অতিপরিবাহিতা

অতিপরিবাহী বা সুপার-কন্ডাক্টার হল কিছু পদার্থের উপর অতিশৈত্যের প্রভাবে উদ্ভূত এমন পরিবাহী ধর্ম যাতে বিদ্যুত পরিবহনের রোধ শূন্য হয়ে যায়। অর্থাৎ একটি বর্তনী অতিপরিবাহী হলে তার মধ্যে একবার বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে দিলে রোধজনিত তাপ ক্ষয় না থাকার ফলে, বিদ্যুৎটি কোন নতুন উৎস ছাড়াই বইতেই থাকবে। ১৯১১ সালে বিজ্ঞানী কামারলিং ওনেস অতিশৈত্যে পারদের বৈদ্যুতিক রোধ মাপতে গিয়ে ৪.২ কেলভিন তাপমাত্রায় পারদে এই বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করেন। এই বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হয় বার্ডিন-কুপার-শ্রিফার তত্ত্ব [Bardeen-Cooper-Schrieffer (BCS) theory] দ্বারা।

A magnet levitating above a high-temperature superconductor, cooled with liquid nitrogen. Persistent electric current flows on the surface of the superconductor, acting to exclude the magnetic field of the magnet (Faraday's law of induction). This current effectively forms an electromagnet that repels the magnet.
A high-temperature superconductor levitating above a magnet

কিন্তু অধিকাংশ অতিপরিবাহী কেবল খুব নিম্ন তাপমাত্রায় অতিপরিবাহী থাকে। অতিপরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য হল এর ভিতর থেকে চৌম্বক ক্ষেত্রকে বার করে দেয়। তাই অতিপরিবাহীর বিকর্ষণে চুম্বক ভাসতে পারে। এই ভাসান অর্থাৎ লেভিটেশন ব্যবহার করে খুব দ্রুতগামী ট্রেন চালানো হয় যাতে লাইনের সঙ্গে ঘর্ষণ না হয়।

কিছু পদার্থ রয়েছে যেগুলো সাধারণ অতিপরিবাহীগুলি যে তাপমাত্রায় অতিপরিবাহিতা দেখায় তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় এই ধর্ম প্রদর্শন করে। এদের উচ্চ তাপমাত্রা অতিপরিবাহী বলা হয়।২০২০ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, Carbonaceous sulfur hydride হল 15 °সে বা 288K এবং 267 GPa বায়ুচাপে প্রাপ্ত অতিপরিবাহী।


এম আর আই (ম্যাগ্নেটিক রেসোনান্স ইমেজিং) মেশিনের চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরির জন্য এত বেশি বিদ্যুত লাগে যে তার রোধ কম করতে অতি পরিবাহী বর্তনী ব্যবহার করতে হয়।

অতিপরিবাহীর উপাদানগত বৈশিষ্ট্য

একটি সাধারণ কন্ডাক্টরের বেলায়, তরিৎ প্রবাহকে একটি বিশালাকার আয়ন ল্যাটিসের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইলেকট্রন প্রবাহী হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে। ইলেকট্রনগুলো অনবরত ল্যাটিসের আয়নের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, আর এই সংঘর্ষের সময় এই বিদ্যুৎ অর্থাৎ ইলেক্ট্রনের প্রবাহ যে শক্তি বহন করছিল তার কিছু অংশ সেই ল্যাটিস দ্বারা শোষিত হয় আর তাপে পরিণত হয়। এই তাপ হচ্ছে ল্যাটিস আয়নগুলোর মধ্যকার কম্পমান গতিশক্তি। এর ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ যে শক্তি বহন করছিল তা ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে। এই ঘটনাটাই হল বৈদ্যুতিক রোধ এবং জুল হিটিং

অতিপরিবাহী বা সুপারকন্ডাক্টরের বেলায় পরিস্থিতিটি ভিন্ন। একটি সাধারণ সুপারকন্ডাক্টরে ইলেকট্রন প্রবাহী আলাদা আলাদা ইলেকট্রন নিয়ে গঠিত হয় না, বরং এটি গঠিত হয় দুটো ইলেক্ট্রনের জোড়া বা পেয়ার নিয়ে, অর্থাৎ অনেকগুলো ইলেকট্রন জোড়া নিয়েই ইলেকট্রন প্রবাহ তৈরি হয়। এই জোড়াগুলোকে বলা হয় কুপার পেয়ার। এই জোড়াটি যে আকর্ষণ বল নিয়ে গঠিত হয় সেটি আসে ইলেকট্রনগুলোর মধ্যকার ফোননের আদান প্রদানের ফলে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অনুসারে বলা যায় এই কুপার পেয়ারের শক্তি বর্ণালী বা এনার্জি স্পেকট্রামে শক্তি পার্থক্য বা এনার্জি গ্যাপ থাকে। এর অর্থ হচ্ছে সেই প্রবাহকে উত্তেজিত করতে একটি সর্বনিম্ন পরিমাণ শক্তি ΔE সরবরাহ করতে হবে। তাই যদি এই ΔE ল্যাটিসের তাপশক্তি kT এর চেয়ে বেশি হয় (এখানে, k হচ্ছে বোলটজম্যান ধ্রুবক, এবং T হচ্ছে এর তাপমাত্রা) তাহলে ল্যাটিসের দ্বারা ইলেকট্রনের প্রবাহ বিক্ষিপ্ত হবে না। এজন্য কুপার পেয়ার প্রবাহ হচ্ছে একটি সুপারফ্লুইড বা অতিপ্রবাহী, অর্থাৎ কোন রকম শক্তির খরচ ছাড়াই এটি প্রবাহিত হতে পারে।

তথ্যসূত্র

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.