অর্থনীতি

অর্থনীতি বা অর্থশাস্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান এর একটি শাখা যা পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।[1][2] [3]

যোগান ও চাহিদা মডেলটি বর্ণনা করে যে পণ্যের প্রাপ্যতা এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যের ফলে পণ্যের দাম কীভাবে পরিবর্তিত হয়

সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অফুরন্ত– এই মৌলিক পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য৷ অর্থনীতি শব্দটি ইংরেজি 'Economics' শব্দের প্রতিশব্দ। Economics শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Oikonomia' থেকে উদ্ভূত যার অর্থ গৃহস্থালী পরিচালনা। এল.রবিন্স এর প্রদত্ত সংজ্ঞাটি বেশিরভাগ আধুনিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি বলেন, "অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাব ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদের সম্পর্ক বিষয়ক মানব আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।" এল.রবিন্সের সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এটি মানব জীবনের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্টের উপর প্রতিষ্ঠিত, যথা অসীম অভাব, সীমিত সম্পদ ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সম্পদ। অর্থনীতির পরিধিসমূহ বিভিন্ন ভাগে বা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যেমনঃ

আধুনিক অর্থনীতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, (১)ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও (২)সামষ্টিক অর্থনীতি৷ ব্যষ্টিক অর্থনীতি মূলত ব্যক্তি মানুষ অথবা ব্যবসায়ের চাহিদাযোগান নিয়ে আলোচনা করে থাকে৷ অন্যদিকে সামষ্টিক অর্থনীতি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জাতীয় আয়, কর্মসংস্থান, মুদ্রানীতি, ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে৷ অন্য ভাবে বলা যায় যে, Micro Economics বা ব্যষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য হলো অর্থনীতির একটি বিশেষ অংশ বা একককে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা এবং Macro Economics বা সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির সামগ্রিক বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে থাকে।

অর্থনীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা

উনিশ শতকের শেষের দিকে আলফ্রেড মার্শাল, 'রাজনৈতিক অর্থনীতি' থেকে অর্থনীতি বিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে 'অর্থনীতি'-কে পুনঃনামকরণ করেন। এই সময়ে এটা শৃঙ্খলাবদ্ধ চিন্তাভাবনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং গণিতের ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়ে যায়, যা এটাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের বাইরে বিজ্ঞানের আলাদা একটি শাখা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করে।[4]

আধুনিক অর্থনীতির বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা রয়েছে; কিছু এই বিষয়ের বিবর্তিত চেহারা প্রতিফলিত করে এবং বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। আলফ্রেড মার্শাল তার বই Principles of Economics (১৮৯০)-এ অর্থনীতির সবচেয়ে জনপ্রিয় সংজ্ঞা দিয়েছেন। তার মতে, "অর্থনীতি মানুষের জীবনের সাধারণ ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করে। এটা সম্পদ আহরণ এবং এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং একদিক দিয়ে এটা মানুষের সম্পদ নিয়ে আলোচনা করে অন্যদিকে এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটা মানুষের জীবনের একটি অংশ নিয়ে আলোচনা করে।"

অধ্যাপক মার্শাল বলেন,"অর্থনীতি মানবজীবনের সাধারণ কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করে"।

অর্থনীতির প্রারম্ভিক কথা

অ্যাডাম স্মিথ, The Wealth of Nations গ্রন্থের লেখক (১৭৭৬)

উৎপাদন ও বণ্টন আলোচনার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও অর্থনীতির জনক হিসেবে খ্যাত অ্যাডাম স্মিথ কর্তৃক ১৭৭৬ খ্রীস্টাব্দে রচিত গ্রন্থ An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations নামক গ্রন্থে অর্থনীতিকে ‌‌‌সম্পদের বিজ্ঞান‌ আখ্যায়িত করে বলেন, 'Economics is Science of wealth'। তার সংজ্ঞার মূল বিষয়বস্তু হল সম্পদ উৎপাদন ও ভোগ।

অর্থনীতির সাথে উন্নয়ন সরাসরি সম্পর্কিত। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, "জনসাধারণের সক্ষমতার নামই উন্নয়ন"।

ব্যষ্টিক অর্থনীতি

ব্যষ্টিক অর্থনীতি মূলত ব্যক্তি এবং ফার্ম এর অর্থনৈতিক আচরণ নিয়ে এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বাজার, বিরাজমান দুষ্প্রাপ্যতা ও সরকারি নিয়মাবলির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে। ব্যষ্টিক অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির একটি শাখা যা ব্যক্তি, পরিবার ও ফার্ম কীভাবে বাজারে তাদের বণ্টনকৃত সীমিত সম্পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা নিয়ে আলোচনা করে। বাজার বলতে বোঝায় যেখানে দ্রব্য অথবা সেবাসমূহ কেনা-বেচা করা হয়। দ্রব্য অথবা সেবাসমূহের চাহিদা ও যোগান এইসব সিদ্ধান্ত ও আচরণের উপর কী-ভাবে প্রভাব ফেলে ব্যষ্টিক অর্থনীতি তা নিরীক্ষা করে। বাজারে অবশ্যই একটি দ্রব্য বিদ্যমান থাকবে। এই তত্ত্বে প্রতিটি উপাদানকে ক্রেতা সামগ্রিক চাহিদার পরিমাণকে বিবেচনা করে এবং বিক্রেতা সামগ্রিক যোগানের পরিমাণকে বিবেচনা করে। দাম ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে বাজার ভারসাম্য পৌছে। বৃহৎ দৃষ্টিতে একে চাহিদা এবং যোগানের বিশ্লেষণ বলা হয়। বাজার কাঠামো যেমন পূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং একচেটিয়া বাজার আচরণ ও অর্থনৈতিক ইফিসিয়েন্সি এর জন্য বাধাস্বরূপ। সাধারণ অনুমিত শর্ত থেকে যখন বিশ্লেষণ আরম্ভ হয় এবং বাজারের আন্যান্য আচরণ অপরিবর্তিত থাকে, তাকে আংশিক ভারসাম্য বিশ্লেষণ বলা হয়। সাধারণ ভারসাম্য তত্ত্বে বিভিন্ন বাজারের পরিবর্তন এবং সকল বাজারের সামগ্রিক পরিবর্তন এবং ভারসাম্যের বিপরীতে তাদের গতিবিধি ও আন্তঃসম্পর্ক বিবেচনা করা হয়।

সামষ্টিক অর্থনীতি

সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির নিয়ামকসমূহকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে। সামগ্রিক বলতে জাতীয় আয়জাতীয় উৎপাদন, বেকারত্বের হার ও মূদ্রাষ্ফীতিকে এবং আংশিক সামগ্রিক মোট ভোগ, বিনিয়োগ ব্যয় ও তাদের উপাদানকে বুঝায়। আর্থিক নীতি ও রাজস্ব নীতিকেও ইহা অধ্যয়ন করে। ১৯৬০ সাল থেকে সামষ্টিক অর্থনীতি আরও অনেক ক্ষেত্রে তার বিশ্লেষণ বৃদ্ধি করছে যেমন, বিভিন্ন খাতের ব্যষ্টিকভিত্তিক মডেল, ভোক্তার যৌক্তিকতা, বাজার তথ্যের সঠিক ব্যবহার, অসম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা। এছাড়াও সামষ্টিক অর্থনীতি বিবেচনাধীন উপাদানসমূহের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং একটি দেশের ও দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি নিয়েও বিশ্লেষণ করে। উপাদানসমূহের মধ্যে মূলধন, প্রযুক্তি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য।

অর্থনীতি সম্পর্কিত অন্যান্য ক্ষেত্র, অন্যান্য পার্থক্য এবং শ্রেণীবিভাগ

ব্যষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক উন্নয়নে আচরণিক অর্থনীতি ও পরীক্ষামূলক অর্থনীতি নামে দুটি শাখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেমন, অর্থনৈতিক ভূগোল, অর্থনৈতিক ইতিহাস, সাধারণ পছন্দ, সাংস্কৃতিক অর্থনীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি। অন্যভাবে অর্থনীতিকে দুই ভাবে ভাগ করা হয়। নীতিবাচক অর্থনীতি অর্থনৈতিক আচরণকে ব্যাখ্যা করে, অন্য দিকে ইতিবাচক অর্থনীতি পছন্দ এবং মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়। আবার অর্থনীতিকে মেইনষ্টীম অর্থনীতি ও হেটারোডক্স অর্থনীতি এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। 'Journal of Economic Literature' এ প্রকাশিত 'JEL classification codes' প্রবন্ধে অর্থনীতির শ্রেণীবিভাগ ও প্রবন্ধ ভিত্তিক অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং 'The New Palgrave: A Dictionary of Economics' বইটিতে অর্থনীতির বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ ও উপশ্রেণীবিভাগ বিদ্যমান তা উল্লেখ করা হয়েছে।

গাণিতিক অর্থনীতি ও পরিমাণগত অর্থনীতি

অর্থনীতি একটি অধীতব্য বিষয় যা কখনও জ্যামিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে, কখনও সাহিত্যিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। পল স্যামুয়েলসন তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'Foundations of Economics Analysis'(১৯৪৭)-এ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি সাধারণ গাণিতিক কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন।

    ইকোনোমেট্রিক্স

    ইকোনোমেট্রিক্স অর্থনৈতিক মডেলসমূহের উপাত্ত সম্পর্কিত বিশ্লেষনে গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একটি তত্ত্বে অণুমিত শর্ত ধরা হয় যে অন্যান্য সব কিছু অপরিবর্তিত থেকে একজন বেশি শিক্ষিত ব্যক্তি একজন কম শিক্ষিত ব্যক্তির চাইতে বেশি আয় করবে। অর্থনৈতিক পরিমাপকগুলো বিভিন্ন সম্পর্কের গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে। ইকোনোমেট্রিক্স পরিমাণগত পরিমাপের চিত্র তুলে ধরতে পারে। এগুলো অন্তর্ভুক্ত হয় বিভিন্ন তত্ত্ব পরীক্ষার বা পরিশোধনের জন্য, বিগত চলক গুলোকে বর্ণনা এবং আগামীতে আসবে এ ধরনের চলকের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য।

