আঁচিল

আঁচিল হচ্ছে ছোট রুক্ষ প্রবৃদ্ধি যা চামড়ার উপর অনেকটা ফুলকপির মত বৃদ্ধি অথবা কঠিন ফোস্কার মত দেখায় । এটা সাধারণত মানুষের হাতে বা পায়ে অথবা শরীরের অন্যান্য স্থানে দেখা দেয়। মানবদেহে ১০ রকমের আঁচিল বা ফুসকুড়ি হতে পারে, এর মধ্যে বেশিরভাগগুলোকেই নিরীহ বলে মনে করা হয় ।[5]

আঁচিল
প্রতিশব্দVerrucae,[1] papillomas[2]
বুড়ো আঙুলে প্রচুর পরিমাণে আঁচিল
বিশেষত্বচর্মরোগবিদ্যা
লক্ষণব্যথাহীন, ছোট, রুক্ষ ত্বকের বৃদ্ধি[1][3]
স্থিতিকালমাস থেকে বছর[1]
কারণমানব প্যাপিলোমা ভাইরাস[1]
ঝুঁকির কারণজনসাধারণের ব্যবহৃত ঝরনা, একজিমা[3]
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয়ক্যালাস, সেবোরিক কেরাটোসিস, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা[4]
প্রতিরোধসংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ত্বকের সংস্পর্শ এড়ানো, জনসাধারণের এলাকায় খালি পায়ে হাঁটা না
চিকিৎসাস্যালিসিলিক অ্যাসিড, ক্রায়োথেরাপি,[1] কেমো ভিত্তিক ফ্লুরোরাসিল বা ব্লিওমাইসিন
সংঘটনের হারখুবই সাধারণ[2]
আঁচিল

প্রকার

আঁচিলের আকৃতি এবং আক্রান্ত স্থানের উপর ভিত্তি করে অনেক ধরনের আঁচিল শনাক্ত করা হয়েছে, এছাড়াও মানবদেহে নানা ধরনের পাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি) এর উপরও আঁচিলের ধরন নির্ভর করে থাকে ।[6][7]

কারণ

মানবদেহে পাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি) এর সংক্রমনের কারণে বিভিন্ন ধরনের আঁচিল হয়ে থাকে । এখন পর্যন্ত জানামতে প্রায় ১৩০ ধরনের পাপিলোমা ভাইরাস যা মানবদেহে সংক্রমন ঘটিয়ে থাকে, পাওয়া গেছে ।[8]

প্রতিরোধ

র্ডাসিল হচ্ছে একটি এইচ পি ভি ভ্যাকসিন যা সার্ভিকাল ক্যান্সার ও যৌনাঙ্গের আঁচিল প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয় । গার্ডাসিল ভ্যাকসিনটি এইচ পি ভি ধরন-১৬, ১৮, ৬ এবং ১১ কে প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে । এইচ পি ভি ধরন-১৬ এবং ১৮, ৭০% সার্ভিকাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রায় অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় ।[9][10] এছাড়াও স্ত্রীযোনিদ্বার, স্ত্রীযোনি,[11] পুরুষ যৌনাঙ্গ, পায়ুপথ ক্যান্সার এই দুই ধরনের এইচ পি ভি দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে ।[12] এইচ পি ভি ধরন-৬ এবং ১১, ৯০ শতাংশ যৌনাঙ্গের আঁচিল এর জন্য দায়ী ।[13]

নিষ্ক্রিয়করণ

এই ভাইরাসটিকে সাধারনভাবে প্রচলিত জীবাণুনাশক দ্বারা নিষ্ক্রিয়করন তুলনামূলকভাবে কঠিন । ৯০% ইথানল, ২% গ্লুটারাল্ডিহাইড, ৩০% স্যাভলন এবং ১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট মিশ্রনে অন্তত ১ মিনিট রাখলে এই জীবাণুটিকে নিষ্ক্রিয়করন করা সম্ভব ।[14]

ভাইরাসটি তাপ এবং উষ্ণতা প্রতিরোধী, কিন্তু ১০০° সেলসিয়াস (২১২° ফারেনহাইট) এবং আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দ্বারা একে নিহত করা সম্ভব ।[14]

চিকিৎসাপদ্ধতি

আঁচিল অপসারণের জন্য অনেক চিকিৎসা এবং পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে । এর মধ্যে স্যালিসিলিক এসিড সম্পৃক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি অধিক কার্যকারিতা লাভ করেছে । ক্রায়োথেরাপি পদ্ধতিও স্যালিসিলিক এসিডের মতই কার্যকরী দৃশ্যমান হয়, তবে এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও হয়নি ।

ঔষধপ্রয়োগ

  • একজন চর্মরোগবিশেষজ্ঞ স্যালিসিলিক এসিড সমৃদ্ধ ওষুধ প্রস্তাব করতে পারেন ।
  • ইমিকুইমড একটি প্রচলিত ক্রিম যা শরীরের ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে আঁচিলের ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।[15]
  • ক্যানথারিডিন, এককভাবে অথবা পোডোফিলিন এর সাথে প্রক্রিয়াকরণ অবস্থায় পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
  • আরেকটি ওষুধ ব্লিয়োমাইসিন, যার প্রয়োগে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দৃষ্ট হয়ে থাকে ।[16][17] যে ক্ষেত্রে একটি কিংবা দুটি ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে ।
  • ডাইনাইট্রোক্লোরোবেনজিন (ডিএনসিবি) ব্যবহারের মাধ্যমে ।

