অ্যালবার্ট ফিনি

অ্যালবার্ট ফিনি জুনিয়র (ইংরেজি: Albert Finney Jr; ৯ মে ১৯৩৬ - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)[1] ছিলেন একজন ইংরেজ অভিনেতা, প্রযোজক, ও পরিচালক। তিনি মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে সফল অভিনেতা ছিলেন। রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাট্রিক আর্ট থেকে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি বিভিন্ন শেকসপিয়ারীয় নাটকে অভিনেতা হিসেবে মঞ্চে কাজ শুরু করেন। ১৯৬০ সালে টনি রিচার্ডসন পরিচালিত দি এন্টারটেইনার চলচ্চিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয় এবং ১৯৬০-এর দশকের শুরু হতেই তিনি পর্দায় খ্যাতি অর্জন করেন।

অ্যালবার্ট ফিনি
Albert Finney
১৯৬৬ সালে ফিনি
জন্ম
অ্যালবার্ট ফিনি জুনিয়র

(১৯৩৬-০৫-০৯)৯ মে ১৯৩৬
পেন্ডেলটন, স্যালফোর্ড, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯(2019-02-07) (বয়স ৮২)
ব্রম্পটন, লন্ডন, ইংল্যান্ড
মাতৃশিক্ষায়তনরয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট
পেশাঅভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক
কর্মজীবন১৯৫৬-২০১২
দাম্পত্য সঙ্গীজেন ওয়েনহ্যাম (বি. ১৯৫৭; বিচ্ছেদ. ১৯৬১)
আনুক এমে (বি. ১৯৭০; বিচ্ছেদ. ১৯৭৮)
পিন ডেলমেগ (বি. ২০০৬; মৃ. ২০১৯)
সন্তান

ফিনি টম জোন্স (১৯৬৩), মার্ডার অন দি অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (১৯৭৪), দ্য ড্রেসার (১৯৮৩), ও আন্ডার দ্য ভলকানো (১৯৮৪) ছবিতে অভিনয় করে চারবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন; এবং এরিন ব্রকভিচ (২০০০) ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল টু ফর দ্য রোড (১৯৬৭), অ্যানি (১৯৮২), মিলার্স ক্রসিং (১৯৯০), আ ম্যান অব নো ইমপর্টেন্স (১৯৯৪), বিগ ফিশ (২০০৩), দ্য বর্ন আল্টিমেটাম (২০০৭), দ্য বর্ন লিগ্যাসি (২০১২), এবং জেমস বন্ড ধারাবাহিকের স্কাইফল (২০১২)।

প্রারম্ভিক জীবন

ফিনি ১৯৩৬ সালের ৯ই মে ল্যাঙ্কাশায়ারের স্যালফোর্ডের চার্লসটাউনে জন্মগ্রহণ করেন।[2] তার পিতা অ্যালবার্ট ফিনি একজন বই প্রস্তুতকারী এবং মাতা অ্যালিস হবসন। তিনি টুটাল ড্রাইভ প্রাইমারি স্কুল ও স্যালফোর্ড গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্যালফোর্ডে পড়াকালীন তিনি রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে (রাডা) পড়ার জন্য বৃত্তি পান[3] এবং ১৯৫৬ সালে রাডা থেকে স্নাতক সম্মান অর্জন করেন।[4]

কর্মজীবন

চলচ্চিত্রে তারকা খ্যাতি

ফিনি ১৯৬০ সালে টনি রিচার্ডসন পরিচালিত দি এন্টারটেইনার-এ লরন্স অলিভিয়ের সাথে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। জন অসবর্নের মঞ্চনাটক অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাণের নব্য গ্রিটি স্টাইলের উদাহরণ এবং এটি কিচেন-সিঙ্ক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।[3] একই বছর কারেল রাইৎজের স্যাটারডে নাইট অ্যান্ড সানডে মর্নিং চলচ্চিত্রে একজন ফ্যাক্টরি শ্রমিক চরিত্রে তার কাজ তাকে পরিচিতি পাইয়ে দেয়। এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তিনি হেনরি ফিল্ডিঙের আঠারো শতকের উপন্যাস অবলম্বনে রিচার্ডসনের টম জোন্স (১৯৬৩) ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান[3] এবং তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। টম জোন্স-এর সফলতার পর তিনি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র প্রদর্শকদের ভোটে ১৯৬৩ সালে বক্স অফিসে নবম জনপ্রিয় তারকার স্থান অধিকার করেন।[3][5]

মার্ডার অন দি অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ও টিভি কর্ম

তিনি আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস অবলম্বনে সিডনি লুমেট পরিচালিত মার্ডার অন দি অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (১৯৭৪)-এ বেলজীয় গোয়েন্দা হারকিউল পোইরট চরিত্রে অভিনয় করেন। ফিনি এই চরিত্রে এতটাই পরিচিতি লাভ করেন যে তিনি পরবর্তী কয়েক বছর একই ধরনের চরিত্রে কাজ পেতে থাকেন, এবং তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, "লোকজন আসলেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে আমার ওজন ৩০০ পাউন্ড এবং আমি ফরাসিভাষী।"[6] এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

ফিনি পিটার নিকোল্‌স রচিত টিভি চলচ্চিত্র ফরগেট-মি-নট-লেন (১৯৭৫)-এ অভিনয় করেন এবং রিডলি স্কট পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র দ্য ডুয়েলিস্টস (১৯৭৭)-এ ক্ষণিক চরিত্রে কাজ করেন।