    জাতীয় পরিমাপ

    জাতীয় পরিমাপগুলো হচ্ছে একটি জাতির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসমূহের সংক্ষেপে প্রকাশিত করার পদ্ধতি। জাতীয় পরিমাপ হচ্ছে দ্বৈত গণনা পদ্ধতি যাতে কিছু তথ্যের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ থাকে। এগুলো জাতীয় আয় ও দ্রব্য পরিমাপ (NIPA)কে অন্তর্ভুক্ত করে, যা এক বছর বা বছরের একটি অংশে উৎপাদিত দ্রব্য এবং আয়কে অর্থ আকারে পরিমাপ করে। নিপা(NIPA) একটি অর্থনীতির গতিপথের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে এবং বাণিজ্য চক্র বা দীর্ঘ সময় ধরে তা পরিমাপ করে। দ্রব্যমুল্যের তথ্যসমূহ সাধারণ ও প্রকৃত পরিমাপের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, যা অতিরিক্ত সময়ের মূল্যস্তর পরিবর্তনের জন্য মোট অর্থের পরিমাণ সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারে। এই জাতীয় পরিমাপগুলো বিনিয়োগ মজুত, জাতীয় সম্পদ এবং আন্তর্জাতিক মুলধন প্রবাহের হিসাবকেও অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।

    অর্থনীতির পরিধি

    কৃষি অর্থনীতি

    কৃষি অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির একটি সর্বপ্রাচীন এবং সুপ্রতিষ্ঠিত শাখা। ইহা কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী অর্থনৈতিক শক্তিসমূহ এবং অর্থনীতির বাকী অংশে প্রভাব বিস্তারকারী কৃষি ক্ষেত্র সমূহকে নিয়ে আলোচনা করে। ইহা হচ্ছে অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা জটিল বিশ্বের প্রকৃত অবস্থার নিরিখে ব্যষ্টিক অর্থনীতির তত্ত্ব প্রয়োগে প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এবং অনেক সাধারণ আবেদনকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়; ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা, গৃহস্থালি আচরণ এবং সম্পদের অধিকার ও প্রাপ্যতার মধ্যে সম্পর্ক। সম্প্রতি এর পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দ্রব্য বাণিজ্য এবং পরিবেশ নীতি অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।

    উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্থনীতি

    গত ২০০০ বছরের বিশ্বের মাথাপিছু জিডিপি হারের চিত্র।.

    প্রবৃদ্ধি অর্থনীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপাদানগুলোকে নিয়ে আলোচনা করে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে একটি দীর্ঘকালীন সময়ে একটি দেশের মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ। বিভিন্ন দেশের মাথাপিছু উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য দেখানোর জন্য এক ধরনের একক ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ উপাদানই বিনিয়োগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের হারকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই উপাদানগুলো তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ভাবে (নিওক্লাসিক্যাল প্রবৃদ্ধি মডেল অনুসারে) এবং প্রবৃদ্ধি পরিমাপে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। নির্দিষ্ট কিছু স্তরে, উন্নয়ন অর্থনীতি স্বল্প আয়ের দেশসমূহ সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কাঠামোগত পরিবর্তন, দারিদ্রতা এবং অর্থনৈতিক প্রগতিকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক হাতিয়ার সমূহকে বিশ্লেষণ করে। উন্নয়ন অর্থনীতি কর্পোরেটবিহীন সামাজিক ও রাজনৈতিক উপাদানসমূহকে কাজে লাগায়।

    অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া

    অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া হচ্ছে অর্থনীতির শাখা যা সামাজিক মালিকানা, পরিচালনা এবং অর্থনৈতিক সম্পদ বণ্টনে পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করে। সমাজের একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া হচ্ছে বিশ্লেষনের একক। আধুনিক পদ্ধতিতে সংগঠনকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও পুঁজিবাদ ব্যবস্থা ভাগে ভাগ করা হয়, যাহাতে বেশির ভাগ উৎপাদন হয়ে থাকে যথাক্রমে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ও বেসরকারী এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে। উভয় ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলে তাকে মিশ্র অর্থনীতি বলা হয়। একটি সাধারণ উপাদান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিসমুহকে সংমিশ্রন করে, যাকে রাজনৈতিক অর্থনীতি বলা হয়। তুলনামূলক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া বিভিন্ন অর্থনীতি বা প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্কযুক্ত শক্তি ও আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

    অর্থব্যবস্থাবিষয়ক অর্থনীতি

    অর্থব্যবস্থাবিষয়ক অর্থনীতি আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে আর্থিক সম্পদ বণ্টন কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে। তাই অর্থব্যবস্থাবিষয়ক অর্থনীতি অর্থ বাজার, আর্থিক সরঞ্জামসমূহ ও কোম্পানীসমূহের আর্থিক কাঠামো সন্বন্ধে আলোকপাত করে।

    ক্রীড়া তত্ত্ব

    ক্রীড়া তত্ত্ব ফলিত গণিতের একটি শাখা যা উপাদান সমূহের মধ্যে কৌশলগত প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশ্লেষণ করে। কৌশলগত ক্রীড়ায় খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের আরোপিত কৌশলসমূহের মধ্যে যেটি তার সুবিধা সর্বোচ্চ করণ করবে সেটি গ্রহণ করবে। ইহা সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী তার প্রতিপক্ষের সহিত ক্রীড়াক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রচলিত নিয়ম ব্যাখ্যা করে থাকে। ক্রীড়া তত্ত্ব বাজার বিশ্লেষণের জন্য সর্বোচ্চ করণ আচরণ উন্নয়নের ধারণা দেয় যেমন চাহিদা ও যোগান মডেল। ১৯৪৪ সালে জন ভন নিউম্যান ও অস্কার মরগেন্সটেরন এর 'Theory of Games and Economic Behavior' এর মাধ্যমে 'ক্রীড়া তত্ত্ব' এর সুত্রপাত হয়। অর্থনীতি ছাড়াও পারমাণবিক কৌশল, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্রীড়া তত্ত্বের প্রয়োগ করা হয়।

    শিল্প সংস্থা

    শিল্প সংস্থা ফার্মসমূহের কৌশলগত আচরণ, বাজার কাঠামো এবং তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। সাধারণ বাজার কাঠামোসমূহ হচ্ছে পূর্ণ প্রতিযোগিতা বাজার, একচেটিয়া প্রতিযোগিতা, অলিগোপলির বিভিন্ন ধরন এবং একচেটিয়া বাজার।

    তথ্য অর্থনীতি

    তথ্য অর্থনীতি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তথ্যের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কীভাবে প্রভাবিত করে তা বিশ্লেষন করে। তথ্য অসংগতি ধারণাটি এক্ষেত্রে গুরুত্ত্বপূর্ন যখন এক পক্ষের অন্য পক্ষের তুলনায় বেশি বা নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকে। তথ্য অসংগতি নৈতিক অবক্ষয়, বিরুপ নির্বাচনের মত সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে, যা চুক্তি মতবাদে বিশ্লেষন করা হয়। তথ্য অর্থনীতি অর্থব্যবস্থা, বীমা, চুক্তি মতবাদ এবং ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

    আন্তর্জাতিক অর্থনীতি

    আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিক সীমান্তসমূহের মধ্যে দ্রব্য ও সেবা প্রবাহ নির্ণয় নিয়ে বিশ্লেষন করে। আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা সামষ্টিক অর্থনীতির একটি অংশ যা আন্তর্জাতিক সীমান্তসমূহের মধ্যে মূলধন প্রবাহ ও এক্সচেঞ্জ রেটের উপর ইহা কি প্রভাব ফেলে তা নিয়ে আলোচনা করে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্রব্য, সেবা ও মূলধনের বাণিজ্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বায়ন।

    শ্রম অর্থনীতি

    শ্রম অর্থনীতি শ্রম বাজার কার্যক্রম ও শ্রম প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে। শ্রমিকমালিকের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শ্রম বাজার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। শ্রম অর্থনীতি শ্রম সেবা প্রদানকারী (শ্রমিক), যে ব্যক্তির শ্রমের চাহিদা রয়েছে (মালিক), মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ, কর্মরত ও বেকার শ্রমিক এবং বেকার সমস্যা সমাধান নিয়ে পর্যালোচনা করে।

    কল্যাণ অর্থনীতি

    কল্যাণ অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির একটি শাখা যা ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একটি অর্থনীতির বণ্টনকৃত দক্ষতা নির্ধারণ ও ইহা সংশ্লিষ্ট আয় বণ্টন নিয়ে আলোচনা করে। ইহা ব্যক্তি ও সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরীক্ষার মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ পরিমাপের চেষ্টা করে।

    পরিবেশ অর্থনীতি

    পরিবেশ অর্থনীতি পরিবেশ দূষণ, উৎসাহ প্রদান বা পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করে। বাস্তবিক পক্ষে উৎপাদন বা ভোগের উপর খারাপ প্রভাব যেমন বায়ু দূষণ বাজার ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। পরিবেশ অর্থনীতি মূলতঃ সরকারী নীতি এইসব ব্যর্থতাকে কীভাবে সমাধান করবে তা নিয়ে আলোচনা করে। সরকারী নীতি কিছু নিয়মকে প্রতিফলিত করে যা ব্যয়-মূনাফা বিশ্লেষন নামে পরিচিত বা বাজার এসব সমাধান করে বিভিন্ন ফি পুনঃনির্ধারণের মাধ্যমে বা সম্পদের অধিকারের সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে।

    আইন ও অর্থনীতি

    আইন ও অর্থনীতি অথবা আইনের অর্থনৈতিক বিশ্লেষন হচ্ছে প্রকৃত তত্ত্বের প্রতিফলন যা আইনে অর্থনৈতিক পদ্ধতিকে প্রয়োগ করে। ইহা প্রকৃত আইনের প্রভাব ব্যাখ্যার অর্থনৈতিক ধারণা, কোন আইন প্রয়োগের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও কোনটি প্রয়োগে কি প্রভাব ফেলে এইসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৬১ সালে রোনাল্ড কজ এর একটি নিবন্ধে পরামর্শ দেয়া হয় যে, সম্পত্তির অধিকার সঙ্গায়িত করা যায় বাহ্যিকতার সমস্যা দিয়ে।

    ব্যবস্থাপনা অর্থনীতি

    ব্যবস্থাপনা অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণে বিশেষ করে ব্যবসায়ী ফার্মসমূহ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। ইহা পরিমাণগত পদ্ধতি যেমন গবেষণা কার্যক্রম ও প্রোগ্রামিং এবং পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি যেমন সংশ্লেষাংক বিশ্লেষণ কোন ঝুঁকি ছাড়াই ও সঠিক প্রক্রিয়ায় তুলে ধরতে পারে। একটি ভাল ধারণা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সফলের সাথে সাথে উৎপাদন খরচ সর্বনিম্নকরণ, মূনাফা সর্বোচ্চকরণ, ফার্মের উদ্দেশ্য এবং প্রযুক্তি ও বাজার পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

