আইনাম

আইনাম হচ্ছে ভারতীয় অঙ্গরাজ্য আসামের লোকগীতিসমূহের মধ্যে একটি প্রধান ভাগ। আসামের লোকগীতিগুলিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল যথাক্রমে অনুষ্ঠানমূলক, আখ্যানমূলক এবং বিবিধ বিষয়ক। আইনাম, বিয়ানাম, বিহুগীত ইত্যাদিগুলি হচ্ছে অনুষ্ঠানমূলক লোকগীতির অন্তর্গত।[1] আইনাম, সুবচনীর গীত, অপেচরীর গীত, লখিমী সবাহের গীত, গোসাঁনী পূজার গীত ইত্যাদি গানগুলি প্রায় একই পর্যায়ের গান। এই গানগুলি নিরক্ষর লোকজীবনের সম্পদ৷ এর রচয়িতার নাম পাওয়া যায় না। সেজন্য এই গানগুলি লোক সাহিত্যর অন্তর্গত। আসামের নারীদের মধ্যে বিশেষে গ্রাম্য পর্যায়ে এই গানগুলি প্রচলিত। বসন্ত রোগ মানুষের গায়ে দেখা দিলে এই নামগান গাওয়া হয়। বসন্ত রোগ 'সাত জন আই বা দেবীর' কোপদৃষ্টির জন্য হয় বলে আসামের জনমধ্যে যে বিশ্বাস আছে, সেই বিশ্বাসই আইনামের জন্ম দিয়েছে। এই সাতবোনকে সন্তুষ্ট করার জন্যই আইনাম গাওয়া হয়৷ অবশ্য বর্তমান সময়ে এই নামগুলি বিলুপ্তির পথে৷ বয়স অনুক্রমে সারিরিক বিকাশ না ঘটলে বা বিনারোগে শিশু-কিশোর শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে গেলে অপ্সরার দোষ বলে আইরা চাতালের মধ্যে অপ্সরা সবাহ পেতে গান গায়।[2]

সেইমতো সুবচনী দেবীকে অসুখ-অশান্তি নিবারণ করার কারণে গীতের মাধ্যমে স্তুতি প্রার্থনা করা হয়। এই কয়জন উপদেবীকে মহামায়া বা দুর্গার অভিব্যক্তি বলে বিশ্বাস করা হয়। এই অনুষ্ঠানগুলিতে আইদের গাওয়া গীতিগুলিতে নারীসুলভ কমনীয়তা, সরল বিশ্বাস, প্রগাঢ় ভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। দেবীকে মাতাজ্ঞানে, অতি আপনজনের মতো আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে গানগুলির মাধ্যমে আহ্বান করা হয়। ভাষার সরলতা এবং সহানুভূতির আন্তরিকতা এই গানগুলির বিশেষত্ব।

উদাহরণ

আইনামের উদাহরণ:

যেই বস্তু দিওঁ মাতা সেই বস্তু চুবা।
আপনার নামে মাতা আপুনি সন্তোষ হবা।
দুখীয়ার পুতলা আ তুলি দিলে।
আইর মন দয়ালী নাই
আইর নাম শীতলা দুখীয়ার পুতলা
দি যোঁবা বুকু জুরাই।

আই বা শীতলা দেবীর সাত ভাই-বোনের আগমনে ভক্ত বা নামতীদের কল্পনায় প্রকৃতির পরিবর্তন এবং সৌন্দর্য কেমনভাবে পরিস্ফূট হচ্ছে তার উদাহরণ নিচের গীতিটিই তুলে ধরে।[1]

উজাই আহিলে আইর সাতৈ ভনী সাতালি পরবেত জুরি
তরু-তৃণলতা সবে দোঁবাই মাথা আই আহিবরে শুনি।।
সোনারে চকরে, উরে জাকি মারি, রূপরে দুটিি পাখি।
শহর ফুরিব পর্যন্ত আইলোক আসছে জীবদান মাগিছে আমি।।
নাজানি সোমালো, আইর ফুলেবাড়ি, নিচিনি চিঙিলোঁ কলি
ইবারর দোষকে ক্ষমিবা গোসানী মাতা চরণত ধরে।৷
দুখীয়ার ঘর পর্যন্ত আইলোক আসছে, দিব পর্যন্ত নাই যে একো।
মূররে কেশেরে পাব মলচিম, দেহরে পারি দিম সাঁকো।

শেষর সারিটিতে আয়তীদের আত্মসমর্পণের ভাব, ভক্তি সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যে অনুষ্ঠানসমূহকে কেন্দ্র করে এই গানগুলি রচিত হয়েছে সেই অনুষ্ঠানগুলি প্রাচীন হলেও মুখে মুখে এসে গানগুলির ভাষা আধুনিক হয়ে গেছে।[1] আইনামসমূহের মধ্যে পিছলার ঘাট, ফুলবাড়ির দেওঘর ইত্যাদির নাম সর্বদা উল্লেখ পাওয়া যায়৷ পিছলা নদীর পারের কথা দেবীমন্দিরের কথা বেড সাহেবও উল্লেখ করে গিয়েছেন। আসামের উত্তর লখিমপুর-এর এই পিছলা নদী এবং ফুলবাড়ি থানে একসময় আই পূজার কেন্দ্রস্থল ছিল।[3]

তথ্যসূত্র

  1. অসমীয়া সাহিত্যর সমীক্ষাত্মক ইতিবিত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ শর্মা, সোমার প্রকাশ, ২০১৩, পৃষ্ঠা-২১, ২২
  2. শর্মা, অলকেশ (২০১৯)। "বসন্ত রোগর বাবে "আইনাম" প্রথা"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯
  3. অসমীয়া গীতি সাহিত্য, মহেশ্বর নেওগ, চতুর্থ প্রকাশ, ২০০৮, পৃষ্ঠা-১৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.