামেন্ট১৯৯৮  বাংলাদেশ
শেষ টুর্নামেন্ট২০১৭  ইংল্যান্ড এবং  ওয়েলস
পরবর্তী টুর্নামেন্ট২০২৫  পাকিস্তান
প্রতিযোগিতার ধরনরাউন্ড রবিন (বর্তমান)
নক-আউট (পূর্ববর্তী)
দলের সংখ্যা১৩ (সব টুর্নামেন্ট)
(বর্তমান)
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান (১ম শিরোপা)
সর্বাধিক সফল ভারত,  অস্ট্রেলিয়া (প্রত্যেকেই দুইবার শিরোপা)
সর্বাধিক রানক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিস গেইল (৭৯১)
সর্বাধিক উইকেটনিউজিল্যান্ড কাইল মিলস (২৮)
ওয়েবসাইটঅফিসিয়াল ওয়েবসাইট

গঠন প্রক্রিয়া

সাধারণত প্রতি দুই বছর অন্তর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ১৯৯৮ সালে আইসিসি নক-আউট প্রতিযোগিতা নামে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত হয়। ২০০২ সালে আইসিসি নক-আউট ট্রফি'র নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নামে পরিচিতি ঘটানো হয়। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডওয়েলসে যৌথভাবে আয়োজিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ৭ম আসরটিই হবে সর্বশেষ প্রতিযোগিতা হিসেবে আইসিসি ঘোষণা করে।[1] এর পরিবর্তে ২০১৭ সাল থেকে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[2] কিন্তু, জানুয়ারি, ২০১৪ সালে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। আইসিসি নিশ্চিত করে যে, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রস্তাবিত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ বাতিল করে অনুষ্ঠিত হবে।[3]

বিভিন্ন সময়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ভিন্নরূপ ছিল। সাধারণতঃ আইসিসি'র সদস্যভূক্ত দেশসমূহ এতে অংশ নিয়ে থাকে। ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সদস্য দেশও অংশ নিয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকে কেবলমাত্র ওডিআই র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় ৮টি দলকে প্রতিযোগিতার ছয়মাস পূর্বে নির্ধারণ করা হয়।

ফলাফল

১৯৯৮ ও ২০০০ সালের প্রথম দুইটি প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে বাংলাদেশকেনিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল - স্বাগতিক দেশসমূহে ক্রিকেট খেলার প্রসারণ ঘটানো।

১৯৯৮ আইসিসি নক-আউট প্রতিযোগিতা

১৯৯৮ আইসিসি নক-আউট ট্রফির সকল খেলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড বনাম জিম্বাবুয়ের মধ্যকার প্রাথমিক পর্বের খেলার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘটে। এতে বিজয়ী দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। চূড়ান্ত খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকা দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাভূত করে শিরোপা লাভ করে।

২০০০ আইসিসি নক-আউট প্রতিযোগিতা

২০০০ সালের প্রতিযোগিতার সবগুলো খেলাই কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তোরণের জন্য কেনিয়া, ভারত; শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ; বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে তিনটি যোগ্যতা নির্ধারণী খেলা হয়। চূড়ান্ত খেলায় ভারতকে পরাজিত করে নিউজিল্যান্ড শিরোপা লাভ করে। উল্লেখ্য যে, অদ্যাবধি আইসিসি কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের এটিই একমাত্র সাফল্যগাঁথা।

২০০২ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

২০০২ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হয়। নেদারল্যান্ডস এবং কেনিয়াসহ সর্বমোট ১২টি দেশ এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। চূড়ান্ত খেলাটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে দুইবার অনুষ্ঠিত হলেও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। প্রথমে শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভার ব্যাটিং করে ও ভারত ২ ওভার ব্যাটিং করে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য খেলা বিঘ্নিত হয়। পরদিন শ্রীলঙ্কা পুনরায় ৫০ ওভার ব্যাটিং করে ও ভারত ৮ ওভার ব্যাটিং করে। কিন্তু বৃষ্টি আবারো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে আয়োজক কমিটি উভয় দলকে যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। দল দু’টি ১১০ ওভার খেললেও কোন ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়।

২০০৪ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

২০০৪ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। দশটি টেস্টভূক্ত দল, ওডিআই মর্যাদাপ্রাপ্ত কেনিয়াআইসিসি ৬-জাতি চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা বিজয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দল এতে অংশ নেয়। ১২ দলকে ৪ গ্রুপে ভাগ করা হয় ও প্রত্যেক গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দল সেমি-ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১ম সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে এবং স্বল্পরানের খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাকিস্তানকে হারিয়ে চূড়ান্ত খেলায় অংশ নেয়। ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বে শ্বাসরুদ্ধকর খেলায় উইকেট-রক্ষক কোর্টনি ব্রাউন ও ইয়ান ব্রাডশ’য়ের সহায়তায় শিরোপা করে।

২০০৬ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

৫ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে এ প্রতিযোগিতা ভারত অনুষ্ঠিত হয়। ১ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে আইসিসি ওডিআই চ্যাম্পিয়নশীপের শীর্ষস্থানীয় ছয় দল এবং শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার চার টেস্টভূক্ত দল থেকে রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতা-পূর্ব খেলা থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কাকে অন্তর্ভূখ্ত করা হয়।

আট দলকে দুই গ্রুপে বিভক্ত করে রাউন্ড-রবিন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেমি-ফাইনালে হারায়। চূড়ান্ত খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জয় করে।

২০০৯ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (স্থগিত ২০০৮ সালে)

২০০৬ সালে আইসিসি সিদ্ধান্ত নেয় যে, পরবর্তী আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০০৮ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে। ২৪ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে ঘোষণা করা হয় যে, কয়েকটি দেশের নিরাপত্তাজনিত আপত্তির কারণে প্রতিযোগিতাটি স্থগিত করা হয়েছে ও অক্টোবর, ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক সময়সূচী, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উত্তরণের সম্ভাবনার বিষয়টি থাকা স্বত্ত্বেও বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চলে যে, ২০০৯ সালে আদৌ প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে কি-না!