    সরকারী অর্থব্যবস্থা

    সরকারী অর্থব্যবস্থা অর্থনীতির একটি শাখা যা সরকারী বিভিন্ন খাতের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট নিয়ে আলোচনা করে। এই বিষয়টি করদাতা নির্ধারণ, সরকারী বিভিন্ন কর্মসূচীর ব্যয়-মুনাফা বিশ্লেষন, বিভিন্ন প্রকার ব্যয় ও করের অর্থনৈতিক দক্ষতা ও আয় বণ্টন এবং রাজস্ব নীতি নিয়ে আলোচনা করে। ইহা ছাড়াও সরকারি পছন্দ তত্ত্ব, সরকারী ক্ষেত্রসমূহে ব্যষ্টিক অর্থনীতির আচরণ এবং ভোটার, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

    চাহিদা ও যোগান

    চাহিদা বিধি
    চাহিদা বিধি

    চাহিদা ও যোগান তত্ত্ব একটি কাঠামোগত যা দ্রব্যের দাম ও পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করে এবং বাজার অর্থনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। সামষ্টিক অর্থনীতি তত্ত্বসমূহে একটি প্রতিযোগিতামুলক বাজারে দ্রব্যের দাম ও পরিমাণ নির্ণয়ে ইহা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইহা একটি বাজার গঠনে অন্য বাজারের কাঠামো ও তত্ত্বগত আচরণের উপর নির্ভর করে স্তম্ভের মত কাজ করে।

    একটি দ্রব্যের বিদ্যমান বাজারে দ্রব্যের পরিমাণ নির্ভর করে তার চাহিদার উপর যেখানে সকল ক্রেতা দ্রব্যটির প্রতিটি একক মূল্যে ক্রয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। চাহিদা মূলতঃ একটি টেবিল বা একটি চিত্রের প্রতিফলন যা দ্রব্যের দাম ও পরিমাণের সাথে সম্পর্কযুক্ত (চিত্রটি লক্ষ করুন)। চাহিদা তত্ত্ব আলোচনা করে যে, ভোক্তা বিদ্যমান আয়, দাম, পছন্দ ইত্যাদিতে যৌক্তিকভাবে প্রতিটি দ্রব্যের বিভিন্ন পরিমাণ পছন্দ করবে। এক্ষেত্রে 'উপযোগ সর্বোচ্চকরণ প্রতিবন্ধক' শব্দটি ব্যবহৃত হয় (চাহিদার জন্য আয় একটি প্রতিবন্ধক)। এখানে 'উপযোগ' প্রতিটি ভোক্তার পছন্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত। উপযোগ এবং আয় অণুসিদ্ধান্তমূলক বৈশিষ্ট্যের মডেলে দ্রব্যের দামের পরিবর্তনে চাহিদার পরিবর্তন নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়। চাহিদা তত্ত্বে বলা হয় যে, একটি বিদ্যমান বাজারে সাধারণত দাম ও চাহিদা বিপরীত সম্পর্কযুক্ত। অন্যভাবে বলা যায় যে, দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে কম ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ও ক্রয়ের ইচ্ছা থাকবে (অন্যান্য সব কিছু অপরিবর্তিত থেকে)। দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায় (আয় প্রভাব) এবং ভোক্তা কম মূল্যের পরিবর্তিত দ্রব্যের দিকে ঝুঁকবে (পরিবর্তক প্রভাব)। অন্যান্য উপাদানও চাহিদার উপর প্রভাব ফেলে; উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আয় বৃদ্ধি পেলে চাহিদা রেখা মূলবিন্দু থেকে দূরে সরবে।

    যোগান হচ্ছে দ্রব্যের দাম ও ঐ দামে বিক্রেতার কাছে থাকা দ্রব্যের পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক। যোগান মূলতঃ একটি টেবিল বা একটি চিত্রের প্রতিফলন যা দ্রব্যের দাম ও সরবরাহকৃত পরিমাণের সাথে সম্পর্কযুক্ত । উৎপাদক মূনাফা সর্বোচ্চকরণ অণুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করে,যার অর্থ উৎপাদক সেই পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করবে যা তার মূনাফা সর্বোচ্চ করবে। যোগান মূলতঃ দাম ও সরবরাহকৃত দ্রব্যের পরিমাণের অণুপাত (অন্যান্য সব কিছু অপরিবর্তিত থেকে)। অন্যভাবে বলা যায় যে, দ্রব্যটির সর্বোচ্চ দামে বিক্রয় করা যাবে, বেশির ভাগ উৎপাদক সেই পরিমাণ দ্রব্য সরবরাহ করে। দাম বৃদ্ধি দ্রব্যের মূনাফা বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। ভারসাম্যের কম দামে দ্রব্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহের পরিমাণ কম থাকবে। ইহা দাম বৃদ্ধি করবে। ভারসাম্যের বেশি দামে দ্রব্যের চাহিদার তুলনায় দ্রব্যের সরবরাহের পরিমাণ বেশি থাকবে। ইহা দাম কমাবে। চাহিদা ও যোগান মডেলে চাহিদা ও যোগান রেখায় নির্ধারিত হয়, দাম ও পরিমাণ স্থির হবে একটি দামে যেখানে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান সমান হবে। ইহা চিত্রে দুটি রেখার পরস্পর ছেদ বিন্দু, যাকে বাজার ভারসাম্য বলা হয়।

    একটি দ্রব্যের বিদ্যমান পরিমাণ চাহিদা রেখায় দাম বিন্দুতে দাম নির্দেশিত হবে বা দ্রব্যের সেই পরিমাণে ভোক্তার প্রান্তিক উপযোগ নির্দেশিত হবে। ইহা দ্রব্যটির উল্লিখিত পরিমাণে কি পরিমাণ খরচ করতে প্রস্তুত আছে তা পরিমাপ করে। যোগান রেখায় দাম বিন্দু প্রান্তিক খরচ নির্ণয় করে অর্থাৎ সেই পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদনে উৎপাদকের মোট ব্যয় বৃদ্ধি নির্ণয় করে। চাহিদা ও যোগান ভারসাম্য দাম নির্ধারণ করে। একটি পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাহিদা ও যোগান ভারসাম্য অবস্থায় উৎপাদন খরচ ও দাম সমান করে।

    চাহিদা ও যোগান উৎপাদনের উপাদানের মধ্যে আয়ের বণ্টন তত্ত্বে ব্যবহার করা হয়, যেখানে বাজার উপাদানের মাধ্যমে শ্রম ও বিনিয়োগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শ্রম বাজারের উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, নিয়োগকৃত শ্রমিকের পরিমাণ ও শ্রমের দাম শ্রমের চাহিদা (উৎপাদকের ক্ষেত্রে) এবং শ্রমের সরবরাহ (শ্রমিকের ক্ষেত্রে) নির্ধারণ করবে।

    চাহিদা ও যোগান পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের আচরণ ব্যাখ্যা করে, কিন্তু বিভিন্ন প্রকার বাজারের কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য ইহার প্রয়োজনীয়তা আদর্শ হিসেবে কাজ করে। চাহিদা ও যোগান বাজার অর্থনীতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির চলকসমূহ ব্যাখ্যাও করে, যেমন দ্রব্যের মোট পরিমাণ ও সাধারণ মূল্যস্তর।

    মূল্য ও পরিমাণ

    চাহিদা ও যোগান বিশ্লেষনে দাম (দ্রব্য বিনিময়ের হার) উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। দাম ও পরিমাণকে বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সবচাইতে বেশি প্রতক্ষ পর্যবেক্ষণ চলক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যোগান, চাহিদা ও বাজার ভারসাম্য তত্ত্বভাবে দাম ও দ্রব্যের পরিমাণের সহিত সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু দাম ও চাহিদা পরিবর্তনের পরিমাপে উপাদানের প্রভাব নির্ণয় করা হয়—তাদের মাধ্যমে, দাম ও পরিমাণ—ফলিত ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে আদর্শ চলক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থনৈতিক তত্ত্বসমুহ বিদ্যমান পরিমাণে দাম কি হবে তা নির্ধারণ করে। বাস্তবিকপক্ষে, দাম ও পরিমাণের পরিবর্তনের ফলে যোগান ও চাহিদা কতটুকু পরিবর্তন হবে তা নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয়।

    চাহিদা ও যোগান তত্ত্ব ভারসাম্য নির্ণয় করে কিন্তু চাহিদা ও যোগানের পরিবর্তনে ভারসাম্য কি গতিতে পরিবর্তিত হয়ে তা নির্ধারিত হবে তা পারেনা। অনেক ক্ষেত্রে, 'দামের স্থিরতা' এর বিভিন্ন কাঠামো দামের চাইতে চাহিদা ও যোগানের পরিবর্তনে স্বল্পকালে দ্রব্যের পরিমাণ নির্ধারণে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। ইহা সামষ্টিক অর্থনীতিতে বাণিজ্য চক্র বিশ্লেষনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দাম স্থিরতার প্রভাব সমাধানে কখনও কখনও বিশ্লেষন করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ভারসাম্যের অনূসিদ্ধান্ত ইহা প্রতিবন্ধকতা হিসাবে ধরা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে,একটি বাজারের দাম স্থিরতা শ্রম বাজারের শ্রম হারকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পূর্নপ্রতিযোগিতা মূলক বাজার থেকে ঐ বাজারে সরবরাহ করে।

    অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে সকল সামাজিক ব্যয় ও মুনাফা গণনা করার জন্য বাজার বিশ্লেষন করা হয়। কখনও কখনও বাহ্যিকতা শব্দটি উৎপাদন ও ভোগ হতে সামাজিক ব্যয় ও মুনাফা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যা বাজার মূল্য থেকে প্রতিফলিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, বায়ু দূষন ঋনাত্বক বাহ্যিকতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষা ধনাত্বক বাহ্যিকতা সৃষ্টি করে। দ্রব্য বিক্রিয়ে সরকারী কর এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধক সমূহ ঋনাত্বক বাহ্যিকতা এবং ভূর্তকি ও অন্যান্য সূবিধা সমুহ দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ধনাত্বক বাহ্যিকতা সৃষ্টি করে সঠিক দাম নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়।

