আঁটপুর

আঁটপুর (ইংরেজি: Antpur) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার একটি গ্রাম। এটি তারকেশ্বর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি এখানে অবস্থিত অনবদ্য টেরাকোটা মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।

আঁটপুর
গ্রাম
আঁটপুর পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
আঁটপুর
আঁটপুর
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২.৭৬৬° উত্তর ৮৮.৩৮৩° পূর্ব / 22.766; 88.383
দেশ India
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাহুগলি
ভাষা
  সরকারীবাংলা,
সময় অঞ্চলIST (ইউটিসি+5:30)
PIN৭১২৪৩৪
Telephone code+৯১ ৩২১২২৫

ইতিহাস এবং গুরুত্ব

আঁটপুরের সবথেকে বিখ্যাত মন্দির হল রাধাগোবিন্দজিউ মন্দির। এটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু । বর্ধমান রাজের দেওয়ান কৃষ্ণরাম মিত্র এই মন্দিরটি গঠন করান। মন্দিরটি নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৭০৮ শকাব্দে)। মন্দিরটির গায়ে অসাধারণ টেরাকোটা বা পোড়ামাটির কারুকার্য আছে। মন্দিরের ভিতের ইঁটগুলি গঙ্গামাটি ও গঙ্গাজলে তৈরি। টেরাকোটার বিষয়গুলি নেওয়া হয়েছে ১৮টি পুরান, রামায়ণ, মহাভারত, ভারতের ইতিহাস এবং মন্দির গড়ার সমসাময়িক বিষয় থেকে। মন্দিরটির চণ্ডীমণ্ডপ এবং দোলমঞ্চে কাঠের কারুকার্য আছে।

আঁটপুর রাধাগোবিন্দজিউ মন্দির

এই মন্দিরটি যে সময়ে নির্মিত হয়েছিল সে সময়ে মুসলমান রাজত্ব হ্রাস পাচ্ছিল এবং ইউরোপিয়ানদের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এরকম বলা হয়ে থাকে যে কৃষ্ণরাম মিত্র হিন্দুদের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। এর আগে বিষ্ণুপুরেই টেরাকোটা মন্দিরের সবচেয়ে ভালো উদাহরনগুলি ছিল। কিন্তু এই মন্দির বিষ্ণুপুরের এই গুরুত্ব খর্ব করেছিল।

মন্দিরটির গায়ের টেরাকোটাগুলিতে ভারতের ইতিহাস পুরান এবং সর্বধর্ম সমন্বয়কে সার্থকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে রাধাকৃষ্ণ, দুর্গা ও চণ্ডী, বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের বিভিন্ন দৃশ্যও স্থান পেয়েছে। যুদ্ধের টেরাকোটা ভাস্কর্যগুলিতে অশ্বারোহী, গজারোহী এবং উটারোহী সৈন্যদের দেখা যায়। এছাড়া কামান এবং বন্দুক নিয়ে সৈন্যদের টেরাকোটাও দেখা যায়। হিন্দু পুরান ও ঐতিহাসিক চরিত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন মুসলমান বাদশা, এবং ইউরোপিয়ানদেরও তুলে ধরা হয়েছে টেরাকোটার মাধ্যমে। [1] মন্দিরটি সিল্ক রুটের উপর অবস্থিত হওয়ায় বহু সংস্কৃতির ছাপ এর উপর পড়েছে। রাধাগোবিন্দজিউয়ের মন্দিরটি কালের প্রভাবে বর্তমানে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। তবুও বেশিরভাগ টেরাকোটাই এখনো ভাল অবস্থায় আছে। নিরাপত্তার কারণে বর্তমানে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

আঁটপুর রাধাগোবিন্দজিউ মন্দিরের পোড়ামাটির কারুকার্যে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা

রাধাগোবিন্দজিউয়ের মূল মন্দিরটি ছাড়াও এখানে রয়েছে আরো পাঁচটি শিবমন্দির। এগুলির নাম হল যথাক্রমে গঙ্গাধর, রামেশ্বর (বড়শিব), বাণেশ্বর, জলেশ্বর, ফুলেশ্বর, এছাড়া রয়েছে দোলমঞ্চ। প্রত্যেকটি শিবমন্দিরের গায়েই টেরাকোটার কারুকার্য রয়েছে।

