আইদেউ সন্দিকৈ
আইদেউ সন্দিকৈ (অসমীয়া: আইদেউ সন্দিকৈ; ১৯২০ - ১৭ ডিসেম্বর ২০০২)[1] ছিলেন অসমীয়া চলচ্চিত্রের প্রথম মহিলা অভিনেত্রী। জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা নির্মিত প্রথম অসমীয়া চলচ্চিত্র জয়মতীতে অভিনয় করে তিনি অসমীয়া চলচ্চিত্র জগতের প্রথম মহিলা অভিনেত্রী হওয়ার কৃতিত্ব লাভ করেন।[2] এই চলচ্চিত্রে তার সহ-অভিনেতাকে বঙহরদেউ (স্বামী) বলে সম্বোধন করার জন্য তাকে চিরজীবন অবিবাহিত থাকতে হয়।[3]
আইদেউ সন্দিকৈ | |
---|---|
জন্ম | ১৯২০ চৈত্র মাস পানী-দিহিঙীয়া গাঁও, গোলাঘাট জেলা |
মৃত্যু | ১৭ ডিসেম্বর ২০০২ কমারগাঁও, গোলাঘাট জেলা |
পেশা | অভিনয় |
কর্মজীবন | ১৯৩৩ - |
পিতা-মাতা | নীলাম্বর সন্দিকৈ ও মা-লক্ষ্মী |
জন্ম ও শৈশব
অসমের গোলাঘাট জেলার পানী দিহিঙিয়া গ্রামে আইদেউ সন্দিকৈয়ের জন্ম হয়। তার পিতার নাম নীলাম্বর সন্দিকৈ ও মাতার নাম মা-লক্ষী সন্দিকৈ। আইদেউ সন্দিকৈ নিরক্ষর ছিলেন।
চলচ্চিতে আগমন
১৯৩৩ সনে জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা জয়মতী চলচ্চিত্র নির্মাণের কার্য আরম্ভ করেন। তিনি জয়মতীর চরিত্র অভিনয় করা অভিনেত্রীর খোঁজে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞাপন দিয়েও তিনি অভিনেত্রীর সন্ধান পান নাই। আইদেউ সন্দিকৈয়ের একজন আত্মীয় জ্যোতিপ্রসাদকে তার আলোকচিত্র (ফটো) দেখান। জ্যোতিপ্রসাদ তার আলোকচিত্র দেখে তাকে জয়মতীর চরিত্রে উপযুক্ত হবে বলে বিবেচনা করেন।[4] আত্মীয় ব্যক্তিটি আইদেউ সন্দিকৈকে জাহাজ দেখানোর মিথ্যা ছলনায় তাকে ভোলাগুরি চাহ বাগিচায় অস্থায়ীভাবে নির্মিত জ্যোতি চিত্রবনে নিয়ে আসেন। আইদেউ সন্দিকৈকে দেখে জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা জয়মতী চরিত্রের জন্য তাকে নির্বাচন করেন। প্রথমে আইদেউ সন্দিকৈ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য রাজি ছিলেন না। পিতার সন্মতিক্রমে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা তাকে অভিনয় করার কলা-কৌশল শিখান। তখন তার বয়স ছিল প্রায় সোলো বৎসর।
জয়মতী চলচ্চিত্রের পর
১৯৩৫ সনে জয়মতী চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া হয়। জয়মতী চলচ্চিত্রে ব্যানিজ্যিক লোকসান হয়েছিল। জয়মতী চলচ্চিত্র নির্মাণ কার্য সমাপ্ত হওয়ার পর আইদেউ সন্দিকৈ নিজ গৃহে ফিরে যান। গৃহে আসার পর তাকে ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে সমাজ থেকে বহিস্কার করা হয় কারণ সেই সময়ে অভিনয় করা লজ্জার কাজ হিসাবে গণ্য করা হত। চলচ্চিত্রের অভিনয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সহিত ক্যাম্পে থাকা পাপ কাজ বলে গণ্য করা হত। তদুপরি জয়মতী চলচ্চিত্রে তিনি জয়মতীর গদাপানি (স্বামী) চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পী ফুনু বরুয়াকে বঙহরদেউ (স্বামী) সন্মোধন করা অন্যায়ের কাজ বলে গণ্য করা হয়েছিল। আইদেউ সন্দিকৈয়ের পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরা অঞ্চলের লোকদের থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করায় জনসাধারণ তার পরিবারকে ক্ষমা করেন কিন্তু আইদেউ সন্দিকৈকে ক্ষমা করেনি। আইদেউকে পৃথক একটি গৃহে থাকার জন্য আদেশ করা হয়। তার খাবার জলের পুকুর পৃথক ছিল ও সেই পুকুরের জল অন্য কেউ পান করত না; এমনকি তাকে বিবাহ করার জন্য কেউ সন্মত ছিলনা।[3][5] আইদেউকে সমাজ থেকে তিরস্কার করার কথা জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা জানতেন না। ১৯৮৫ সনে আইদেউ সন্দিকৈ জয়মতী চলচ্চিত্রের কিছু অংশ দেখতে পান। অসম সরকার আয়োজন করা অসমীয়া চলচ্চিত্রের পঞ্চাশ বছরীয় জয়ন্তীতে অসম সরকার আইদেউ সন্দিকৈকে ১,০০০ টাকা পেন্সন প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯১ সালে তার নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
জীবনের শেষ সময়
আইদেউ সন্দিকৈ জীবনের শেষ সময় গোলাঘাটের কমারগাওয়ে কাটিয়েছিলেন। অসম সরকার তার মাসিক পেন্সন ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে ১,৫০০ টাকা করেন। তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছিলে কিন্তু শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য তাকে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। ২০০২ সালের ১৭ ডিসেম্বর আইদেউ সন্দিকৈ মৃত্যুবরণ করেন।
আইদেউ সন্দিকৈ জীবন ভিত্তিক অন্যান্য কর্ম
২০০৭ সনে আইদেউ সন্দিকৈয়ের কাহিনীকে কেন্দ্র করে আইদেউ নামক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। চিত্রণাট্য ও পরিচালনা করেন অরুপ মান্না। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন চন্দনা শর্মা। অসম চলচ্চিত্র উৎসব ২০০৭ সালে এটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ মহিলা অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করে।
তথ্যসূত্র
- Haresh Pandya (২০০৩-০২-১৫)। "Obituary: Aideu Handique | Film"। London: The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৫।
- Tamuli, Babul (2002) geocities.com [ত্রুটি: আর্কাইভের ইউআরএল অজানা] "The making of Joymoti" ([তারিখ অনুপস্থিত] তারিখে আর্কাইভকৃত), The Assam Tribune.
- Sabita Goswami। "The First Lady of Assamese Cinema"। ২০১৩-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৫।
- http://www.theguardian.com/news/2003/feb/15/guardianobituaries.film
- Samudra Gupta Kashyap (অক্টো ৪, ২০০৭)। "Aideu, the story of Assam's first actress"। indianexpress.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৫।