অর্জুন রথ

অর্জুন রথ হল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কাঞ্চীপুরম জেলায় বঙ্গোপসাগরের তীরে করোমণ্ডল উপকূলে মহাবলীপুরমে অবস্থিত একটি পল্লব স্থাপত্যের নিদর্শন। এটি খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এটি আদি দ্রাবিড় স্থাপত্যের নিদর্শন। এটি একটি একশিলা ভারতীয় পাথরখোদাই স্থাপত্য। পল্লব রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মণ ও তার পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মণ (৬৩০-৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ) এই স্থাপত্যের নির্মাতা। এটি পঞ্চরথ স্মারকস্থলের অন্যতম স্মারক।[1] অণুমান করা হয় যে, এটি ধর্মরাজা রথের আগেই নির্মিত হয়েছিল এবং ধর্মরাজা ও ভীম রথের মতো এটিও আগে তৈরি একটি কাঠের রেপ্লিকার প্রতিকৃতি।[1][2] অর্জুন রথ সহ মহাবলীপুরমের স্মারক স্থাপত্যগুলিকে ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো "মহাবলীপুরম স্মারকস্থল" ("গ্রুপ অফ মনুমেন্টস অ্যাট মহাবলীপুরম") নামে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।[3]

অর্জুন রথ
অর্জুন রথ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাকাঞ্চীপুরম জেলা
অবস্থান
অবস্থানমহাবলীপুরম
রাজ্যতামিলনাড়ু,
দেশভারত

ভূগোল

কাঞ্চীপুরম জেলায় বঙ্গোপসাগরের করোমণ্ডল উপকূলে মহাবলীপুরমে (আগেকার নাম মামল্লপুরম) অর্জুন রথ স্থাপত্যটি অবস্থিত। এটি তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই (আগেকার নাম মাদ্রাজ) থেকে প্রায় ৩৫ মাইল (৫৬ কিমি) দূরে অবস্থিত।[4] চেঙ্গলপট্টু থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ মাইল (৩২ কিমি)[5]

ইতিহাস

এই রথ বা অন্য চারটি রথের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রাচীন ভারতের কোনো স্থাপত্যের মধ্যেই দেখা যায় না। তবে, এই পাঁচটি রথ ছিল ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যধারার মডেল। পঞ্চরথের অন্য পাঁচটি রথের মতো এটিও একটি কাঠের মডেলের আদলে নির্মিত হয়েছিল।[2] এটি একটি একশিলা মন্দির হিসেবে পরিচিত। তবে এটিকে প্রথাগতভাবে মন্দির বলা যলে না। কারণ, এই স্থাপনাটি অসম্পূর্ণ।[6] মন্দিরের চূড়ার কাছে একটি অখোদিত অংশ দেখা যায়। তাছাড়া এই রথগুলি হিন্দু শাস্ত্রসম্মত পদ্ধতিতে মন্দির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।[4] ৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজা নরসিংহবর্মণের মৃত্যু হলে মন্দিরগুলি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পরিত্যক্ত হয়।[7][8]

স্থাপত্য

পঞ্চরথ স্থাপত্যগুলি উত্তর-দক্ষিণে একটি সাধারণ পীঠের উপর গড়ে তোলা হয়েছিল। এই পীঠটি সামান্য ঢালু। ভারতীয় স্থাপত্যে এই ধরনের নির্মাণের কোনো নিদর্শন এর পূর্ববর্তী যুগে দেখা যায়নি। এগুলি সম্ভবত "অণু-মন্দির" (অর্থাৎ, বড়ো মন্দিরের মডেল) হিসেবে গড়ে উঠেছিল।[8] এগুলি একশিলা মন্দির হলেও সাধারণ মন্দিরের আকারেই পাথর খোদাই করে নির্মিত হয়েছিল। তাই এগুলিকে "আধা-একশিলা মন্দির" বলা হয়।

অর্জুন রথের বাইরের দেওয়ালের খোদাইচিত্র।

নকশা

এই রথটির নকশা সরল প্রকৃতির। এটি একটি ছোটো প্রাসাদের আকৃতিবিশিষ্ট। এটি একটি সরু আকারের পাথরের উপর খোদাইকাজের মাধ্যমে নির্মিত। রথটি সৈকতে বালির উপর স্থাপিত। উত্তর অংশ কিছুটা উঁচু ও দক্ষিণ অংশ অপেক্ষাকৃত নিচু। নকশা বর্গাকার ধর্মরাজা রথের অনুরূপ। অর্জুন রথ পশ্চিমমুখী এবং দৈর্ঘ্যে ১১.৫ বাই ১৬ ফুট (৩.৫ মি × ৪.৯ মি) ও উচ্চতায় ২০ ফুট (৬.১ মি)। এই রথটি পাশের দ্রৌপদী রথের সঙ্গে একই উপপীঠে অবস্থিত।[7][9]

চিত্রকক্ষ

পাদটীকা

  1. Allen, Margaret Prosser (১৯৯১)। Ornament in Indian Arch। University of Delaware Press। পৃষ্ঠা 139। আইএসবিএন 978-0-87413-399-8। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৩
  2. Moffett, Marian; Fazio, Michael W.; Wodehouse, Lawrence (২০০৩)। World History of Architecture। Laurence King Publishing। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-1-85669-371-4। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৩
  3. "Group of Monuments at Mahabalipuram"। World Heritage। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-০৮
  4. Gunther, Michael D.। "Pancha Rathas, Mamallapuram"art-and-archaeology.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২
  5. Ayyar, P. V. Jagadisa (১৯৮২)। South Indian Shrines: Illustrated। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 157–। আইএসবিএন 978-81-206-0151-2। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  6. Stokstad, Marilyn (২০০৮)। Art history। Pearson Education। পৃষ্ঠা 333আইএসবিএন 9780131577046।
  7. "Mahabalipuram – The Workshop of Pallavas – Part III"2. Arjuna Ratha। Indian History and Architecture, Puratattva.in। ২৩ আগস্ট ২০১০। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  8. "The Rathas, monolithic Mamallapuram"। Online Gallery of the British Library। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  9. "A monumental effort"। Front Line India's National Magazine from the publishers of The Hindu। ৮ নভেম্বর ২০০৩। ১০ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.