অরবিন্দ গুহ

অরবিন্দ গুহ (২০ ডিসেম্বর ১৯২৮ — ৩ জুন ২০১৮) ছিলেন বাংলার ঊনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের বিশিষ্ট কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। ইন্দ্রমিত্র ছদ্মনামে জীবনী, গবেষণামূলক ও হাস্যরসাত্মক রচনাকার হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন। [1] সাহিত্যকর্মের জন্য ইনিই একমাত্র কবি যিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন দু’বার - ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ইন্দ্রমিত্র ছদ্মনামে এবং ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে তার আসল নামে।[2][3]

অরবিন্দ গুহ
জন্ম(১৯২৮-১২-২০)২০ ডিসেম্বর ১৯২৮
বরিশাল ব্রিটিশ ভারত বর্তমানে বাংলাদেশ
মৃত্যু৩ জুন ২০১৮(2018-06-03) (বয়স ৮৯)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
ছদ্মনামইন্দ্রমিত্র
পেশাকবি ও প্রাবন্ধিক
ভাষাবাংলা
বাসস্থানবেহালা কলকাতা
নাগরিকত্বভারতীয়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানব্রজমোহন কলেজ
সময়কাল(১৯৫৪-২০১৪)
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিকরুণাসাগর বিদ্যাসাগর
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারনরসিংহ দাস পুরস্কার (১৯৬২)
রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৭২,২০০৭)
দাম্পত্যসঙ্গীপূরবী গুহ (স্ত্রী)
সন্তানগৌরী দাশগুপ্ত (কন্যা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

কবি অরবিন্দ গুহের জন্ম ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে। বাল্যকালের পাঠ শুরু বরিশাল স্কুলে। ছাত্র ছিলেন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজেও। সেসময় তার শিক্ষক ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি। দেশভাগের পর চলে আসেন কলকাতায় এবং ভর্তি হন আশুতোষ কলেজে। ডিস্টিংশন পেয়ে পাশ করেন বি.এসসি এবং সঙ্গে সঙ্গেই যোগ দেন কেন্দ্রীয় সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের চাকরিতে। তিনি ও তার দিদি জ্যোতির্ময়ী গুহ দুজনে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর হতে বেহালার দক্ষিণ বেহালা রোডে বসবাস করেন।[3] সরকারী চাকরী থেকে অবসর নেন ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে।

সাহিত্যকর্ম

কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্য জগতে আসেন। স্কুল-কলেজে ছাত্রবস্থায় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতা। ১৯৫০-৫১ খ্রিস্টাব্দেই স্কুলজীবনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত বাংলা রোমান্টিক কবিতা- প্রেম যুগে যুগে সংকলনগ্রন্থ পাঠে। সহজ ভাষা আর অনায়াস ছন্দের অনুসরণে রচনা শুরু করেন তিনি। ছাত্রজীবনে কলকাতার শিশু সওগাত নামে ছোটদের এক মাসিক পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয়। এরপর বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায়। ক্রমে সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত পূর্বাশা, আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর দেশ, শতভিষা ও কৃত্তিবাস পত্রিকাগুলিতে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ- দক্ষিণ নায়ক । তথ্যনিষ্ঠ অথচ নির্ভার, সহজ ও স্নিগ্ধ পরিহাস আর সেই সঙ্গে গবেষণাধর্মিতা ছিল রচনার মূল আকর্ষণ। কবিতা ছাড়াও গদ্য রচনাতেও তিনি ছিলেন সাবলীল। স্বনামে কবিতা লিখলেও তিনি কিন্তু প্রবন্ধ, উপন্যাস, জীবনীগ্রন্থ রচনায় ব্যবহার করেছেন ছদ্মনাম- ইন্দ্রমিত্র। তিনি বিশেষ পরিচিতি পান- করুণাসাগর বিদ্যাসাগর নামক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য ও সুরচিত জীবনীগ্রন্থটির জন্য। বাংলার বহু বিশিষ্ট বিদ্বজনের দ্বারা এটি উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত সাজঘর গ্রন্থটিতে বাংলা রঙ্গমঞ্চ গড়ে ওঠার উপভোগ্য ও তথ্যসমৃদ্ধ ইতিহাস সন্নিবেশিত হয়েছে। [1]

তার রচিত শেষ কাব্যগ্রন্থ প্রস্থানসময় উপস্থিত প্রকাশিত হয় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ

  • দক্ষিণ নায়ক (১৯৫৪)
  • প্রথম পুরুষ (১৯৫৬)
  • নিবিড় নীলিমায় অলঙ্কৃত (১৯৬৪)
  • জানালার কাছে (১৯৮৫)
  • সময় অসময় (১৯৯৪)
  • দেখা সাক্ষাৎ (২০০৫)
  • শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০৮)
  • প্রস্থানসময় উপস্থিত (২০১৪)
উপন্যাস -
  • সাজঘর (১৯৬৫)
জীবনীগ্রন্থ -
  • করুণাসাগর বিদ্যাসাগর (১৯৬৯)
  • নিপাতনে সিদ্ধ (সজনীকান্ত দাশকে নিয়ে লেখা)
অন্যান্য রচনা -
  • বাংলার কিংবদন্তি (১৯৯২)

সম্মাননা ও পুরস্কার

কবি অরবিন্দ গুহ তার সাজঘর গ্রন্থটির জন্য ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন ছদ্মনামে লেখা করুণাসাগর বিদ্যাসাগর নামক জীবনীগ্রন্থের জন্য। একমাত্র তিনিই দ্বিতীয়বার রবীন্দ্র পুরস্কার পান ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে তার আসল নামে লেখা - দেখা সাক্ষাৎ কাব্যগ্রন্থের জন্য।

তার ছদ্মনামে (ইন্দ্রমিত্র) রচিত ‘আপনজন’ গল্পটি অবলম্বন করে এপর্যন্ত তিন-তিনটি চলচ্চিত্রে নির্মিত হয়েছে - বাংলা, হিন্দি ও কন্নড় ভাষায়। বাংলায় তপন সিংহ পরিচালিত জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছায়াছবি “আপনজন” মুক্তি পায় ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে, গুলজার-নির্দেশিত “মেরে আপনে” ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে এবং কন্নড় ভাষায় “বেঙ্কি বেরুগলি” ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে।[2]

জীবনাবসান

কবি অরবিন্দ গুহ ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ হতে বার্ধক্যজনিত জনিত স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছিলেন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন রবিবার সকালে হঠাৎই অন্ত্রে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বৎসর। প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী পূরবী গুহ তার স্ত্রী এবং গৌরী গুহ (দাশগুপ্ত) হলেন তার একমাত্র কন্যা। [4]

তথ্যসূত্র

  1. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৬। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9।
  2. "চিরপ্রেমিক কবি কবি অরবিন্দ গুহের প্রয়াণলেখ"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২২
  3. "তিন বছরের রোগযন্ত্রণার অবসান, ইন্দ্রমিত্র প্রয়াত"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২২
  4. "ইন্দ্রমিত্রের প্রয়াণ"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.