    প্রান্তিকতা

    প্রান্তিক অর্থনৈতিক তত্ত্বে আয় ও সম্পদকে প্রতিবন্ধক বিষয় ধরে ভোক্তা অধিক পছন্দ অবস্থানে পৌঁছতে চেষ্টা করে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। ইহা উৎপাদক তাদের নিজস্ব প্রতিবন্ধক (ভালো পণ্যের চাহিদা, প্রযুক্তি এবং উপাদান মূল্য)-কে বিষয় ধরে মুনাফা সর্বোচ্চ করতে চেষ্টা করে, তা নিয়েও আলোচনা করে। তাই একজন ভোক্তার একটি দ্রব্যের দামের বিপরীতে প্রান্তিক উপযোগ যখন শূন্য হয়, সেই বিন্দুতে ঐ ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি থেমে যায়। একইভাবে একজন উৎপাদক প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয় তুলনা করে, যাকে প্রান্তিক মুনাফা বলা হয়। যে বিন্দুতে প্রান্তিক মুনাফা শূন্য হয় সেখানে উৎপাদন বৃদ্ধি থেমে যায়। ভারসাম্যের দিকে গমন ও ভারসাম্যের মধ্যে পরিবর্তনের ফলে প্রান্তিক বিন্দুসমূহও পরিবর্তিত হয়, তা কখনও কম-বেশি হতে পারে আবার নাও হতে পারে।

    যেকোন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেখানে দুষ্প্রাপ্যতা বিদ্যমান সম্পর্কযুক্ত শর্তসমূহ ও বিবেচ্য বিষয়সমূহ সাধারণ ভাবেই প্রয়োগ করা হয়, তা বাজার নির্ভর হোক কিংবা না হোক। দুষ্প্রাপ্যতা বলতে উৎপাদন যোগ্য বা বিনিময় যোগ্য দ্রব্যের পরিমাণ যা প্রয়োজনীয় উৎপাদনে প্রয়োজন কিংবা প্রত্যাশিত। উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা এক ধরনের শর্তের ধরন যা বিদ্যমান নির্দিষ্ট সম্পদের করনে তৈরি হয়। এ ধরনের সম্পদ প্রতিবন্ধকতা গুলো উৎপাদন সম্ভাবনার তালিকা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ভোক্তা বা অন্য প্রতিনিধির ক্ষেত্রে যদি সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করা হয় উৎপাদন সম্ভাবনা ও দুষ্প্রাপ্যতার ব্যবধান কমে আসবে, যেমন আয়ের ক্ষেত্রে বেকার সময়, সরকারী পণ্যের জন্য বেসরকারী পণ্য, ভবিষ্যৎ ভোগের জন্য বর্তমান ভোগ। প্রান্তিকতাবাদীরা বাণিজ্য-বন্ধ অবস্থাকে পরিমাপের ক্ষেত্রে সূযোগ ব্যয় এর কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের ব্যয়সমূহ বাজার অর্থনীতিতে দামের প্রতিপফলন ঘটায় এবং বাজার অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক দক্ষতা বিশ্লেষণে বা বণ্টন ব্যবস্থা পূর্বনির্ধারিত করতে ব্যবহার করা হয়। একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণকারী অর্থনীতিতে তুলনামূলক ছায়া-মূল্য সম্পর্ক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে সম্পদের ব্যবহারের দক্ষতা অবশ্যই পরিপূর্ণ করতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রান্তিকতাবাদ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাতিয়ার হিসেবে শুধুমাত্র ভোক্তা বা বাজারের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়না, এমনকি ভিন্ন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া এবং আয়ের বৃহৎ বণ্টন ব্যবস্থায় চলক সমূহের সাথে সম্পর্ক ও তাদের প্রভাব নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।

    অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ

    অর্থনীতি হচ্ছে একটি বিষয় যা যুক্তিকে সংশ্লেষাংক পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করে। ইহার লক্ষ্য বস্তুতে তত্ত্ব প্রস্তুতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা অন্যান্য তত্ত্ব থেকে ব্যাখ্যা করা সহজ, অধিক ফলদায়ক এবং দক্ষতাপূর্ন হতে হবে। কখনও কখনও চলক সমূহের সম্পর্ক ব্যাখ্যার জন্য সাধারণ পদ্ধতিতে বিশ্লেষন আরম্ভ করা হয়। জটিলতাকে ceteris paribus (অন্যান্য সবকিছু অপরিবর্তিত থেকে) অণুমিত শর্ত চিহ্নিত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, অর্থ অনূসিদ্ধান্তের পরিমাণ তত্ত্বে অন্যান্য সবকিছু অপরিবর্তিত থেকে মূল্যস্তর ও অর্থের যোগান ধনাত্বক সম্পর্কযুক্ত। এই তত্ত্বে অর্থনৈতিক তথ্য পরীক্ষা করা যায়, যেমন জিডিপির দামের সূচী ও অর্থের যোগান যা নগদ অর্থ ও ব্যাংক ডিপোজিটের যোগফল। অর্থনৈতিক পদ্ধতিসমূহ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার অনূপস্থিতিতে প্রতিযোগিতামূলক ব্যাখ্যার প্রতিক্রিয়া এবং অন্য চলক সৃষ্টি বিশৃংখলা দূরীকরনের চেষ্টাকে অনূমোদন করে। সাম্প্রতিক কালে অর্থনীতিতে পরীক্ষামূলক পদ্ধতিকে বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যা অর্থনীতি হতে কিছু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বৈশিষ্টগত পার্থক্য সৃষ্টিকারী ঐতিহাসিক মতবাদকে চ্যালেঞ্চ ছুঁড়ে দিয়েছে।

    অর্থনৈতিক পদ্ধতিসমূহে সমস্যা বলতে তত্ত্বগত সম্পর্কের জন্য এখানে দ্বি-মাত্রা বিশিষ্ট চিত্র ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে উচ্চ স্তরের ক্ষেত্রে পল সামুয়েলশন অর্থনৈতিক বিশ্লেষনের অবকাঠামোর সমালোচনা করে দেখান যে, বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষার জন্য কীভাবে গাণিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যাকে অর্থনীতিতে পরিচালক অর্থপূর্ন তত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এবং এইসব তত্ত্বসমূহ জটিল তথ্য বিতারন করে।

    অষ্ট্রিয়ান স্কুল অব ইকোনোমিক্সের কিছু বাতিলকৃত গাণিতিক অর্থনীতিতে যুক্তি দেখানো হয়েছিল যে, অর্থনৈতিক বিশ্লেষনে যেকোন অপ্রয়োজনীয় ও ঠিক নয় এমন সরল যুক্তি প্রয়োগ করা যায়। এখনও অর্থনীতিতে মতবাদ ও পদ্ধতি গঠনে বাস্তব-বিশ্ব অবস্থা বর্ণনার জন্য অণুসিদ্ধান্ত-বিয়োজন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, পরবর্তী সময়ের ব্যষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষন অর্থনীতি বহির্ভুত বিষয়াদির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়, যাকে অর্থনৈতিক রাজতন্ত্র নামে অভিহিত করা হয়।

    প্রারম্ভিক অর্থনৈতিক চিন্তাধারা

    প্রাচীন অর্থনীতিতে চিন্তাধারা মেসোপটেমিয়া, গ্রিক, রোমাক, ভারতীয়, চৈনিক, পারস্য এবং আরব সভ্যতার সমসাময়িক। অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনার প্রাচিন লেখকবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন অ্যারিস্টটল, চানক্য, কিন সি হুয়াং, টমাস একুইনাস, ইবনে খালদুন প্রমুখ। জোসেফ সুম্পেটার ১৪শ শতক থেকে ১৭শ শতকের মধ্যে সময়কালকালের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিবেচনা করেছেন "আগত অন্যান্য পক্ষের চাইতে বেশি নিকস্থ বৈজ্ঞানিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠাতা" হিসেবে যেমন প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে আর্থিক, সুদের হার এবং মূল্যতত্ত্ব উদ্ভাবন। ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমাহ আবিষ্কারের পরে সুম্পেটার ইবনে খালদুনকে আধুনিক অর্থনীতির সবচাইতে নিকটস্থ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তার অনেকগুলো অর্থনৈতিক তত্ত্ব অদ্যাবধি ইউরোপে অপরিচিত।

    অন্য দুটি পক্ষ যাদের পরবর্তীতে 'বাণিজ্যবাদী' ও 'বাস্তববাদী' নামে অভিহিত করা হয় এবং এরা অর্থনীতির অবশিষ্ট উন্নয়নে প্রত্যক্ষ প্রভাব রাখেন। উভয় পক্ষই ইউরোপে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ ও আধুনিক পুঁজিবাদ উত্থানের সাথে একমত প্রকাশ করেন। বাণিজ্যবাদ (মার্কেনটাইলিজম) যা উৎপাদনমূলক নীতিগত সাহিত্যে অর্থনৈতিক মূলনীতি হিসেবে ১৬শ শতক থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত পরিচিত ছিল। এই মতবাদে একটি জাতির সম্পদ নির্ভর করে তাদের সংগৃহীত স্বর্ণ ও রৌপ্যের ওপর। একটি জাতি খনি থেকে না হলেও বিদেশে পণ্য রপ্তানী এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যতীত অন্য পণ্য আমদানীর উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে স্বর্ণ ও রৌপ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই মূলনীতিতে রপ্তানীযোগ্য পণ্য তৈরির জন্য সস্তা কাঁচামাল আমদানী এবং রাষ্ট্রীয় নীতিতে বৈদেশিক পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ ও উপনিবেশগুলোতে উৎপাদন বন্ধ করার নীতিকে উৎসাহিত করা হয়।

    ১৮ শতকের একদল চিন্তাবিদ ও লেখক আয় এবং উৎপাদনের চক্রাকার প্রবাহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উন্নয়ন ঘটান। অ্যাডাম স্মীথ তাদের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে ভুল বলে ব্যাখ্যা করেন যদিও সেগুলো এখনও অর্থনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের মতে, একমাত্র কৃষি উৎপাদনই খরচের বেশি মুনাফা বয়ে আনতে পারে; সুতরাং কৃষির ওপরই সম্পদের বিষয়টি নির্ভরশীল। তাই, তারা উৎপাদন বৃদ্ধি ও শুল্ক আরোপ মতবাদে বিশ্বাসী বাণিজ্যবাদীদের বিরোধিতা করেন। তারা কর সংগ্রহের প্রশাসনিক ব্যয়বহূল ব্যবস্থা থেকে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহের পরামর্শ দেন। সমসাময়িক অর্থনীতিবিদগণ ভূমি কর-এর প্রকারভেদকে রাজস্ব করের গঠনমূলক উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন। বাণিজ্যবাদীদের বাণিজ্য নীতির প্রতিক্রিয়ায় লেইসেজ-ফেয়ার নীতি সমর্থন করেন, যাকে অর্থনীতিতে ন্যূনতম সরকারি হস্তক্ষেপ বলে গণ্য করা হয়।

