অ্যানিলিডা
অঙ্গুরীমাল বা অ্যানিলিডা (Annelida, from Greek anellus, "little ring") প্রাণীরাজ্যের একটি পর্ব।[1] এদের নলাকার, খণ্ডিত দেহ দেখতে ছোট ছোট আংটির (অঙ্গুরী) মালার মতো, তাই নাম "অঙ্গুরীমাল"। উদাহরণ কেঁচো, জোঁক, নেরিসা।[2]
এ্যানেলিডা সময়গত পরিসীমা: ৫৪–০কোটি | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
মহাপর্ব: | Lophotrochozoa |
পর্ব: | Annelida Lamarck, 1809 |
Classes and subclasses | |
Class Polychaeta | |
কিছু লেখক Cilitellata এর অধীন উপশ্রেণী গুলিকে শ্রেণী হিসাবে গণ্য করে থাকেন |
বৈশিষ্ট্য
- দেহ অনেকগুলি আংটির মতো খণ্ড নিয়ে গঠিত এবং এগুলিকে মেটামিয়ার (metamere) বা সোমাইট (somite) বলে।
- দেহ ত্রিস্তর কোষযুক্ত (triploblastic), অর্থাৎ এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম ও এন্ডোডার্ম কোষ দিয়ে গঠিতএবং দ্বিপার্শ্বীয়ভাবে প্রতিসম।
- বহিঃস্তক কিউটিকল (cuticle) আবরণীযুক্ত।
- মেসোডার্ম কোষ আবৃত প্রকৃত সিলোম বা দেহ গহ্বর বর্তমান, যা সেপ্টাম বা পর্দা দিয়ে খণ্ডিত থাকে।
- রেচন অঙ্গ হলো নেফ্রিডিয়া (nephridia), যা প্রায় প্রতি খণ্ডে থাকে।
- গমন অঙ্গ সিটা (seta) বা প্যারাপোডিয়া (parapodia) বা দেহ পেশী।
- দেহ লম্বাকৃতি; মুখছিদ্র ও পায়ুছিদ্র দেহের দু'প্রান্তে উপস্থিত থেকে।
- উন্নত ও বদ্ধ রক্তসংবহনতন্ত্র। রক্তরসে হিমোগ্লোবিন বা এরিথ্রোক্রুওরিন (erythrocruorin) নামক শ্বাসরঞ্জক থাকে। এই কারণে এদের রক্তের বর্ণ লাল।
- সাধারণত সম্পূর্ণ ত্বক দিয়ে শ্বাসকার্য চালায় তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফুলকা দিয়ে শ্বসনক্রিয়া চলে। ত্বক সিক্ত ও রক্তজালকপূর্ণ হওয়ায় ত্বকীয় শ্বাসকার্য সম্ভব।
- অন্ত্র পরিবেষ্টিত স্নায়ুবলয় বা নার্ভরিং ও অঙ্কীয় স্নায়ুরজ্জু দিয়ে স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়।
- অধিকাংশ প্রাণী উভলিঙ্গ, কয়েকটি প্রাণী একলিঙ্গ।
- চলন অঙ্গ সিটা (seta) অথবা প্যারাপোডিয়া (parapodia)।
বিভাগ
আনুবীক্ষণিক আকারের থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ অষ্ট্রেলিয়ান জাইণ্ট গিপ্সল্যান্ড আর্থয়র্ম (giant Gippsland earthworm) এবং এমিন্থাস মেকংজিয়ানাস পর্যন্ত (Amynthas mekongianus)[2][3] এনিলিডা প্রাণীর প্রায় ২২,০০০ জীবিত প্রজাতি আছে।[2] অনেক পাঠ্যপুস্তকে এখনও বর্গীকরণের পরম্পরাগত বিভাগসমূহকেই ব্যবহার করতে দেখা যায়। সেই অনুযায়ী এনিলিডা প্রাণীর অন্তর্গত উপ−ভাগ সমূহ হল:[4]
- শ্রেণী: পলিকিটা (অধিকাংশই সামুদ্রিক)
- শ্রেণী: ক্লাইটেলাটা:
- পলিকিটা (প্রায় ১২,০০০ প্রজাতি)। এর দেহ খণ্ডগুলিতে অনেক কিটা ("লোম") থাকে। পলিকিটার পদ (ভরি) হিসাবে ব্যবহার হওয়া প্যারাপোডিয়া থাকে এবং সম্ভবত রসায়ন সংবেদী হিসাবে ব্যবহার হওয়া নিউসেল অরগান থাকে। বেশীরভাগই সামুদ্রিক, কিছু অল্প জলে অন্যদিকে অতি কমসংখ্যক মাটিতে বাস করে।[5]
