অ্যালান টুরিং

অ্যালান ম্যাথিসন টুরিং (ইংরেজি: Alan Turing), অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার, ফেলো অব দ্য রয়েল সোসাইটি (২৩শে জুন, ১৯১২—৭ই জুন, ১৯৫৪) একজন অগ্রণী ইংরেজ কম্পিউটার প্রকৌশলী, গণিতজ্ঞ, যুক্তিবিদ, দার্শনিক, গোপন সংকেত বিশেষজ্ঞ, গাণিতিক জীববিজ্ঞানী এবং ম্যারাথন দৌড়বিদ ছিলেন। কম্পিউটার প্রকৌশলের বিকাশে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি তার টুরিং মেশিনের (Turing machine) মাধ্যমে গণনা (computation) ও অ্যালগোরিদম (algorithm) এর ধারণার প্রচলন করেন। টুরিংকে তাত্ত্বিক কম্পিউটার প্রকৌশলকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অ্যালান টুরিং
ষোল বছর বয়সে টুরিং
জন্ম
অ্যালান ম্যাথিসন টুরিং

(১৯১২-০৬-২৩)২৩ জুন ১৯১২
মৃত্যু৭ জুন ১৯৫৪(1954-06-07) (বয়স ৪১)
উইমস্লো, চেশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যুর কারণসায়ানাইড (আত্মহত্যা)
জাতীয়তাইংরেজ
শিক্ষাকিং'স কলেজ, কেমব্রিজ
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, পিএইচ. ডি.
পেশাগণিতবিদ, যুক্তিবিদ, ক্রিপ্টোবিশেষজ্ঞ
পরিচিতির কারণটুরিং পরীক্ষা
উপাধিOrder of the British Empire
Fellow of the Royal Society
পিতা-মাতাজুলিয়াস ম্যাথিসন টুরিং
এথেল স্টোনি টুরিং
ওয়েবসাইটঅ্যালান টুরিং.নেট
টুরিং ডিজিটাল আর্কাইভ
আত্মজীবনী

কম্পিউটার বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক দুটি ধারণার সাথে তার নাম জড়িত: টুরিং টেস্ট এবং টুরিং মেশিন। প্রথমটি জড়িত বিতর্কিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ধারণার সাথে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে কম্পিউটারের বিমূর্ত গাণিতিক গঠন। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের প্রধান সম্মামনা তার নামে, "টুরিং পুরস্কারকে প্রায়ই কম্পিউটার বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার নামে অভিহিত করা হয়।[1][2]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় টুরিং ব্লেচলি পার্কে (bletchly park) অবস্থিত ব্রিটেনের গভার্নমেন্ট কোড অ্যান্ড সাইফার স্কুলের (government code and cipher school) জন্য কাজ করতেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি জার্মান নৌবাহিনীর গুপ্তসংকেত বিশ্লেষণে নিয়োজিত হাট-৮ (hut-8) এর নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি জার্মান সাইফার বিশ্লেষণের বেশ কিছু কৌশল আবিষ্কার করেন। তিনি এনিগমা (enigma) মেশিনের বিন্যাস বের করার জন্য তড়িৎযান্ত্রিক (electromagnetic) যন্ত্র তৈরি করেন। গোপন সংকেত বিশ্লেষণে টুরিং এর অবদান অ্যাটলান্টিকের যুদ্ধে নাৎসীদের হারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ধারণা করা হয় ব্লেচলি পার্কের অবদানের কারণে ইউরোপের যুদ্ধের দৈর্ঘ্য দুই থেকে চার বছর কমে যায়।

যুদ্ধের শেষে তিনি ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন যেখানে তিনি এইসের (ace) নকশা তৈরি করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটিতে ম্যাক্স নিউম্যানের কম্পিউটিং ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন যেখানে তিনি ম্যাঞ্চেস্টার কম্পিউটার তৈরিতে সাহায্য করেন। এসময় তিনি গাণিতিক জীববিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি মর্ফোজেনেসিসের রাসায়নিক ভিত্তির উপর গবেষণাপত্র লিখেন এবং স্পন্দিত রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্বন্ধে ধারণা পোষণ করেন যা প্রথম লক্ষ করা হয় ১৯৬০ সালে।

১৯৫২ সালে টুরিংকে সমকামিতার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সে সময়ে যুক্তরাজ্যে সমকামিতাকে অপরাধ[ হিসেবে গণ্য করা হত। জেলে যাওয়া এড়াতে তিনি এস্ট্রোজেন (oestrogen) ইঞ্জেকশন গ্রহণ মেনে নেন। টুরিং ১৯৫৪ সালে তার ৪২তম জন্মদিনের ১৬ দিন আগে মারা যান। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন টুরিংকে যে ক্ষতিকর চিকিৎসায় বাধ্য করা হয় তার জন্য দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ২০১৩ সালে রাণী এলিজাবেথ তাকে মরণোত্তর ক্ষমা প্রদান করেন।