    বুনিয়াদী অর্থনীতি

    ১৭৭৬ সালে এ্যাডাম স্মীথের “The Wealth of Nations” গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর অর্থনীতি একটি আলাদা বিষয় হিসেবে কার্যকরী ভাবে প্রচলিত হয় বলে বর্ণনা করা হয়। এই বইটিতে উৎপাদনের উপাদান হিসেবে ভূমি, শ্রম ও পুঁজিকে নির্ধারণ এবং জাতীয় সম্পদের মূল বণ্টন নিয়ে আলোচনা করা হয়।স্মীথের দৃষ্টিতে আদর্শ অর্থনীতি হচ্ছে একটি স্ব-চালিত বাজার প্রক্রিয়া যা সয়ংক্রিয়ভাবে জনগনের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটায়। তিনি বাজার প্রক্রিয়াকে “অদৃশ্য হাত” বলে বর্ণনা করেন যা প্রতিটি চলককে তাদের স্ব-ইচ্ছায় পরিচালিত করে এবং সমাজের জন্য বৃহৎ মূনাফা বয়ে আনে। এ্যাডাম স্মীথ “লেইসেজ ফেয়ার” নীতি সহ আদর্শবাদী ধারণা সমূহের সমন্বয় ঘটান কিন্তু একমাত্র কৃষি উ ৎপাদনশীল ধারণা প্রত্যাখান করেন।

    তার বিখ্যাত “অদৃশ্য-হাত” দর্শনে স্মীথ যুক্তি দেখান যে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সামাজিক মূনাফার অগ্রগামী প্রান্তের দিকে ধাবিত হয় যদিও ইহা নিম্নমূখী মূনাফার দিকে ধাবিত করে। সাধারণভাবে স্মীথ একে রাজনৈতিক অর্থনীতি ও পরে বুনিয়াদী অর্থনীতি নামকরণ করেন। ১৭৭০ সাল থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য লেখকগন হচ্ছেন থমাস মালথাস, ডেভিড রিকার্ডো এবং জন ষ্টুয়ার্ট মিল।

    যখন এ্যাডাম স্মীথ আয়ের উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তখন ডেভিড রিকার্ডো ভূমি মালিক, শ্রমিক ও পুঁজির মধ্যে আয়ের বণ্টন বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। রিকার্ডো ভূমি মালিক একদিকে এবং অন্যদিকে শ্রম ও পুঁজির মধ্যে বৈপরীত্য লক্ষ্য করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, নির্দিষ্ট ভুমির পরিমাণের বিপরীতে জনসংখ্যা ও পুঁজির বিপরীতে খাজনা বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমিকের বেতন ও মূনাফা হ্রাস পায়।

    থমাস রবার্ট ম্যালথাস নিম্ন জীবনযাত্রার নিম্নমূখীতার ধারণাকে ব্যবহার করেন। তা যুক্তিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে। তার মতে, শ্রমিকের প্রাপ্য কমে তার করন নির্দিষ্ট জমির বিপরীতে জনসংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শ্রমিকের বেতন কমতে থাকে যা জনগনের জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণ করে।

    ম্যালথাস বাজার অর্থনীতিতে পূর্ননিয়োগের স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি অর্থনৈতিক গতিধারার উপর অপূর্ননিয়োগের প্রভাব কম এবং ১৯৩০ সালের জন মায়নার্ড কেইন্স কর্তৃক ব্যবহৃত একটি ধারণা দেন। বুনিয়াদী অর্থনীতির শেষের দিকে জন স্টুয়ার্ট মিল বাজার প্রক্রিয়ার সৃষ্ট বণ্টন ব্যবস্থার অত্যাবশকীয় বিষয় সমূহ নিয়ে পূর্ববর্তী বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদদের সহিত অংশগ্রহণ করেন। মিল বাজার ব্যবস্থার দুটি মূলনীতির পার্থক্য নিয়ে উল্লেখ করেনঃ সম্পদের শ্রেণীবিভাগ ও আয়ের বণ্টন। বাজারকে অবশ্যই সম্পদের সুসম বণ্টন করতে হবে কিন্তু আয়ের বণ্টন নয়। তিনি বলেন, ইহা সমাজের জন্য সময়োপযোগী হতে হবে। বুনিয়াদী তত্ত্বসমুহের মধ্যে মূল্য তত্ত্ব গুরুত্ত্বপূর্ন। স্মীথ লেখেন যে, “real price of every thing ... is the toil and trouble of acquiring it" যা দূস্প্রাপ্যতা থেকে সৃষ্ট হয়। স্মীথের মতে, জমির খাজনা ও মূনাফার সাথে শ্রমের মূল্যের মত অন্যান্য খরচও পণ্যের মূল্যের সহিত যুক্ত হয়। অন্যান্য বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদ গণ স্মীথের মতামতে বিভিন্নতা লক্ষ্য করে ‘মুল্যের শ্রম তত্ত্ব’ নামে একটি তত্ত্ব দেন। বুনিয়াদী অর্থনীতিতে বাজার দীর্ঘ মেয়াদী ভারসাম্যের দিকে ধাবিত হয় বলে নির্ধারণ করা হয়।

    মার্ক্সীয় অর্থনীতি

    জার্মান অর্থনীতিবিদ কার্ল মার্ক্স-এর রচনার ভিত্ততে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার মার্ক্সীয় চিন্তাভঙ্গির উৎপত্তি হয়। বুনিয়াদী অর্থনীতির চিন্তাধারায় মার্ক্সীয় অর্থনীতির আগমন একটি যুগস্রষ্টা ঘটনা। কার্ল মার্ক্সের কাজের মাধ্যমেই ইহা পরিচালিত হয়। তার মূল্যবান কাজের মধ্যে “Capital” এর প্রথম খন্ড ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে জার্মানীতে প্রকাশিত হয়। এই খণ্ডে তিনি ‘মূল্যের শ্রম তত্ত্ব’ এবং পুঁজির দ্বারা শ্রম ব্যবহারে তার চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করেন। তাই, পুঁজিবাদী সমাজে শ্রম ব্যবহার পরিমাপে সাধারণ মূল্য তত্ত্ব থেকে ‘মূল্যের শ্রম তত্ত্ব’ বেশি কার্যকরী যদিও রাজনৈতিক অর্থনীতিতে এটি ঊহ্য রাখা হয়।

    নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি

    ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত কিছু তত্ত্বের সমষ্টি হিসেবে ‘নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি’ বা ‘প্রান্তিক অর্থনীতি’ গড়ে উঠে।নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শালের মাধ্যমে ‘অর্থনীতি’ শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা পূর্বে ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ নামে পরিচিত ছিল। নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি বাজার ভারসাম্যে দাম ও পরিমাণের যুগ্ম নির্নায়ক হিসেবে চাহিদা ও যোগানকে প্রক্রিয়া করন করে, যা উৎপাদিত পণ্য শ্রেণীবিন্যাস ও আয়ের বণ্টনকে প্রভাবিত করে। ইহা চাহিদার ক্ষেত্রে মুল্যের প্রান্তিক উপযোগ তত্ত্বের সমর্থনে বুনিয়াদী অর্থনীতি থেকে মুল্যের শ্রম তত্ত্ব এবং যোগানের দিক হতে আরও সাধারণ ব্যয় তত্ত্ব বিশ্লেষন করে। ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি মূনাফা ও ব্যয় নির্ধারণ করে বিশাল অবদান রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ব্যক্তিগত চাহিদার ‘ভোগ তত্ত্ব’ কীভাবে দাম এবং আয় পরিমাণগত চাহিদা উপর প্রভাব ফেলে তা পৃথকীকরন করে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইহা তড়িৎ প্রতিফলিত হয় এবং কেন্সীয়ান সামষ্টিক অর্থনীতির সহিৎ নব্য বুনিয়াদী মূলনীতি স্থায়িত্ত্ব হয়। নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি কখনও কখনও ধর্মীয় অর্থনীতিকে অণুসরন করে যখন ইহা সমালোচনা কিংবা সহানুভুতির সম্মুক্ষীন হয়। আধুনিক ‘মেইনষ্ট্রীম অর্থনীতি’ গঠিত হয় নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি থেকে কিন্তু অনেক বাছাই প্রক্রিয়ায় দেখা যায় যে, ইহা পূর্বের বিশ্লেষনের খন্ড বা উৎঘাটিত যেমন ইকোনোমেট্রিক্স, ক্রীড়া তত্ত্ব, বাজার ব্যর্থতার বিশ্লেষন ও অপূর্ন প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় আয়ের প্রভাবক দীর্ঘমেয়াদী চলক সমূহ বিশ্লেষনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নব্য বুনিয়াদী মডেল।

    কেন্সীয় অর্থনীতি

    কেন্সীয় অর্থনীতি জন মেনার্ড কেইন্স-এর, বিশেষ করে তার বই ‘The General Theory of Employment, Interest and Money’ (1936), এর মাধ্যমে সৃষ্ট, যা ১৯৩০-এর অর্থনৈতিক মহামন্দা-র প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনীতিকে একটি বিশেষ তত্বের সূচনা করে। কেন্সীয় অর্থনীতি মূল প্রস্তাব অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনার্থে সরকারের তরফে সম্প্রসারণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। বইটি স্বল্প কালে যেখানে মূল্য সম্পর্কযুক্তভাবে অবাধ সেখানে জাতীয় আয়ের নিণায়ক নির্ধারণের উপর বিষয়ের প্রতিফলিত করে। নিম্ন সক্রিয় চাহিদার কারণে শ্রম বাজারে উচ্চ বেকারত্ব অবশ্যই নিবারণ হবেনা এবং কখনও মূল্য গ্রহণযোগ্যতা ও আর্থিক নীতি অকার্যকর হয় কেন কেইন্স তা বৃহৎ আকারে তাত্ত্বিক বিশ্লেষনের চেষ্টা করেছেন। তাই অর্থনৈতিক বিশ্লেষনণ প্রভাবিত করনের ক্ষেত্রে এই বইটিকে বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করা হয়।