দোলমঞ্চ ও অন্যান্য শিবমন্দির সমূহ
খড়ের ছাউনির চণ্ডীমণ্ডপ

রাধাগোবিন্দজিউয়ের মূল মন্দিরের উত্তরদিকে রয়েছে খড়ের ছাউনির চণ্ডীমণ্ডপ। এটি অসাধারণ কাঠের কাজের অন্যতম নিদর্শন। এটি প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো এবং এর গায়ে কাঁঠাল কাঠের অসাধারণ কারুকার্য আছে। কৃষ্ণরাম মিত্রের পিতামহ কন্দর্প মিত্র এই চণ্ডীমণ্ডপে তার গুরুদেবের সাথে মহামায়ার পূজা করেছিলেন।

রাধাগোবিন্দজিউ মন্দিরের সামনে ঐতিহাসিক বকুল গাছ

এই পূজাবেদীতে এখনও শারদীয় পূজা এবং শ্যামাপূজা হয়। এই মন্দিরটির ঠিক সামনেই প্রায় পাঁচশো বছরের পুরোনো একটি বকুল গাছ আছে। গাছটি বহু ইতিহাসের সাক্ষী।

আঁটপুরে বাবুরাম ঘোষের (যিনি পরবর্তীকালে স্বামী প্রেমানন্দ বলে পরিচিত হন) গ্রামের বাড়ি ছিল। আঁটপুরেই স্বামী বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসের আরো আটজন শিষ্য ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে সন্ন্যাস গ্রহণ করার সংকল্প নিয়েছিলেন।

এই স্থানে বিবেকানন্দ ও অন্যান্যরা সন্ন্যাস গ্রহণের সংকল্প করেন

আঁটপুরে স্বামী প্রেমানন্দের জন্মস্থানের উপর রামকৃষ্ণ-প্রেমানন্দ আশ্রম গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এই স্থানটি রামকৃষ্ণ মিশন দ্বারা সংরক্ষিত।[2]

অর্থনীতি

আঁটপুরের গ্রাম্য অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এখানকার বিখ্যাত মন্দিরগুলি এবং রামকৃষ্ণ-প্রেমানন্দ আশ্রমের জন্য। এখানে প্রায়ই বহু মধ্যবিত্ত ভক্ত, পর্যটক এবং বিদেশীরা আসেন মন্দির দেখবার জন্য। নামে গ্রাম হলেও বর্তমানে এটিকে আধা শহর বলা যায়।

আঁটপুরের নিকটবর্তী সেন্সাস টাউন রাজবলহাট সোনার কাজ ও হ্যান্ডলুম শাড়ির জন্য বিখ্যাত। [1]

পরিবহন

কলকাতা, তারকেশ্বর বা হরিপাল থেকে সহজেই সড়কপথে আঁটপুর যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে রেলপথে যাবার সহজ উপায় হল হাওড়া থেকে তারকেশ্বরের ট্রেন ধরে হরিপাল স্টেশনে নামা এরপর সেখান থেকে বাস। অতীতে আঁটপুরে একটি রেলস্টেশন ছিল। স্টেশনটি ছিল হাওড়া-আমতা-চাঁপাডাঙা-শিয়াখালা রুটের ন্যারোগেজ রেলপথের উপরে। রেলপথটি ছিল মার্টিন লাইট রেলওয়ে কোম্পানীর। এই কোম্পানী ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৫০-এর দশকে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আঁটপুরে পর্যটকদের আসার সংখ্যাও কমে যায়। [1][3]

তথ্যসূত্র

  1. দ্য টেলিগ্রাফ ২৪ জুলাই ২০০৫
  2. "পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগ"। ২৭ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০০৮
  3. "দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন ২৪ জুলাই ২০০০"। ২১ মার্চ ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০০৮
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.