- ক্লাইটেলাটা (প্রায় ১০,০০০ প্রজাতি[2])। এর প্রতিটি দেহখণ্ডে অতি কম কিটা থাকে বা কিছুর একেবারে থাকে না, এবং কোনো নিউসেল অরগান এবং প্যারাপোডিয়া। এর দেহে আংটি সদৃশ অনন্য প্রজনন অঙ্গ থাকে, এইগুলিকে ক্লাইটেলাম বলে। এতে কণা ফুটে পোয়ালী নুলুয়া পর্যন্ত নিষিক্ত কণাগুলি সংরক্ষণ তথা পোষিত হয়ে থাকে।[4][6] নতুবা, মনিলিগেষ্ট্রাইডের ক্ষেত্রে, ভ্রুণকে পোষণের যোগান দেয়া কোষ পরস থাকে।[2]
ক্লাইটেলেটসের দুটি উপভাগ থাকে:
- অলিগোকিটা ("কম লোম থাকা"), কেঁচো এমন প্রাণীর উদাহরণ। Oligochaetes have a sticky pad in the roof of the mouth. এই গোষ্ঠীর প্রায়সব জীব গর্ত খুঁড়ে বাস করে এবং জৈব পদার্থের পূর্ণ বা আংশিক পচন ঘটিয়ে পোষণ লাভ করে।[5]
- হিরুডিনিয়া, নামের অর্থ হল "জোঁক-সদৃশ" এবং জোঁক হল এই পর্বের জীবের সুন্দর উদাহরণ। সামুদ্রিক প্রাণীগুলির বেশিরভাগই রক্ত শোষণ করা পরজীবি, প্রধানত মাছের রক্ত শোষণ করে, অন্যদিকে অল্প জলে বাস করা গুলির মধ্যে বেশিরভাগই শিকারী ধরনের।[5] এর দেহের দুই দিকে রক্ত শোষণ করা শোষক থাকে, এই গুলির সহায়তায় চলাচলও করে।
আর্কানেলিডা নামের অবশেষের দানায় বাস করা সূক্ষ্ম এনিলিডা প্রাণী গুলিকে তাঁদের ক্ষুদ্র গঠনের জন্য আগে আলাদা শ্রেণী হিসাবে গণ্য করা হত, কিন্তু এখন পলিকিটার মধ্যে ধরা হয়।[4] বর্তমানে এনিলিডা প্রাণীর মধ্যে ধরা অন্য কিছু প্রাণী গোষ্ঠীকে আগে বিভিন্ন ধরনে বর্গীকরণ করা হত৷ যেমন:
- পগনোফরা / সাইবগলিনিডিয়া (Siboglinidae) ১৯১৪ সালে প্রথম আবি হয়েছিল, এবং তাঁদের শনাক্ত করতে খাদ্য নালি না থাকার জন্য বর্গীকরণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। একে পৃথক পর্ব হিসাবে গণ্য করা হত, পগন'ফরা বা, পগনোফরা এবং ভেষ্টিমেণ্টিফেরা নামক দুটি পর্ব হিসাবে। বর্তমানে একে পলিকিটার অন্তর্গত সাইবগলিনিডিয়া নামক একটা পরিবারে ধরা হয়।[5][7]
- একিউরা (Echiura): ১৯শ শতকে কিছু প্রাণীকে "গেফাইরিয়া (Gephyrea)" নামক একটা পর্বে গণ্য করা হয়েছিল, যেগুলিকে পরে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এনিলিডা প্রাণী হিসাবে ধরা হত যদিও পুনরায় তাঁদেরকে পৃথক পর্ব হিসাবে ধরা হয়েছিল; কিন্তু ১৯৯৭ সালে করা কিছু বিশ্লেষণের পরে সেগুলি এনিলিডা প্রাণী বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।[1][7]
- মাইজোষ্টমিডা (Myzostomida): ক্রিনোইড এবং অন্য কণ্টকচর্মীতে পরজীবি হিসাবে বাস করে। আগে এদেরকে আলাদা গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছিল। এদেরকে ত্রিমাটড নামক একধরনের চ্যাপ্টা কৃমির সম্পর্কীয় বা টার্ডিগ্রেড হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল, কিন্তু ১৯৯৮ সাল থেকে এদেরকে পলিকিটার উপগোষ্ঠী হিসাবে ধরা হয়।[5]
- সাইপুনকুলা: প্রথমে এনিলিডা প্রাণী হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল, দেহ খণ্ডিত না হওয়া এবং অন্য বহু কারণের জন্য পরে এদেরকে কোমলদেহী পর্বত অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[8][9][10]
পরিস্থিতিতান্ত্রিক গুরুত্ব
চার্লস ডারউইন-এর দ্য ফরমেশন অব ভেজেটেবল মল্ড থ্রু এক্সন অব ওয়র্ম (The Formation of Vegetable Mould through the Action of Worms) (১৮৮১) নামক বইতে মাটির উর্বরতা সম্পর্কে প্রথম বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছিল।[11] কেঁচোগুলির কিছু মাটির তলায় এবং কিছু ছোটপাতার মাঝে বাস করে। কেঁচো মাটিতে থাকা জৈবিক বস্তুগুলি পচন ঘটিয়ে কেঁচো সার তৈরী করে।