শৈশব ও যৌবন

টুরিং তার মায়ের গর্ভে আসেন ১৯১১ সালে ভারতের উরিষ্যার চাত্রাপুরে। তার বাবা জুলিয়াস ম্যাথিসন টুরিং ছিলেন ভারতীয় লোক প্রশাসনের (ইণ্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) একজন সদস্য।[3][4] জুলিয়াস এবং তার স্ত্রী সারা (নেই স্টোনি; ১৮৮১-১৯৭৬, মাদ্রাজ রেলওয়ের প্রকৌশলী এডওয়ার্ড ওয়েলার স্টোনির কন্যা) তাদের সন্তানকে ইংল্যান্ডে বড় করতে চেয়েছিলেন, তাই তার লণ্ডনের মাইডা ভেলে ফিরে আসেন যেখানে টুরিং এর জন্ম হয় ২৩ জুন, ১৯১২ সালে। তার ভাই জন ছিল তার বড়। তার বাবার লোক প্রশাসন কমিশন তখনো কার্যকর ছিল এবং টুরিং এর ছেলেবেলায় তাদের অভিভাবকেদের সন্তানদের বন্ধুদের কাছে রেখে ইংল্যান্ডের গিল্ডফোর্ড এবং ভারতের মধ্যে প্রায়ই যাতায়ত করতে হত। টিউরিং একজন সমকামি ছিলেন ।

তার অভিভাবকেরা তাকে ছয় বছর বয়সে দিবা বিদ্যালয় সেণ্ট মাইকেল’স এ ভর্তি করিয়ে দেন। প্রধান শিক্ষিকা তার প্রতিভাকে শুরুতেই ধরতে পারেন যেভাবে তার অনেক সমসাময়িক শিক্ষকেরা পেরেছিলেন। ১৯২৬ সালে চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি ডরসেট ডরসেটের শেরবর্ন স্কুলে ভর্তি হন। তার পর্বের প্রথম দিন ইংল্যান্ডের জেনারেল স্ট্রাইক (সাধারণ ধর্মঘট) থাকার পর ও তার প্রতিগ্ঞার কারণে তিনি একাই সাউথহ্যাম্পটন থেকে ৬০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্কুলের কাছে পৌছান। মাঝপথে তাকে একটি হোটেলে বিশ্রাম নেবার জন্য থামতে হয়- ঘটনাটিকে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়। গণিত ও বিজ্ঞানে টুরিং এর আগ্রহ জনপ্রিয় এবং ব্যয়বহুল পাবলিক স্কুল সেরবর্নের শিক্ষকদের নজর কাড়তে পারেনি। এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাব্যবস্থা ক্লাসিক (প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান ভাষা এবং সাহিত্য শিক্ষা) এর দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তার প্রধান শিক্ষক তার অভিভাবকদের লেখেন: আমি আশা করি যেন সে দুটি শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝে না পরে। সে যদি পাবলিক স্কুলে থাকে চায়, তবে তাকে অবশ্যই শিক্ষিত হবার দিকে নজর দিতে হবে। সে যদি শুধু বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞ হতে চায় তবে পাবলিক স্কুলে সে তার সময় নষ্ট করছে।

কিংস কলেজের কম্পিউটার রুমের নাম বর্তমানে টুরিংএর নামানুসারে রাখা হয়েছে, তিনি ১৯৩১ সালে এখানে ভর্তি হয়ে ১৯৩৫ সালে ফেলো হন।

অন্যদিকে টুরিং তার অসাধারণ সক্ষমতার সাক্ষর রেখে চলে তার আগ্রহের বিষয়গুলোতে। ক্যালকুলাসের মূল বিষয়গুলো না জেনেই সে উন্নত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে থাকে। ১৯২৮ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি আলবার্ট আইস্টাইনের কাজের সংস্পর্শে আসেন; তিনি তা অধ্যয়ন করার পাশাপাশি নিউটনের গতি সূত্র সম্পর্কে আইনস্টাইনের সন্দেহ অণুধাবন করতে শুরু করেন এমন একটি লিখিত অংশ থেকে যেখানে এটি একদমই পরিষ্কার করা ছিল না।

টুরিং এর আশা ও আকাঙ্ক্ষার বিস্তৃতি ঘটে তার বন্ধু ক্রিস্টোফার মরকমের মাধ্যমে, যাকে সে ভালবেসে ফেলে। অবশ্য তা দ্বিমুখী ছিল না। মরকম মারা যায় সেরবর্নে তাদের শেষ পর্ব শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং কম্পিউট্যাবিলিটিতে তার অবদান

অ্যালান টুরিং স্মৃতি ভাস্কর্য্য, স্যাকভিল পার্ক।

কেতাবী লেখাপড়ায় টুরিং এর অনাগ্রহের কারণে তাকে ক্যাম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হতে হয়, এবং ফলশ্রুতিতে তাকে তার দ্বিতীয় পছন্দ কিংস কলেজে হয়। সেখানে তিনি ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত একজন আণ্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র ছিলেন এবং স্নাতক লাভ করেন বিশেষভাবে। ১৯৩৫ সালে গাউসের ফাশনের কাজের জন্য কলেজের ফেলো হন।[5] despite the fact that he had failed to find out that it had already been proven in 1922 by Jarl Waldemar Lindeberg.[6]

