অনুপমা ভট্টাচার্য

অণুপমা ভট্টাচার্য অসমের চলচ্চিত্র ও মঞ্চজগতের একজন প্রসিদ্ধ অভিনেত্রী। তিনি অসমের ভ্রাম্যমাণ থিয়েটারে অভিনয় করা প্রথম মহিলা ছিলেন।[1] তিনি অসমের মীনা কুমারী নামে বিখ্যাত। অসমীয়া চলচ্চিত্র, থিয়েটার ও দূরদর্শনে তিনি অভিনয় করেছেন।

অণুপমা ভট্টাচার্য
জন্ম১৯ আগস্ট,১৯২৮
আমোলাপট্টি,শিবসাগর
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাঅভিনেত্রী

জন্ম ও শৈশব

১৯২৮ সনের ১৯ আগস্ট তারিখে অসমের শিবসাগর জেলার আমোলাপট্টি নামক স্থানে বিখ্যাত বেজবরুয়া পরিবারে অণুপমা ভট্টাচার্যের জন্ম হয়। তার পিতার নাম গোপাল বেজবরুয়া ও মাতার নাম গুনদা বেজরুয়া। বংশসূত্রে লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া তার পিতামহ ও আনন্দ চন্দ্র বরুয়া। পিতার কঠোর অণুশাসন ও ব্রাহ্মণ কঠোর রীতিনীতিতে তিনি শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ঘড়ের কাজকর্ম ও নাচ-গান এবং অভিনয়ে তিনি পারদর্শী ছিলেন। তিনি সিনেমা দেখতে খুব পছ্ন্দ করিতেন। তিনি ঘড় থেকে গোপনে বের হয়ে অনেকবার ফিল্ম হলে সিনেমা দেখেছেন। অবশ্যে তার পিতা একদিন বুঝতে পেরে তার মাকে দরজা বন্ধ রাখার জন্য আদেশ করেছিলেন কিন্তু মাতৃ মমতায় দরজা খুলে দেন ও সেইবারের মত অণুপমা ভট্টাচার্য রক্ষা পায় ও গৃহে প্রবেশ করেন। ফুলেশ্বরী গার্ল্স হাই স্কুলে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।

বিবাহ ও জীবন

মাত্র নয় বৎসর বয়সে উদয় ভট্টচার্যের সহিত অণুপমা ভট্টাচার্যের বিবাহ হয়েছিল। সেই বয়সে তিনি বিবাহের অর্থ বুজিতেন না। কিন্তু বিবাহের কয়েক মাস পর দূর্ভাগ্যবশত তার স্বামীর মৃত্যু হয়।স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি বলেছিলেন: "কেইমাহমান পিছত এদিন মায়ে হুরাওরায়ে কান্দিব ধরিলে। ওচরর তিরোতাবোরে আহি মোর গহনা-গাঁথরি খুলি পেলালে,কপালর ফোঁট মচি দিলে।কোনোবাই ক’লে মই হেনো বিধবা হ’লো। মোর সৈতে বিয়া হোয়ামানুহজন জ্বর হৈ ঢুকাই থাকিল। মই খেইবোর কি জানো?-এই কাপোর-গহণাবোরখুলি দিয়াতহে মোর গাটো পাতল লাগিছে,খেলিবলৈ সুবিধা হৈছে।" অনুবাদ: বিবাহের কিছুদিন পর মা কান্নাকাটি আরম্ভ করলেন। প্রতিবেশী মহিলারা আমার অলংকার খুলে দিলেন ও কপালের সিন্দুর মুছে দিলেন। কেউ একজন বলিলেন যে আমি বিবধা হয়েছি। আমার সহিত বিবাহ করা ব্যক্তি জ্বর ব্যাধিতে মারা গিয়েছেন। আমি এইসব কি জানি? এই কাপোড়-অলংকার খুলে দেওয়ায় আমার শরীর হাল্কা অনুভব করছি, খেলতে সুবিধা হয়েছে। সিরাজ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময় সিরাজ চলচ্চিত্রের সঙ্গীতকার শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্যের সহিত পুনরায় বিবাহ করেন। তাঁদের রুনুমি নামক একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। কিন্তু ১৯৫৩ সনে শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয় ও তিনি ২২ বৎসর বয়সে দ্বিতীয় বারে বিধবা হয়। অসহায় অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করে কন্যার লালন পালন করার জন্য বাধ্য হন। কন্যাটি জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুপে প্রতিষ্ঠিত হন ও দুইটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন। কন্যার মৃত্যুর পর অণুপমা ভট্টাচার্য তার কয়েকটি জনপ্রিয় গান অ চিকুন বিহুটি নামে মুক্তি দেন।

অভিনয় জীবন

অণুপমা ভট্টাচার্য অসমীয়া চলচ্চিত্র সিরাজে অভিনয় করার প্রস্তাব পান। সামাজিক বাধা নিষেধ অমান্য করে তিনি অভিনয় করার জন্য প্রস্তুত হন। ফলে তাঁকে সমাজ থেকে বঞ্চিত করা হয়। সিরাজ চলচ্চিত্রে তিনি ফতেমার চরিত্রে অভিনয় করেন। সিরাজে অভিনয় চলাকালীন অবস্থায় তিনি শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্যের সহিত পরিচিত হন ও বিবাহের সম্পর্কে আবদ্ধ হন। তিনি নিমিলা অঙ্ক,নতুন পৃথিবী,মানব আরু দানব, সিরাজ, সরাপাত, রাংঢালী, মন ও মরম, বিপ্লবী ইত্যাদিকে ধরে প্রায় ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। নটরাজ থিয়েটারে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়ে তিনি সিরাজউদ্দোল্লা, ভোগরজা, কিয়, কাশ্মীর কুমারী ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করেন।

পুরস্কার ও সম্মান

  • কলাগুরু বিষ্ণু রাভা পুরস্কার
  • আইদেউ সন্দিকৈ পুরস্কার
  • জীবনজোরা সাধনার বাবে প্রথমেশ চন্দ্র বরুয়া পুরস্কার
  • ভ্রাম্যমানর ওয়াইজমেন পুরস্কার

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.