    কেইন্সিয়ান অর্থনীতির দুইটি সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কেইন্সিয়ান-পরবর্তী অর্থনীতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির চলক সমূহ ও প্রক্রিয়া সমন্বয়ের উপর জোড় দেওয়া হয়। তাদের মডেল গুলোর জন্য ব্যষ্টিক কাঠামোর বিশ্লেষনে সরল সর্বোচ্চকরন মডেল থেকে বাস্তব জীবন অভ্যাস বেশি মূলভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। ইহা সাধারণত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও জন রবিনসনের কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। নব্য কেইন্সিয়ান অর্থনীতিও কেইন্সিয়ান প্রথা উন্নয়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই গ্রুপের গবেষক গণ ব্যষ্টিক কাঠামোতে ব্যবহৃত মডেল সমূহ ও আচরণ উন্নয়নে অন্য অর্থনীতিবিদদের সহিত প্রচেষ্টা ভাগাভাগি করতেন কিন্তু আদর্শ কেইন্সিয়ান প্রতিচ্ছবির নিম্ন প্রতিফলন যেমন দাম ও শ্রমিকের বেতনের অস্থিতিস্থাপকতা ইত্যাদির কারণে তা এগোতে পারেনি। এগুলো স্বাভাবিকভাবে তৈরি করা হয় মডেলসমূহের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্টের জন্য যতটা না কেইন্সিয়ান-অভিব্যক্তির জন্য সাধারণ অণুমিত শর্তের জন্য।

    অন্যান্য ঘরানা ও ধারণাস্রোত

    অন্যান্য সু-পরিচিত স্কুল বা ধারণার প্রকৃতি সমুহ বিশেষ করে অর্থনীতির বিশেষ ক্ষেত্রে গবেষণা ও যেসব বিশ্বব্যপী পরিচিত ছড়িয়ে থাকা প্রাতিষ্ঠানিক গ্রুপ সমুহ হচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ান স্কুল, শিকাগো স্কুল, ফ্রেইবুর্গ স্কুল, লাউসান্নে স্কুল ও স্টকহম স্কুল। সামষ্টিক অর্থনীতি প্রতিফলিত হয়েছে যাদের সাহিত্যেঃ বুনিয়াদি অর্থনীতি, কেইন্সিয়ান অর্থনীতি, নব্য কেইন্সিয়ান চিন্তাধারা, কেইন্সিয়ান-পরবর্তী অর্থনীতি, আর্থিক অর্থনীতি, নব্য বুনিয়াদি অর্থনীতি এবং যোগান-ভিত্তিক অর্থনীতি।নতুন বিকল্প উন্নয়ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়ঃ পরিবেশ অর্থনীতি, পরিবর্তন সম্পর্কিত অর্থনীতি, নির্ভরশীলতা অর্থনীতি, কাঠামোগত অর্থনীতি এবং বিশ্ব প্রক্রিয়া তত্ত্ব।

    অর্থনীতির ঐতিহাসিক সংজ্ঞার্থসমূহ

    এই বিষয়টি প্রবন্ধের প্রথমে আলোচনা করা হয়েছে।

    সম্পদের সংজ্ঞা

    সম্পদকে বৃহৎ পরিসরে সংজ্ঞায়িত করার সাথে ডেভিড হিউমএডাম স্মিথ কর্মের রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রাথমিক আলোচনা সম্পর্কযুক্ত। হিউম যুক্তি দেন যে, উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যতীত অতিরিক্ত স্বর্ণ মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে। স্মিথ অবশ্য প্রকৃত সম্পদ বলতে বোঝান যে, অতিরিক্ত স্বর্ণ ও রৌপ্য নয়, সমাজে শ্রম ও ভূমির বার্ষিক উৎপাদনই সম্পদ।

    জন স্টুয়ার্ট মিল অর্থনীতিকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে , "the practical science of production and distribution of wealth" অর্থাৎ অর্থনীতি হচ্ছে উৎপাদন ও সম্পদ বণ্টনের ব্যবহারিক বিজ্ঞান। এই সংজ্ঞাটি Concise Oxford English Dictionary কর্তৃক গৃহীত হয়েছে এমনকি ভোগের মূলনীতিও এর অন্তর্ভুক্ত হয়নি। মিলের কাছে সম্পদ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের ভান্ডার। সম্পদকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে উৎপাদন ও ভোগের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই গুরুত্বারোপকে সমালোচকরা মানুষকে নেপথ্য ভুমিকায় রেখে সম্পদের উপর বেশি আলোকপাত করা হয়েছে বলে সমালোচনা করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, জন রাস্কিন রাজনৈতিক অর্থনীতিকে ধনীদের বিজ্ঞান ও জারজ বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করেছেন।

    কল্যাণ সংজ্ঞা

    পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে মানুষ, মানবীয় কার্যাবলী ও মানব কল্যাণের বিষয়টি সংঙ্গার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে, যতটা না সম্পদ অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৯০ সালে আলফ্রেড মার্শাল তার ‘Principles of Economics’ বইয়ে লিখেন যে, "Political Economy or Economics is a study of mankind in the ordinary business of Life; it examines that part of the individual and social action which is most closely connected with the attainment and with the use of material requisites of well-being." অর্থাৎ রাজনৈতিক অর্থনীতি বা অর্থনীতি হচ্ছে মানবিক জীবন যাপনের অধ্যয়ন; ইহা ব্যক্তি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ বিশেষ অংশ বিশ্লেষন করে যা প্রাপ্য ও বস্তুগত উন্নয়নে ব্যবহৃত জিনিসের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কযুক্ত।

    অর্থনীতি কি একটি বিজ্ঞান?

    বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, এর অনুসিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারে যার উপাত্ত সমূহ পরীক্ষা করা যায় এবং যেখানে একই শর্তের বিপরীতে ফলাফল প্রতিবার একই আসবে। অর্থনৈতিক পরীক্ষার বেশ কিছু ফলিত ক্ষেত্র সমুহে পরিচালনায়ঃ পরীক্ষামুলক অর্থনীতি ও ভোক্তার আচরণ, পরীক্ষায় মানবীয় বিষয়ের আলোকপাত; এবং ইকোনোমেট্রিক্সের শাখা সমুহ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার মাধ্যমে অনুপস্থিত উপাত্তের পরীক্ষায় আলোকপাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কখনও কখনও একই বিষয়ে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানে কি বলা হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের জন্য মানবীয় বিষয় সংশ্লিষ্ট আদর্শ ও ব্যবহারিক সংক্রান্ত নিয়মিত পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

    সামাজিক বিজ্ঞান হচ্ছে পর্যবেক্ষণমুলক বিজ্ঞান বা কখনও বিজ্ঞান, ইহা বিংশ শতাব্দীর একটি বিতর্কের বিষয়। কিছু দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বিশেষ করে কার্ল পপ্পার ঘোষণা করেন যে, পর্যবেক্ষণমূলক অণুসিদ্ধান্ত, অণুপাত বা তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক বলা যাবেনা যতক্ষন ইহা পর্যবেক্ষণে প্রত্যাখান, মিথ্যে প্রমাণিত হবেনা। সমালোচনা কারীরা অভিযোগ করেন যে, অর্থনীতি সবসময় সঠিক ফলাফল ধার্য করতে পারেনা, কিন্তু অর্থনীতিবিদগণ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার অনেক উদাহরণ দেন যে এগুলো পরীক্ষাগার ছাড়াই সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে। অর্থনীতিতে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা সামাজিক আচরণের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কযুক্ত এবং অর্থনীতি অ-দৈহিক যুক্তির কারণে প্রাকৃতিক আইন বা চিরন্তন সত্য নয়। এটাই অর্থনীতিকে বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করাকে সমালোচিত করে। সাধারণত অর্থনীতিবিদ গণ কঠিন পরিস্থিতির বর্তমানে ই ঘটতে পারে তারই উত্তর দেন, ইকোনোমেট্রিক্স এর মত পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি এবং বাস্তব জগতের উপাত্ত ব্যবহার করে অণুসিদ্ধান্ত পরীক্ষা করেননা। পরীক্ষামুলক অর্থনীতি গবেষণাগার কাঠামোয় অর্থনৈতিক তত্ত্ব সমুহের অন্তত কিছু ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষার প্রচেষ্টা করে- যা ভেরন স্মিথডানিয়েল কানমানকে ২০০২ সালে Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel পুরস্কার এনে দেয়।

    তবুও বিশ্লেষনের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে অর্থনৈতিক মডেলের যোগাযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক ডিরড্রে ম্যকক্লোস্কি ‘ম্যকক্লোস্কি বিশ্লেষন’ এর মাধ্যমে ইকোনোমেট্রিক্সের[ অন্যান্য অধ্যাপকগণের মত মডেলের সারমর্ম প্রয়োগ প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত করার জন্য কিছু উপাত্ত ব্যবহার করতে সমর্থ হন। তিনি যুক্তি দেন যে, বিশ্লেষনধর্মী সমীকরনের সম্প্রসারণে অর্থনীতি বিদদের বৃহৎ প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়ে থাকে। ইকোনোমেট্রিক্সবিদগণ উত্তর দেন যে, এটা শুধুমাত্র অর্থনীতি নয় বিজ্ঞানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ। ম্যকক্লোস্কি জটিল বিশ্লেষনের সমালোচনায় বলা হয় যে, অন্যান্য জিনিসের সাথে অর্থনৈতিক বিশ্লেষন সারমর্ম ধর্মী এ ধরনের উদাহরণ তিনি এড়িয়ে গেছেন এবং তার অভিযোগ অযৌক্তিক।

    নোবেল প্রাইজ বিজয়ী ও দার্শনিক ফ্রেডরিক হায়েক বলেন যে, অর্থনীতি হচ্ছে একটি সামাজিক বিজ্ঞান, কিন্তু যুক্তি দেওয়া হচ্ছে দৈহিক বিজ্ঞানের মত পদ্ধতি অর্থনীতিতে ব্যবহার করা হলে তা ভুল ফলাফল বয়ে আনবে এবং একে অবৈজ্ঞানিক মনে করা হয় যখন যান্ত্রিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের চিন্তাধারার আচরণের সরল বিষয় গঠিত হয়।