১৬ মার্চ, ২০০৯ তারিখে আইসিসি ২০০৯ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতাটি পাকিস্তান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থানান্তরিত করে। ২ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা স্বাগতিক দেশ হবার বিষয়টি নিশ্চিত করে ও ২৪ সেপ্টেম্বর-৫ অক্টোবর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের সময়সূচী প্রকাশ করে।

২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

ভারত স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২য় বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয়।

২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

পাকিস্তান প্রথম বারের মত ভারতকে ১৮০ রানে বিশাল ব্যাবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৩৩৮ রান করে জবাবে ভারত মাএ ১৫৮ রানে অল অাউট হয়ে যায়।পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১৪ রান করে ম্যান অব দা ম্যাচ হন ফখর জামান।

এক নজরে

সাল স্বাগতিক দেশ বিজয়ী রানার্স আপ ধরন চূড়ান্ত খেলা
১৯৯৮  বাংলাদেশ  দক্ষিণ আফ্রিকা  ওয়েস্ট ইন্ডিজ নক-আউট বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম
২০০০  কেনিয়া  নিউজিল্যান্ড  ভারত নক-আউট নাইরোবি জিমখানা ক্লাব
২০০২  শ্রীলঙ্কা  ভারত/ শ্রীলঙ্কা রাউন্ড-রবিন আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম
২০০৪  ইংল্যান্ড  ওয়েস্ট ইন্ডিজ  ইংল্যান্ড রাউন্ড-রবিন ওভাল
২০০৬  ভারত  অস্ট্রেলিয়া  ওয়েস্ট ইন্ডিজ রাউন্ড-রবিন ব্রাবোর্ন স্টেডিয়াম
২০০৯  দক্ষিণ আফ্রিকা  অস্ট্রেলিয়া  নিউজিল্যান্ড রাউন্ড-রবিন সুপারস্পোর্ট পার্ক
২০১৩  ইংল্যান্ড/ ওয়েলস  ভারত  ইংল্যান্ড রাউন্ড-রবিন এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড‎‎
২০১৭  ইংল্যান্ড/ ওয়েলস  পাকিস্তান  ভারত রাউন্ড-রবিন এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড‎‎
২০২৫  পাকিস্তান
২০২৯  ভারত

রেকর্ডসমূহ

ব্যাটিং

সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী:-[4]

খেলোয়াড়ের নামখেলার সংখ্যাসর্বমোট রানগড়সর্বোচ্চ রান
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিস গেইল১৭৭৯১৫২.৭৩১৩৩*
শ্রীলঙ্কা কুমার সাঙ্গাকারা২২৬৮৩৪১.৪৩১৩৪*
ভারত সৌরভ গাঙ্গুলী১৩৬৬৫৭৩.৮৮১৪১*
দক্ষিণ আফ্রিকা জ্যাক ক্যালিস১৭৬৫৩৪৬.৬৪১১৩
ভারত রাহুল দ্রাবিড়১৯৬২৭৪৮.৭৩৭৬

ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান[5]

খেলোয়াড়ের নামপ্রতিপক্ষসর্বোচ্চ রানবলসাল
নিউজিল্যান্ড নাথান অ্যাসলেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র১৪৫*১৫১২০০৪
জিম্বাবুয়ে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারভারত ভারত১৪৫১৬৪২০০২
ভারত সৌরভ গাঙ্গুলীদক্ষিণ আফ্রিকা দক্ষিণ আফ্রিকা১৪১*১৪২২০০০
ভারত শচীন তেন্ডুলকরঅস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলিয়া১৪১১২৮১৯৯৮
দক্ষিণ আফ্রিকা গ্রেইম স্মিথইংল্যান্ড ইংল্যান্ড১৪১১৩৪২০০৯

বোলিং

সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী[6]

খেলোয়াড়ের নামখেলার সংখ্যাসর্বমোট উইকেটরান
নিউজিল্যান্ড কাইল মিলস১৫২৮৪৮৩
শ্রীলঙ্কা মুত্তিয়া মুরালিধরন১৭২৪৪৮৪
অস্ট্রেলিয়া ব্রেট লি১৬২২৫৯১
অস্ট্রেলিয়া গ্লেন ম্যাকগ্রা১২২১৪১২
শ্রীলঙ্কা লাসিথ মালিঙ্গা১১২১৪৭৩

ইনিংসে সেরা বোলিং[7]

খেলোয়াড়ের নামপ্রতিপক্ষওভারমেইডেনউইকেটরানসাল
শ্রীলঙ্কা ফারভেজ মাহারুফক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ১৪২০০৬
পাকিস্তান শহীদ আফ্রিদিকেনিয়া কেনিয়া১১২০০৪
দক্ষিণ আফ্রিকা মাখায়া এনটিনিপাকিস্তান পাকিস্তান২১২০০৬
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ মারভিন ডিলনবাংলাদেশ বাংলাদেশ১০২৯২০০৪
দক্ষিণ আফ্রিকা জ্যাক ক্যালিসক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ৭.৩৩০১৯৯৮

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.