অজিতকৃষ্ণ বসু
অজিত কৃষ্ণ বসু (ইংরেজি: Ajitkrishna Basu; জন্ম: ৩ জুলাই, ১৯১২ - মৃত্যু: ৭ মে, ১৯৯৩), অ কৃ ব নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত। তিনি মূলতঃ ব্যঙ্গ ও কৌতুক রস সাহিত্যিক হলেও জাদুবিদ্যা ও সঙ্গীতে তার বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। [1] বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ কুঞ্জলাল নাগ ছিলেন তার মাতামহ।
অজিতকৃষ্ণ বসু | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৭ মে ১৯৯৩ ৮০) | (বয়স
সমাধি | কলকাতা , |
অন্যান্য নাম | অজিত কৃষ্ণ বসু |
পেশা | লেখক ও অধ্যাপক |
পিতা-মাতা | শৈলেন্দ্রমোহন বসু (পিতা), |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
অজিত কৃষ্ণ বসুর জন্ম বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্তমানে বাংলাদেশের ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। পিতার নাম শৈলেন্দ্রমোহন বসু। অজিতকৃষ্ণের উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা ঢাকা শহরে। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ.; কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ বি.এ. এবং প্রাইভেটে এম.এ. ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে। বি. এ . পড়ার সময়ই তিনি "আর্ট অভ পাবলিক স্পিকিং" রচনা লিখে স্বর্ণ পদক লাভ করেন।
কর্মজীবন
প্রথম জীবনে অজিতকৃষ্ণ বিজ্ঞাপনকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত বৃটিশ কোম্পানি ডি জে কিমারে বিজ্ঞাপন বিজ্ঞানে শিক্ষানবিশি করেন। পরে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বেঙ্গল ওয়াটার প্রুফ (ডাকব্যাক) কোম্পানির প্রচার কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেন এবং এই কাজে তিনি দেশে বিদেশে প্রভূত প্রশংসা পেয়েছিলেন। এর পর প্রায় আট বৎসর কোন বিশেষ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত না থেকে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে গোবরডাঙা কলেজে ইংরাজীর অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। দু-বছর পর তিনি কলকাতার আশুতোষ কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যকর্ম
অধ্যাপনাকালে আর্থিক অসচ্ছলতা ঘোচানোর লক্ষ্যে অনুবাদে আত্মনিয়োগ করেন। অবশ্য তার সাহিত্য জীবন শুরু হয়েছিল অনুবাদের মাধ্যমে। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৪ বৎসর বয়সে টমার মুরের "দি লাইট অভ আদার ডে" কবিতা অনুবাদ করেন; মুদ্রিত হয় 'খোকাখুকি' পত্রিকায় । তিনি সাহিত্য সঙ্গীত ও জাদু - এই তিন ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন।
সাহিত্যক্ষেত্রে
ব্যঙ্গ ও কৌতুকরসের কবিতা ও কৌতুকপ্রধান গল্প-উপন্যাস রচয়িতা হিসাবে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। বিচিত্র ছন্দের ব্যবহার এবং তার সাথে কৌতুকরস ও দার্শনিক তত্ত্বের মিশ্রণে রচিত "পাগলা গারদের কবিতা" তার অক্ষয় কীর্তি। Lunar ও Lyrics এর যুক্তরূপ Linarics নামে পরিচিত আঙ্গিকে লেখা 'Shadow in the dark' ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার উদ্ভট ও খাপছাড়া এমন ৪৫ টি ইংরাজী কবিতার অভিনব সংকলন। বোম্বে থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত কার্টুন পত্রিকা 'শঙ্করস্ উইকলি' তে ইংরেজী কৌতুক কবিতা লিখেছেন।[2]
সঙ্গীতেরক্ষেত্রে
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। আট বৎসর বয়সে কণ্ঠসঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন। অন্ধগায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে র কাছে পরে ঢাকার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী গুলমহম্মদ খাঁ ও সবশেষে সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী র কাছে। 'ওস্তাদ কাহিনী' গ্রন্থে তিনি স্বীয় সঙ্গীত জীবনের কথা ও বহু বিশিষ্ট ওস্তাদের চমকপ্রদ কাহিনী বিবৃত করেছেন। তার প্রিয় ছাত্র অনুপ ঘোষালের "স্মৃতির স্মরণিকা" নামের ক্যাসেটের প্রতিটি গান তার লেখা।
জাদুবিদ্যায়
স্কুল জীবন থেকেই অ কৃ ব বন্ধু জাদুসম্রাট পি সি সরকারের (সিনিয়ার) সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে জাদুচর্চ্চা করেছিলেন। কিন্তু মঞ্চে কখনো অবতীর্ণ হননি। তবে জাদুকরের বিচিত্র জীবন ও কৌতুহলোদ্দীপক ঘটনা নিয়ে লেখা তার "যাদুকাহিনী" গ্রন্থটি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "নরসিংহদাস পুরস্কার" পায়।
প্রকাশিত গ্রন্থসমৃহ
- অনুবাদ গ্রন্থ -
- হাকলবেরি ফিন (মার্ক টোয়েন)
- টম সইয়ার
- স্যাটান ইন দি সুবার্ব
- ওয়াশিংটন স্কোয়ার
- দি স্কারলেট লেটার
- অরিগন ট্রি
- কবিতা সংকলন -
- পাগলা গারদের কবিতা (১৯৫৩)
- এক নদী বহু তরঙ্গ
- নে-তে তেরি তোম
- ছোটদের বই -
- খামখেয়ালী ছড়া
- আজব ছড়া
- ছড়ার মিছিল
- ম্যাজিকের বই -
- যাদুকাহিনী
- ম্যাজিকের গল্প
- তাসের বিচিত্র ম্যাজিক
- উপন্যাস-
- প্রজ্ঞাপারমিতা(১৯৬৬)
- সানাই
- শকুন্তলা স্যানেটোরিয়াম
- চন্দনপুরের কাহিনী (১৯৬৬)
- শেষ বসন্ত (১৯৬৩)
- বিধাতা (১৯৬৩)
- ম্যারিনা ক্যান্টিন (১৯৬৭)
- নন্দিনী সোম (১৯৬৬)
- গল্প সংকলন-
- জীবন সাহার
- সৈকত সুন্দরী ও বহু পুরুষ (১৯৬৭)
মৃত্যু
মৃত্যুর কিছুদিন আগে পর্যন্ত অ কৃ ব 'র কলম সৃষ্টিকর্মে নিয়োজিত ছিল। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই মে তিনি ৮১ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
- অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- শিশিরকুমার দাশ সম্পাদিত সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৩