    কৌতুক করে অর্থনীতিকে “দূর্ভাগ্য বিজ্ঞান” বলা হয়। এতদ্বসত্তেও উনিশ শতকে তর্কযুক্তির মাধ্যমে ইহার সঠিক ভিত্তি গড়ে উঠে যদিও অর্থনীতি নামকরণ নিয়ে কটূক্তি করা হয়।

    অণুমিত শর্তের সমালোচনা

    অর্থনীতিতে অর্থনীতিবিদদের কর্তৃক কতিপয় মডেল ব্যবহৃত হওয়ায়, আবার কখনও অন্যান্য অর্থনীতিবিদ যারা অবাস্তবতার প্রতি বিশ্বস্ত, পর্যবেক্ষণ বিহীন বা পর্যালোচনা বিহীন অণুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে, ফলে ইহা সমালোচিত হয়। গুরুত্ত্বপূর্ন নয় এমন বিষয়ের ফলাফল থেকে গৃহীত অবাস্তব অণুসিদ্ধান্ত সমালোচনায় সাড়া মেলে এবং জটিলতা পূর্ণ বিশ্বে ইহার প্রয়োজন রয়েছে যা, অর্থনীতির দার্শনিক মতবাদের সহিৎ সামঞ্জস্যপুর্ন অবাস্তব অণুমিত শর্তের অধিক গ্রহণযোগ্য, কেননা এ ধরনের অণুমিত শর্ত অর্থনৈতিক জ্ঞানের জন্য অপরিহার্য। একটি গবেষণায় ইহাকে “গৃহীত প্রতিরক্ষা” নামে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং সারমর্মে বলা হয়েছে এই “গৃহীত প্রতিরক্ষা” অবাস্তব অণুমানকে সমালোচনার অগ্রহণযোগ্য হয়না। কখনও কখনও ইহা গুরুত্ত্বপূর্ন যে, একটি স্কুলের বিষয়সমুহের মধ্যে ইহা অধিকতর বিবেচ্য, সেখানে সকল অর্থনৈতিক বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং অন্তর্নিহিত সত্য অণুধাবনে পর্যবেক্ষণমুলক-বিবেচনা অধিক বলে বহু সংখ্যক পরিবর্তক ক্ষেত্র অভিযোগ করে।

    অণুমিত শর্ত ও পর্যবেক্ষণ

    অর্থনীতির সমালোচনার অধিকাংশই এই ধারণার কেন্দ্রবিন্দুতে বিচরন করে যে, অর্থনীতির কাঠামোগত অভিযোগ গুলো পরীক্ষামূলক প্রমাণ ছাড়াই প্রশ্নাতীত অণুমান। অনেক অর্থনীতিবিদ এইসব ধারণার উদাহরণ দিয়ে প্রতিউত্তরে বলেছেন যে, অর্থনীতিতে ব্যবহারের জন্য “গৃহীত মূলনীতি” কে বিবেচনা করা হয়েছে এবং যা পরীক্ষামুলক পর্যবেক্ষণের সহিৎ সামঞ্জস্যপূর্ন ( নিম্নের তিনটি উদাহরণ দেখুন), কখনও কখনও একমত পোষন করেছেন যে, এই পর্যবেক্ষণ গুলোর মূল অণুমিত শর্ত মুলতঃ অধিক সরলতা সমস্যা সংবলিত।

    অনেক অর্থনীতিবিদ “অণুমিত শর্ত” থেকে পর্যবেক্ষণ মুলকে পরিবর্তিত হওয়া ধারণার উদাহরণ দিয়েছেন, তা নিম্নরুপঃ

    • যৌক্তিকতা= নিজস্ব-পছন্দঃ ইহাকে একটি সাধারণ মূলনীতি হিসেবে গণ্য করা যায় এবং অনেক মেইনস্ট্রীম অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন যে, যৌক্তিকতা নিজস্ব-পছন্দ ও এধরনের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।ইহা কখনও কখনও সুরক্ষিত নিঃস্বার্থপর মুলনীতি হয়না। নিঃস্বার্থপর মুলনীতি দেখা যায় যখন কেউ স্বপ্রনোদিত হয়ে অন্যের উপকার করে। অন্যরা অভিযোগ করে নিঃস্বার্থপর মুলনীতির জন্য অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া যায়না এবং ইহা বিশ্বায়ন বিপদসঙ্কুল-অপরাধী এর চাইতে বেশি নিরুৎসাহিত করে। একজন যুক্তিযুক্ত ব্যক্তি যদি নিঃস্বার্থপর না হন, তাহলে অন্য ব্যক্তি চিরতরে স্বার্থপর হতে পারে। কখনও কখনও এই “গৃহীত মূলনীতি” বিভিন্ন পরীক্ষা এমনকি নিঃস্বার্থপর মুলনীতির বিষয়বস্তু হতে পারে, যখন সকল সামাজিক চাপ বিবেচিত হয়, কিংবা নিজস্ব-পছন্দের ধাঁচে প্রক্রিয়াকরন হয়।

    ......... আয় বৃদ্ধি প্রবণতা = ভোগঃ ইহাকে একটি গৃহীত মূলনীতি হিসেবে গণ্য করা যায় এবং অনেক মেইনস্ট্রীম অর্থনীতিবিদ ধারণা পোষন করেন যে, মানব জাতি ভোগে সুখী এবং ভোগ ব্যতীত অসুখী। সন্তুষ্ট করতে সমর্থ্য নয় এমন বিষয়ের অন্যান্য সাধারণ অণুমিত শর্ত যোগ করা যায় যা মানুষকে কখনও সূখী করতে পারেনা। যদিও মূল মতাদর্শ অধিক সরলতা সমস্যা যুক্ত ( বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদদের প্রতনিধিগণ আজকের দিনে বিশ্বাস না করতেও পারেন), বর্তমানে পর্যবেক্ষণমুলক পরীক্ষা আয় বৃদ্ধি প্রবনতার ধারণা ও আয়ের এরকম উপাদানের সম্পর্ক নিশ্চিত করে। ......... স্বয়ংক্রিয়তাঃ কিছু মেইনস্ট্রীম অর্থনীতিবিদ ইহা নিয়ে ধারণা পোষন করেন যে, মানব জাতি আদর্শবাদী, তারা স্বাধীনতা পছন্দ করে। ইহা অর্থনীতি ও অর্থনীতিবিদদের বিশেষ কিছু ধারণার অন্য ধরনের সরলতা প্রকাশ করে। প্রতিনিধি নির্ভর মডেল তৈরি ও পরীক্ষামুলক অর্থনীতি ফলাফল দেয় যা এই তত্ত্বকে নির্দেশনা করে।

    গৃহীত মূলনীতির সাধারণ প্রতিরক্ষা হচ্ছে যে ইহা সমস্যার সমধান তৈরি করতে পারে। কখনও কখনও নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায় অর্থনৈতিক গবেষণার মাধ্যমে বিশেষ পর্যবেক্ষণের পর মূল অণুমিত শর্ত সমুহ আরও বাছাই করা করা হয় এবং আদর্শবাদী অর্থনীতিতে কৌশলগত ভাবে “গৃহীত মূলনীতি” দীর্ঘস্থায়ী হয়না।

    পারস্পরিক বৈপরীত্যের সমালোচনা

    অর্থনীতি হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল ও চিন্তাধারা গবেষণার একটি ক্ষেত্র। ফলে ইহাতে বিবেচনাধীন মতামত, আচরণ ও তত্ত্ব বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান লাভ করে। কিছু বিরোধী বিষয়বস্তু বা ভিন্ন অণুমিত শর্তের অংশসমুহের কারণে পারস্পরিক বিরোধিতা হয়ে থকে।

    কল্যাণ ও দূস্প্রাপ্যতার অর্থনৈতিক সংজ্ঞার সমালোচনা

    অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনায় বলা হয়েছে ইহা অতি নিম্ন বস্তুগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, একজন ডাক্তার বা নৃত্য শিল্পীর সেবা ইহাতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। একটি শ্রমতত্ত্বে অবস্তুগত সেবার পারিশ্রমিকের যোগফলে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায় যা অসম্পূর্ণ। কল্যাণকে সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায়না, কারণ ধনী ও গরিবের কাছে অর্থের প্রান্তিক গুরুত্ত্ব ভিন্ন ( যেমন ১০০ টাকা গরিবের কাছে ধনীর চাইতে অনেক বেশি গুরুত্ত্বপূর্ন)। তারপরও এ্যালকোহল এবং ধূমপানের মত পণ্যের উৎপাদন ও বণ্টন কার্যক্রম মানব কল্যাণে সাহায্য করেনা কিন্তু এইসব অপর্যাপ্ত পণ্য প্রাকৃতিক ভাবে মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পুরন করে। মার্ক্সীয় অর্থনীতিতে এখনও কল্যাণ সংজ্ঞার উপর আলকপাত করা হয়। ইহা ছাড়াও আদর্শবাদী অর্থনীতি শুরুতে কিছু সমালোচনায় যুক্তি দেওয়া হয় যে, বর্তমান অর্থনৈতিক চর্চা কল্যাণ পরিমাপে যথোপযুক্ত নয়, কিন্তু একমাত্র মুদ্রাবাদীদের কল্যাণের অপর্যাপ্ত সাফল্য রয়েছে। নব্য-বুনিয়াদী অর্থনীতিতে চলমান নিয়ন্ত্রণে দুস্প্রাপ্যতার উপর আলোকপাত করা হয় যা বেশির ভাগ প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি বিভাগে প্রচলিত করা হয়। সম্প্রতি বছর গুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি উদ্বৃত্ত অর্থনীতি সহ ইহা বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হচ্ছে।