তার গুরুত্বপূর্ণ পেপার “অন কম্পিউটেবল নাম্বারস, উইথ এন এপ্লিকেশন টু দি এনসিডুংসপ্রবলেম” এ টুরিং পূণর্বিনাস করেন কার্ট গোবেলের ১৯৩১ সালের প্রমাণ এবং গণণার এবং গোবেলের বিশ্বজনীন পাটিগণিত নির্ভর ফর্মাল ভাষার পরিবর্তে টুরিং মেশিনস’এ পরিবর্তন করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে এমন যন্ত্র সকল সম্ভাব্য গাণিতিক সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবে যদি তা একটি এলগোরিদম আকারে প্রকাশ করা হয়। যদিও কোন টুরিং মেশিন সাধারণত কোন ব্যবহারিক এপ্লিকেশনের প্রক্রিয়া করেনা, কেননা তা সকল থেকে ধীরগতির।

বর্তমান সময় পর্যন্তও টুরিং মেশিন গণণা তত্ত্বের শিক্ষায় কেন্দ্রীয় অংশ বলে বিবেচিত হয়। তিনি টুরিং মেশিনের সাহায্যে হল্টিং প্রবলেমকে সিদ্ধান্তহীন দেখিয়ে প্রমাণ করেন যে Entscheidungsproblem এর কোন সমাধান নেই। টুরিং মেশিন কখনো হল্ট করবে কিনা তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। লাম্বডা ক্যালকুলাস অনুসারে আলোনজো চার্চের প্রমাণ প্রকাশের পর তার প্রমাণ প্রকাশিত হয়। টুরিংএর প্রমাণটি সহজে বোধগম্য হিসেবে পরিগণিত হয়।

১৯৩৭ এবং ১৯৩৮ সালের বেশির ভাগ সময় তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিবাহিত করেন আলোনজো চার্চের অধীনে গবেষণা করে। ১৯৩৮ সালে প্রিন্সটন থেকে তিনি তার পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণাপত্র রিলেটিভ কম্পিউটিং ধারণার সূচনা করে যেখানে টুরিং মেশিন তথাকথিত ওরাকলের সাথে বর্ধিত হয়। এ পদ্ধতি সে সকল সমস্যার অধ্যয়নের সুযোগ তৈরি করে দেয় যেগুলো টুরিং মেশিন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব হত না।

১৯৩৯ সালে ক্যাম্ব্রিজে ফেরত এসে তিনি লুডভিগ ভিটজেনস্টাইন পরিচালিত গণিতের ভিত্তি বিষয়ক লেকচারে অংশ নেন। তারা দু’জন তর্ক করেন এবং পরস্পরের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। টুরিং ফরমালিজম এর পক্ষ নেন এবং ভিটজেনস্টাইন বলেন যে গণিতকে অতিরিক্ত মূল্য দেয়া হচ্ছে এবং এটি কোন পরম সত্য আবিষ্কারে অক্ষম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে, ব্লেচলি পার্কে জার্মান ধাঁধার সমাধানকল্পে অন্যতম প্রধান অংশগ্রহণকারী ছিলৈন। ক্রিপ্ট্যানালাইসিস তৈরির কাজ যুদ্ধ শুরুর আগেই পোল্যান্ডে চলতে থাকে। তিনি এনিগমা মেশিন এবং লরেনজ এসজেড ৪০/৪২ খুলতে সহায়তা করেন এবং একদা হাট এইট এর প্রধান ছিলেন, যেই বিভাগটি জার্মান নৌ সংকেত উদ্ধারে তংপর ছিল।

১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে টুরিং গভর্ণমেণ্ট কোড এণ্ড সাইফার স্কুল এ খণ্ডকালীন চাকরি করতেন, যা ছিল ব্রিটিশ সংকেত উন্মোচনকারী প্রতিষ্ঠান। তিনি জার্মান এনিগমা মেশিনের সমস্যাসমূহ নিয়ে কাজ করেন এবং ডিলি নক্স এর সাথেও যোগ দেন। ১৯৩৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, যেদিন ব্রিটেন জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, সেদিন টুরিং ব্লেচলি পার্কে রিপোর্ট করেন।

গবেষণা পত্র

তথ্যসূত্র

  1. দৃষ্টি আকর্ষণ: এই টেমপ্লেটি ({{cite doi}}) অবচিত। doi দ্বারা চিহ্নিত প্রকাশনা উদ্ধৃত করার জন্য:10.1098/rsbm.1955.0019, এর পরিবর্তে দয়া করে |doi=10.1098/rsbm.1955.0019 সহ {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}} ব্যবহার করুন।
  2. Beavers 2013, পৃ. 481
  3. Hodges 1983, পৃ. 5
  4. "The Alan Turing Internet Scrapbook"। Turing.org.uk। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১২
  5. See Section 3 of John Aldrich, "England and Continental Probability in the Inter-War Years", Journal Electronique d'Histoire des Probabilités et de la Statistique, vol. 5/2 Decembre 2009 Journal Electronique d'Histoire des Probabilités et de la Statistique
  6. Hodges 1983, পৃ. 88,94

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.