থেরাপি ও অন্যান্য পদ্ধতি

  • ক্যারাটোলাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে ত্বকের মৃত কেষ|কোষগুলো সরিয়ে এ চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় ৷[18]
  • ইলেকট্রোডেসিকেশান পদ্ধতি ।[19]
  • ক্রায়োসার্জারী; এ পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
  • সার্জারীর মাধ্যমে আক্রান্ত কোষকে কেটে অপসারন করার মাধ্যমে ৷
  • লেজার চিকিৎসা ৷
  • ইনফ্রা রেড কোয়াগুলেটার-এক্ষেত্রে অবলোহিত রশ্মির সাহায্যে আক্রান্ত কোষের চিকিৎসা করা হয় ৷ এটি কম ব্যয়বহুল চিকিৎসা ৷[20]
  • ডাক্টটেপ অক্লুসন থেরাপি- এটি একটি থেরাপি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আঁচিলের চিকিৎসা করা হয় ৷
  • গার্লিক এক্সট্রাক্ট থেরাপি- এ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে ৫০ শতাংশরও বেশি ক্ষেত্রে উপকারিতা পাওয়া গেছে । এ ক্ষেত্রে রসুন থেতলিয়ে এর পুরু স্তর আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা হয় ।

সমাজ ও সংস্কৃতি

এছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহৃত প্রতিষেধক কিংবা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আঁচিল অপসারণ করা যেতে পারে বলে দাবি করা হয়ে থাকে ।

তথ্যসূত্র

  1. "Warts Types, Causes, Symptoms, Treatments, Prevention" (ইংরেজি ভাষায়)। Webmd.com। ২০১০-০৯-০২। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৬
  2. Anderson, Keith,; Keith, Jeff; Novak, Patricia D.; Elliot, Michelle A. (২০০৫)। Mosby's Medical, Nursing & Allied Health Dictionary (ইংরেজি ভাষায়) (5th সংস্করণ)। C.V. Mosby। আইএসবিএন 978-0-323-03736-5।
  3. "MedlinePlus: Warts" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০।
  4. de Villiers EM, Fauquet C, Broker TR, Bernard HU, zur Hausen H (জুন ২০০৪)। "Classification of papillomaviruses"। Virology (ইংরেজি ভাষায়)। 324 (1): 17–27। ডিওআই:10.1016/j.virol.2004.03.033
  5. Lowy DR, Schiller JT (২০০৬)। "Prophylactic human papillomavirus vaccines"। J. Clin. Invest. (ইংরেজি ভাষায়)। 116 (5): 1167–73। ডিওআই:10.1172/JCI28607
  6. Muñoz N, Bosch FX, Castellsagué X, Díaz M, de Sanjose S, Hammouda D, Shah KV, Meijer CJ (২০০৪-০৮-২০)। "Against which human papillomavirus types shall we vaccinate and screen? The international perspective"। Int J Cancer (ইংরেজি ভাষায়)। 111 (2): 278–85। ডিওআই:10.1002/ijc.20244
  7. "FDA Approves Expanded Uses for Gardasil to Include Preventing Certain Vulvar and Vaginal Cancers" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০৯-১২। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৬
  8. Cortez, Michelle Fay and Pettypiece, Shannon (২০০৮-১১-১৩)। "Merck Cancer Shot Cuts Genital Warts, Lesions in Men"Bloomberg News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৬
  9. Steinbrook, Robert (মার্চ ১৬, ২০০৬)। "Perspective – The Potential of Human Papillomavirus Vaccines" (ইংরেজি ভাষায়)।
  10. http://www.phac-aspc.gc.ca/lab-bio/res/psds-ftss/papillome-eng.php
  11. Barclay, Laurie (২০১১-০৬-০৪)। "Short-Acting Imiquimod Cream Approved for Genital Warts"Medscape (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৬
  12. Bacelieri R, Johnson SM (২০০৫)। "Cutaneous warts: An evidence-based approach to therapy"American family physician (ইংরেজি ভাষায়)। 72 (4): 647–652।
  13. Champion, R.H., et al. (1998) Rook's Textbook of Dermatology. Blackwell Science, p. 1044, আইএসবিএন ০-৬৩২-০৬৪২৯-৩
  14. "Treating Warts" (ইংরেজি ভাষায়)। British Medical Journal। ২০০২-০৮-৩১। ২০১০-১১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৬
  15. Soma, Marlene A; Albert, David M (২০০৮)। "Cidofovir: to use or not to use?"। Current Opinion in Otolaryngology & Head and Neck Surgery (ইংরেজি ভাষায়)। 16 (1): 86–90। ডিওআই:10.1097/MOO.0b013e3282f43408
  16. Sterling JC, Handfield-Jones S, Hudson PM (২০০১)। "Guidelines for the management of cutaneous warts" (পিডিএফ)British Journal of Dermatology (ইংরেজি ভাষায়)। 144 (1): 4–11। ডিওআই:10.1046/j.1365-2133.2001.04066.x। ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৬
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.