তথ্যসূত্র
- McHugh, D. (জুলাই ১৯৯৭)। "Molecular evidence that echiurans and pogonophorans are derived annelids"। Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America। 94 (15): 8006–8009। ডিওআই:10.1073/pnas.94.15.8006। পিএমআইডি 9223304। পিএমসি 21546 । সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-০২।
- Blakemore, R.J. (২০১২)। Cosmopolitan Earthworms। VermEcology, Yokohama.।
- Lavelle, P. (জুলাই ১৯৯৬)। "Diversity of Soil Fauna and Ecosystem Function" (পিডিএফ)। Biology International। 33। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-২০।
- Rouse, G. (১৯৯৮)। "The Annelida and their close relatives"। Anderson, D.T.। Invertebrate Zoology। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 176–179। আইএসবিএন 978-0-19-551368-4।
- Rouse, G. (১৯৯৮)। "The Annelida and their close relatives"। Anderson, D.T.। Invertebrate Zoology। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 179–183। আইএসবিএন 978-0-19-551368-4।
- Ruppert, E.E.; Fox, R.S. & Barnes, R.D. (২০০৪)। "Annelida"। Invertebrate Zoology (7 সংস্করণ)। Brooks / Cole। পৃষ্ঠা 459। আইএসবিএন 978-0-03-025982-1।
- Halanych, K.M.; Dahlgren, T.G.; McHugh, D. (২০০২)। "Unsegmented Annelids? Possible Origins of Four Lophotrochozoan Worm Taxa"। Integrative and Comparative Biology। 42 (3): 678–684। ডিওআই:10.1093/icb/42.3.678। পিএমআইডি 21708764।
- Hausdorf, B.; ও অন্যান্য (২০০৭)। "Spiralian Phylogenomics Supports the Resurrection of Bryozoa Comprising Ectoprocta and Entoprocta"। Molecular Biology and Evolution। 24 (12): 2723–2729। ডিওআই:10.1093/molbev/msm214। পিএমআইডি 17921486।
- Shen, X.; Ma, X.; Ren, J.; Zhao, F. (২০০৯)। "A close phylogenetic relationship between Sipuncula and Annelida evidenced from the complete mitochondrial genome sequence of Phascolosoma esculenta"। BMC Genomics। 10: 136। ডিওআই:10.1186/1471-2164-10-136। পিএমআইডি 19327168। পিএমসি 2667193 ।
- Wanninger, Andreas; Kristof, Alen; Brinkmann, Nora (জানু–ফেব্রু ২০০৯)। "Sipunculans and segmentation"। Communicative and Integrative Biology। 2 (1): 56–59। ডিওআই:10.4161/cib.2.1.7505। পিএমআইডি 19513266। পিএমসি 2649304 ।
- Siddall, M.E.; Borda, E.; Rouse, G.W. (২০০৪)। "Towards a tree of life for Annelida"। Cracraft, J.; Donoghue, M.J.। Assembling the tree of life। Oxford University Press US। পৃষ্ঠা 237–248। আইএসবিএন 978-0-19-517234-8। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-০২।
পর্ব (জীববিজ্ঞান) | |
---|---|
পর্ব: পরিফেরা · নিডারিয়া · প্লাটিহেলমিনথিস · নেমাটোডা · এনিলিডা · আর্থোপোডা · মলাস্কা · একাইনোডার্মাটা · কর্ডাটা |