অপরাধ

অপরাধ বা কসুর (ইংরেজি: Crime, Misdemeanor, Felony) হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক আইনবিরুদ্ধ কাজ। দেশ বা অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রণীত আইনের পরিপন্থী কার্যকলাপই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধ গুরুতর কিংবা লঘু - উভয় ধরনেরই হতে পারে। অপরাধের ফলে ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড, হাজতবাস বা কারাগারে প্রেরণসহ উভয় দণ্ড কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণদণ্ডও প্রদান করা হয়ে থাকে। যে বা যিনি অপরাধ করেন বা অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন, তিনি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে থানাসহ পুলিশ, গোয়েন্দা রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী আদালতের মহামান্য বিচারক অপরাধীকে প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়ে থাকেন।

বিচারক এবং স্বর্গীয় আত্মা প্রতিশোধের লক্ষ্যে অপরাধীর পশ্চাদ্বাবন হয়ে থাকেন, ১৮০৮ সালে পিয়েরে-পল প্রুড'হন কর্তৃক অঙ্কিত তৈলচিত্রকর্ম।

সাধারণতঃ অসৎ কর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অপরাধের সাথে যুক্ত থাকেন। কিন্তু সাধারণ জনগণও অপরাধের সাথে নিজেকে সংযুক্তি ঘটাতে পারেন। বিপরীতক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, মানব নয় এমন ধরনের প্রাণী অপরাধের সাথে যুক্ত হতে পারে না।[1]

সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি, অন্য কোন ব্যক্তি বা সমাজের সমস্যা সৃষ্টিকল্পে যে সকল কাজ করেন তাই অপরাধ। অপরাধ হিসেবে কোন ব্যক্তিকে খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্ষণ, জালিয়াতি, অর্থপাচার ইত্যাদি রয়েছে যা পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই স্বীকৃত থাকায় দণ্ডনীয়। এছাড়াও, মদ্যপান, কোকেন, হেরোইন, গাজা সেবন, নিষিদ্ধ প্রাণীর মাংস খাওয়াসহ সমাজের বিরুদ্ধ কার্যাবলী সম্পাদন করা অপরাধের আওতাভূক্ত।

উৎপত্তি

অপরাধের ইংরেজি প্রতিশব্দ ক্রাইম যা ল্যাটিন ভাষায় উদ্ভূত সার্নো থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে "আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি দণ্ডাজ্ঞা দিব"।

কিছু ধর্মে পাপ কার্য্যে অংশগ্রহণকে অপরাধরূপে দেখা হয়। আদম এবং ঈভের শয়তানের প্ররোচনায় গন্ধর্বজাতীয় নিষিদ্ধ ফল গ্রহণকে প্রকৃত পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। দল বা রাষ্ট্রীয় অপরাধ হিসেবে যুদ্ধ অথবা সংঘর্ষ হয়ে থাকে। আধুনিক সভ্যতার ঊষালগ্নে আইনের কতকগুলো ধারা প্রণীত হয়েছে।

বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী রিচার্ড কুইনী সমাজ এবং অপরাধের মধ্যে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, 'অপরাধ হচ্ছে সামাজিকতার দৃশ্যমান প্রতিফলন'। এ কথার মাধ্যমে তিনি মূলতঃ ব্যক্তির অপরাধে সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপট এবং সামাজিক আদর্শ, ন্যায়-নিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের উপলদ্ধিবোধ জাগ্রতকরণ - উভয় দিকই বিবেচনা করতে বলেছেন।[2]

প্রকারভেদ

অপরাধ মূলতঃ দু'টি ধারায় বিভক্ত।

  • লঘু অপরাধ, যাতে জরিমানা কিংবা অনধিক এক বছরের জন্যে কারাগারে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
  • গুরুতর অপরাধ সাধারণতঃ এক বছরের ঊর্ধ্বে থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

অনেক দেশই তাদের দেশের জন্যে উপযোগী করে অপরাধের বিষয়বস্তু, আকার-প্রকৃতি, স্তর ক্ষেত্রগুলো মানদণ্ডে নিয়ে আইন প্রণয়ন করে থাকে। এক দেশের আইন, অন্য দেশের জন্যে উপযোগী না-ও হতে পারে। ধর্মীয় এবং বিতর্কিত বিষয়গুলোর প্রেক্ষাপটে দ্রুত আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। মোটর সাইকেলে হেলমেট ব্যবহার না করা কিংবা গাড়িতে চালক কর্তৃক মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে দুর্ঘটনা ঘটায়ও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে যাত্রীদের জানমালের জন্যে হুমকিস্বরূপ।

বই, চলচ্চিত্র, গান, অথবা ওয়েব পৃষ্ঠা তৈরী করার প্রেক্ষাপটেও যদি প্রকৃত রচয়িতা, নির্মাতার অনুমতিবিহীন অবস্থায় হয়, তবে তা কপিরাইট আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও, অবৈধ ও নিষিদ্ধঘোষিত মাদকদ্রব্য উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ, বহন করা কিংবা বিক্রয় করা হয় তবে তা সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

শাস্তি

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে দক্ষ, প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এ বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে অপরাধ বন্ধ করা ও অপরাধীকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সন্দেহের বশবর্তী হয়েও যে-কোন ব্যক্তিকেই গ্রেফতার করার প্রবিধান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে জেরায় এনে প্রয়োজনীয় তথ্যাদির সাহায্যে অপরাধের শিকড় উৎপাটন করা হয়। আদালতের প্রধান হিসেবে মহামান্য বিচারপতি প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেন যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অপরাধী কি-না! যদি ব্যক্তি অপরাধ করে থাকে, তবে তাকে জরিমানা, ক্রোকসহ নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। নতুবা, বেকসুর খালাশ প্রদান করে থাকেন। অপরাধের মাত্রা ব্যাপক ও গুরুতর হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোঁলানো হয়ে থাকে। উন্নত দেশসমূহে প্রাণদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর তথ্য অনুযায়ী যদিও অনেক উন্নত দেশে মৃত্যুদন্ড প্রথা বর্তমান।

তথ্যসূত্র

  1. People v. Frazier, 173 Cal. App. 4th 613 (2009). In this case, the California Court of Appeal explained: "Despite the physical ability to commit vicious and violent acts, dogs do not possess the legal ability to commit crimes."
  2. Quinney, Richard, "Structural Characteristics, Population Areas, and Crime Rates in the United States," The Journal of Criminal Law, Criminology and Police Science, 57(1), p. 45-52

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.