    অর্থনীতি ও রাজনীতি

    জন স্টুয়ার্ট মিল বা লিওন ওয়ালার্স এর মত কিছু অর্থনীতিবিদ উল্লেখ করেন যে, সম্পদ উৎপাদনকে ইহার বণ্টনের সহিত আবদ্ধ করা যায়না। “ফলিত অর্থনীতি” এর প্রাথমিক ক্ষেত্রে যা পরবর্তীতে “সামাজিক অর্থনীতি” নামে পরিচিত হয়েছে এবং এতে ক্ষমতা ও রাজনীতি নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থনীতি একটি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে কোন সরকার বা অন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। কখনও কখনও উচ্চপদস্থ নীতি নির্ধারক বা ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে পারে যারা অর্থনৈতিক তত্ত্বের ধারণা অধিক ব্যবহারকারী এবং নীতিগত এজেন্ডা ও মূল্য প্রক্রিয়ার বাহক হিসেবে পরিচিত এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয় উল্লেখকে সীমিত করেনা। অর্থনৈতিক তত্ত্বের সহিৎ নিবিড় সম্পর্ক ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট চর্চা হচ্ছে একটি যৌক্তিক প্রতিফলন যা অর্থনীতির অধিকাংশ সরল মূলনীতির ছায়া অথবা বিপরীত আকৃতির এবং তা কখনও কখনও বিশেষ সামাজিক এজেন্ডা ও মূল্য পদ্ধতিকে বিভ্রান্তি করে। স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়ের মত একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারী বিবৃতি বা সামষ্টিক অর্থনীতির মূলনীতি (আর্থিক নীতি ও রাজস্ব নীতি) হচ্ছে যুক্তি এবং সমালোচনার প্রতিফলন।

    আদর্শ ও অর্থনীতি

    উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২১ শতকে ইউএস গনতন্ত্র উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সমন্মিত করতে সম্ভব করে, ১৯ শতকে কার্ল মার্ক্সের অবদান বা পুঁজিবাদ বনাম সমাজবাদ বিতর্ক নিয়ে ঠান্ডা যুদ্ধ অর্থনীতির বিবেচ্য বিষয়। তারপরেও অর্থনীতি কোন ধরনের মূল্য অভিযোগ সৃষ্টি করেনা, ফলে ইহা একটি কারণ হতে পারে যে, অর্থনীতি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা এবং অণুসিদ্ধান্ত পরীক্ষার উপর ভিত্তি না করেই পূর্বাভাস দেয়। একটি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ ফলাফলের উপর এবং একই পদ্ধতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় গঠন ও মূল্য বিচার ছাড়াই অন্যান্য অর্থনৈতিক পদ্ধতির দক্ষতা আলোকপাত করতে চেষ্টা করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, স্বত্বাধিকারী পদ্ধতি, সমঅধিকার পদ্ধতি বা সমাজের উচ্চ শ্রেণীর পদ্ধতির অর্থনীতিতে তাদের যোগ্যতা বাচ-বিচার ছাড়াই প্রয়োগ করা হয়।

    নৃবিজ্ঞান ও অর্থনীতি

    অর্থনীতি ও দর্শনের সম্পর্ক জটিল। অনেক অর্থনীতিবিদ পছন্দ এবং মূল্য বিচারকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে যেমন অর্থনীতির পরিধির বাইরে প্রয়োজন বা অভাব বা সমাজের জন্য কোনটা উত্তম, রাজনৈতিক হবে না ব্যক্তিগত হবে। কোন সময়ে একজন ব্যক্তি বা সরকার তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে অর্জন কতটুকু হওয়া উচিত অর্থনীতি ইহার অন্তর্নিহিত সত্য প্রকাশ করতে পারে। অন্য দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক ধারণার প্রভাব যেমন, আধুনিক পুঁজিবাদে অন্তর্নিহিত বিষয়াদি, মূল্য প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে পারে যদিও ইহা কাম্য কিংবা অকাম্য হউক ( উদাহরণ দেখুন, ভোগবাদ এবং ক্রয় বিহীন দিবস)। কিছু চিন্তাবিদের মতে, অর্থনীতির একটি তত্ত্ব বা ব্যবহার করা হচ্ছে একটি মানবিক বিচার তত্ত্ব। মানবিক ভোগবাদের পূর্ব অণুমান হচ্ছে একজন যখন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিবে অবশ্যই মানবিক ও পরিবেশ ধারণাকে বিবেচনায় আনবে, এছাড়াও আর্থিক ও বাণিজ্যিক অর্তনীতি বিবেচনা করবে। অন্য দিকে, যৌক্তিক সীমিত সম্পদের বণ্টন সাধারণ কল্যাণ ও অর্থনীতির একটি ক্ষেত্রের অভাব পুরন করে। কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে গবেষণার উত্তম পন্থা হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সন্তুষ্ট, পরিবেশ, বিচার বা মহাদূর্যোগে সহায়তার মত লক্ষ্য পুরনে সম্পদের বণ্টন হচ্ছে ঐচ্ছিক লুকায়িত যা, সাধারণ কল্যাণ কিংবা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভোগান্তির চাইতে কম। এই ধারণায় মনে করা হয় যে, ইহা অমানবিক এবং এ ধরনের বিষয় অর্থনীতিতে আসতে পারেনা। এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য প্রতিনিধিগণ নিয়মিত অর্থনৈতিক বিশ্লেষন গবেষণায় মিলিত হন।

    সামাজিক প্রভাব

    কেউ বলতে পারেন যে, অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী বাজার কাঠামো ও দুস্প্রাপ্য পণ্য বণ্টনের অন্যান্য উপায় সমুহ শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা ও অভাবের উপর প্রভাব ফেলেনা, চাহিদা ও আচরণের উপরও প্রভাব ফেলে। অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রে বলা হয় যে, পছন্দ হচ্ছে অতীতের ইচ্ছা ব্যতিরেকে বিবেচ্য, কখনও সামাজিক শর্তারোপ করা হয় কারণ মানুষ মানসম্পন্ন জীবন যাপন কামনা করে। অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে ইহা একটি চরম বিতর্কের বিষয় যাকে কল্যাণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ও কাম্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক প্রভাবক সমুহের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তারা যুক্তি দেখান যে, সম্পদের পুনঃবণ্টন মানবিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ভুল। সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিতে সামাজিক ক্ষেত্রে ইহা একটি অর্থনৈতিক ব্যর্থতা। তারা যুক্তি দেখান যে,সম্পদের অসমতা প্রাথমিক আলোচনায় গ্রহণযোগ্য নয়।ইহা উনিশ শতকে শ্রম অর্থনীতি ও বিশ শতকে কল্যাণ অর্থনীতি উভয়কে মানব উন্নয়ন তত্ত্বে প্রবেশের পূর্বে পরিচালিত করে।

    অর্থনীতির পুরনো বিষয় ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বিশেষ করে কিছু অর্থনীতিবিদ যেমন মার্ক্সবাদী অর্থনীতিবিদগন দ্বারা অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে। ইহা বাজার অর্থনীতির বিশেষ বিষয়ের বা উদাহরণের সাথে সমোঝতা বিহীন নির্দেশনা প্রকাশ করে। রাজনৈতিক অর্থনীতি অর্থনৈতিক বিশ্লেষনে সামাজিক রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে অন্তভূক্ত করে এবং সেখানে উন্মুক্ত ভাববাদ বিদ্যমান, যদিও আদর্শবাদের অভিযোগ থাকলেও ইহাকে বৃহৎ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক নির্দেশনা বলা হয়। কিছু মুলবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ে ( বেশির ভাগ যুক্তরাজ্যে) ‘অর্থনীতি’ বিভাগের তুলনায় ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বিভাগ বেশি রয়েছে।

    মার্ক্সবাদী অর্থনীতি সাধারণত অর্থের বাণিজ্য সময়কে পরিহার করে। মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে, বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সম্পদের বণ্টনের জন্য মুল উৎস উৎপাদনের হাতিয়ারের উপর সম্মিলিত নিয়ন্ত্রণ। কোন নির্দিষ্ট বস্তুগত সম্পদের দুস্প্রাপ্যতা উৎপাদনের হাতিয়ারে শক্তি ভিত্তিক সম্পর্ক তৈরির কেন্দ্রীয় আলোচনায় গৌন বিষয়।

    রাজনীতিতে অর্থনীতি

    অর্থনীতির বাস্তব ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেয়া হয়, যা আলোচিত হয়ে আসছে “১৯০০ সাল হতে অর্থনীতির মুল পরিবর্তন” নামে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের একটি মূল, বিদ্যালয় বা বিভাগ থাকে যা বিষয়কে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেয়, যেমন কলা বিভাগ, বাণিজ্য বিভাগ। “Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel” (যাকে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার বলা হয়) হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের জন্য একটি বাৎসরিক পুরস্কার যা এই বিষয়ে জ্ঞান সমৃদ্ধ অবদানের জন্য দেয়া হয়। বেসরকারী খাতে যেমন শিল্প, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে অর্থনীতিবিদগন পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অর্থনীতিবিদগন সরকারি বিভিন্ন বিভাগে এবং প্রকল্পে যেমন রাজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পরিসংখ্যান ব্যুরো ইত্যাদিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

    প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি

    মরিয়ম-ওয়েবস্টার অভিধানে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা বলতে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যেকার অন্য কোন তৃতীয়পক্ষের অংশগ্রহণে অধিকতর ভালো পণ্য বা সেবার আশ্বাস নিয়ে অগ্রসর হওয়াকে বুঝায়।[5] এ বিষয়ে ১৭৭৬ সালে দি ওয়েলথ অব নেশন্স গ্রন্থে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ উল্লেখ করেছেন।[6] বাজার অর্থনীতিতেও প্রতিযোগিতা বৃহৎ ভূমিকা পালন করে এবং একই স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। অনেক সময় অর্থনীতিতে তা অসুস্থ প্রতিযোগিতা নামে আখ্যায়িত হয়। উন্নয়নশীল দেশে প্রায়শঃই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার কাছে দেশী ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারে না। সভা-সমাবেশ, উন্নততর পণ্য, সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সচেষ্ট হয়।

    তথ্যসূত্র

    1. Krugman, Paul; Wells, Robin (২০১২)। Economics (3rd সংস্করণ)। Worth Publishers। পৃষ্ঠা 2আইএসবিএন 978-1464128738।
    2. Backhouse, Roger (২০০২)। The Penguin history of economics। London। আইএসবিএন 0-14-026042-0। ওসিএলসি 59475581The boundaries of what constitutes economics are further blurred by the fact that economic issues are analysed not only by 'economists' but also by historians, geographers, ecologists, management scientists, and engineers.
    3. Break Up the Anthropocene। University of Minnesota Press। ২০১৯-০৫-২৯। পৃষ্ঠা 41–50।
    4. "Free, Rhona C., ed. (2010)."
    5. "Definition of COMPETITION"www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-৩০
    6. George alike, George alike; George alike, George alike; George alike, George alike; George alike, George alike; George alike, George alike; George alike, George alike; George alike, George alike; George alike, George alike; George alike, George alike (২০১১-০১-২১)। "MyFavoritegamez.com - Free Online Games For Kids"SciVee। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-৩০

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.