চলচ্চিত্রে প্রত্যাবর্তন

ফিনির সবচেয়ে কম সমাদৃত কাজ ছিল জন হিউস্টন পরিচালিত অ্যানি (১৯৮২)। এতে তিনি ড্যাডি ওয়ারবাকস চরিত্রে অভিনয় করেন।[7] তিনি পিটার ইয়েটস পরিচালিত দ্য ড্রেসার (১৯৮৩) ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। পরের বছর তিনি সেকেন্ড পোপ জন পল টেলিভিশন চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। এটি মার্কিন টেলিভিশনে তার প্রথম কাজ। একই বছর তিনি হিউস্টনের আন্ডার দ্য ভলকানো (১৯৮৪)ছবিতে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তারা দুজনেই সমাদৃত হন এবং ফিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার দ্বিতীয় একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[3]

১৯৯০-এর দশক

ফিনি ১৯৯০-এর দশকে এইচবিও চ্যানেলের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন, তন্মধ্যে রয়েছে দি ইমেজ (১৯৯০)। তিনি মিলার্স ক্রসিং (১৯৯০) ছবিতে গ্যাংস্টার বস চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সমাদৃত হন। তিনি এই ছবির শুটিং শুরুর পূর্বে ট্রে উইলসনের স্থলাভিষিক্ত হন। একই বছর তিনি কিংসলি অ্যামিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ব্রিটিশ টেলিভিশন ধারাবাহিক দ্য গ্রিন ম্যান-এ অভিনয় করেন।[8]

পরবর্তী কালে তিনি জিলিস ম্যাকিননের সাথে দ্য প্লেবয়স (১৯৯২), ব্রুস বেরেসফোর্ডের সাথে রিচ ইন লাভ (১৯৯৩), মাইক ফিগিসের সাথে দ্য ব্রাউনিং ভার্সন (১৯৯৪), সুরি কৃষ্ণাম্মার সাথে আ ম্যান অব নো ইমপর্টেন্স (১৯৯৪), এবং পিটার ইয়েটসের দ্য রান অব দ্য কান্ট্রি (১৯৯৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

পুনঃসাফল্য

দীর্ঘ এক দশক পরে ফিনির অন্যতম হিট চলচ্চিত্র ছিল স্টিভেন সোডারবার্গের পরিচালনায় জুলিয়া রবার্টসের সাথে এরিন ব্রকভিচ (২০০০)। এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। একই বছর তাকে সোডারবার্গের ট্রাফিক (২০০০) চলচ্চিত্রে ক্ষণিক চরিত্রে দেখা যায়। ২০০১ সালে তিনি হেমিংওয়ে, দ্য হান্টার অব ডেথ টিভি চলচ্চিত্র আর্নেস্ট হেমিংওয়ে চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি ডেলিভারিং মিলো (২০০১) ছবিতে প্রধান চরিত্রে কাজ করেন। পরের বছর তিনি দ্য গ্যাদারিং স্টর্ম টিভি চলচ্চিত্রে উইনস্টন চার্চিল চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে বাফটা টিভি পুরস্কার, এমি পুরস্কারগোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন।[9][10]

২০০৪-২০১৯

ফিনি সোডারবার্গের ওশান্‌স টুয়েলভ (২০০৪)-এ ক্ষণিক চরিত্রে কাজ করেন, টিম বার্টনের কর্পস ব্রাইড (২০০৫)-এ একটি গানে কণ্ঠ দেন এবং আসপেক্টস অব লাভ (২০০৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

তিনি রিডলি স্কটের পরিচালনায় আ গুড ইয়ার (২০০৬) ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি অ্যামেজিং গ্রস (২০০৬), দ্য বর্ন আল্টিমেটাম (২০০৭), ও বিফোর দ্য ডেভিল নোস ইউ আর ডেড (২০০৭) ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি সর্বশেষ দ্য বর্ন লিগ্যাসি (২০১২), এবং জেমস বন্ড ধারাবাহিকের স্কাইফল (২০১২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

তথ্যসূত্র

  1. "Albert Finney: British actor dies aged 82"বিবিসি নিউজ। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  2. "Albert Finney Biography (1936-)"ফিল্ম রেফারেন্স। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  3. "Obituary: Albert Finney"বিবিসি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  4. ফক, কোয়েন্টিন (১৯৯৩)। Albert Finney in Character: A Biography। রবসন বুকস। আইএসবিএন 0-86051-823-X।
  5. "Most Popular Films Of 1963." টাইমস (লন্ডন, ইংল্যান্ড)। ৩ জানুয়ারি ১৯৬৪। দ্য টাইমস ডিজিটাল আর্কাইভ।
  6. রজনী, দীপিকা (২৮ ডিসেম্বর ২০১৮)। "BBC Film review programme cancelled after 48 years"আইনিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  7. ফারভার, স্টিভেন (২৬ জুলাই ১৯৮১)। "FINNEY COMES BACK TO FILM"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
  8. "Dorset On Screen: A Report On The Use Of Dorset As A Film-TV Location For The British Film Centenary 1996"সাউথ সেন্ট্রাল মিডিয়া। Archived from the original on ২৪ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৯
  9. "54th Emmy Awards Nominees and Winners"এমিস (ইংরেজি ভাষায়)। টেলিভিশন একাডেমি। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৯
  10. লাইম্যান, রিক (২০ জানুয়ারি ২০০৩)। "'Chicago,' 'Hours' Win Top Golden Globe Awards"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.